অঢেল সম্পদে ভরপুর পাসপোর্টের আইয়ুব আলী
স্টাফ রিপোর্টারঃ
পাসপোর্ট ও ভিসা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মনসুরাবাদ আঞ্চলিক অফিসের সহকারী পরিচালক আইয়ুব আলী চাকুরী জীবনে অঢেল সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এবিষয়ে দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা এখনই জরুরি। তিনি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পাসপোর্ট দেয়ার দায়িত্বে থেকে সিন্ডিকেটভুক্ত হয়রানীর দ্বারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন। একটি পাসপোর্ট করতে কমপক্ষে ১৫ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করতেন এই চক্রের সদস্যরা। ঘুষের টাকা না পেলে মাসের পর মাস চলে যায়, পাসপোর্ট হাতে পেতেন না গ্রাহকরা।
“সরকারি চাকরিতে থেকে কোটি টাকার মালিক হওয়া কিভাবে সম্ভব? পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আয়ুব আলী যেন সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। সচেতন জনমনে প্রশ্ন এই সম্পদের উৎস কী?”
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধাণীর মোহাম্মদপুরে একতা হাউজিংয়ে স্ত্রীর নামে ১০তলা ভবন। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। স্ত্রী নাজনীন আখতার নামে নির্মিত এই ১০তলা ভবনের প্রতিটি ইট যেন প্রশ্ন তুলে একজন সহকারী পরিচালক কীভাবে গড়ে তুললেন এত বিশাল সাম্রাজ্য?। পার্শ্ববতী চন্দ্রিমা মডেল টাউনে ৪ কাঠা জমিতে ৪তলা ভবন। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১২/১৩ কোটি টাকা। “চন্দ্রিমা মডেল টাউনের আরেকটি প্রাসাদ রয়েছে। যেখানে জমি ও নির্মাণ মিলিয়ে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। আইয়ুব আলীর দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো দেখে বোঝার উপায় নেই, তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা।”
মোহাম্মদপুর জাপান গার্ডেন সিটিতে স্ত্রীর নামে ৫ কোটি টাকা মূল্যের বিলাশবহুল ফ্ল্যাট। “জাপান গার্ডেন সিটির এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটটি কি সরকারি বেতনের টাকায় কেনা সম্ভব? নাকি এসব লুকোনো দুর্নীতির প্রমাণ?। আইয়ুব আলীর চলাফেরা করেন বিলাসবহুল নোয়া গাড়িতে, যার দাম ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। আর ড্রাইভারের বেতন সহ গাড়ির পেছনে মাসে খরচ করেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। অফিসের ফাইলপত্র টানাটানি করে যদি এমন গাড়ি কেনা যায়, তবে সাধারণ মানুষের পরিশ্রমের দাম কোথায়?। এছাড়া ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা সিন্ডিকেটের কাছে রিক্সার মূল্যবাবদ মাসিক সুদে বিনিয়োগ করেছেন ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। ঘুষের টাকায় গড়ে উঠা এই আন্ডারগ্রাউন্ড সাম্রাজ্যটি ব্যাটারি চালিত অটো রিকশার সিন্ডিকেট দ্বারা পরিচালিত করেন। আবাসিক বিদ্যুৎ লাইন দিয়ে এইসব অটো চার্জ দেওয়ার কারণে বিদ্যুৎ অফিস থেকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা গুনতেও হয়েছে আইয়ুব আলীকে।
আইয়ুব আলীর সম্পদের প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ঘুষ না দিলে পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। এইসব ঘুষের টাকায় বাড়ি-গাড়ি করছে সরকারী কর্মকর্তারা! প্রতিটি ফাইলে টাকা না দিলে কিছুই হয় না। দালাল চক্রের মাধ্যমে এই ঘুষের টাকা আদায় করা হয়। যাতে কোন প্রমান না থাকে। সুত্র জানায়, পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা পাসপোর্ট প্রতি ঘুষের রেট নির্ধারন করে দালাল সিন্ডিকেট পালন করেন। দালালরা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সাথে কমপক্ষে ১৫ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা চুক্তির মাধ্যমে আইয়ুব আলীর মতো ঘুষখোর কর্মকর্তাদের নিকট থেকে পাসপোর্ট বানিয়ে দেন। জনগণের কষ্টার্জিত টাকা এভাবে দুর্নীতির ফাঁদে পড়লে প্রতিটা সেবাই হয়ে উঠে দুর্বিসহ।
স্থাণীয় জনতার দাবী, এই মুহূর্তে দুদক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থা যেন আইযুব আলীর এসব সম্পদের হিসেব নেয়। দুর্নীতি রোধে দুদকের শক্ত অবস্থানই পারে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে। আয়ুব আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে একটা দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা যায়।