মোঃ আহসান উল্লাহ হাসানঃ
সপ্তম গ্রেডে কর্মরত আবহাওয়াবিদ মো: মমিনুল ইসলামকে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ৩য় গ্রেডে নিয়োগ দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক পদে দায়িত্ব দেয়ায় দপ্তরের অপরাপর কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের শতশত কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার জন্য প্রকল্প পরিচালক আহম্মেদ আরিফ রশীদ, আবহাওয়াবিদ শামীম হাসান, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি আবহাওয়াবিদ রুবাঈয়াত কবির, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার মমিনুর রহমান, আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান ও সকল দরপত্র আহ্ববান কর্তৃপক্ষ যান্ত্রিক প্রকৌশলী আবু সাজ্জাদ চৌধুরী গংরা একটি সিন্ডিকেট গড়ে মমিনুল ইসলামকে এই পদে বসাতে নিরবতা পালন করেছে। কারন এই দপ্তরের বাইরের কোন লোক এই পদে চলে আসলে দুর্নীতির থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার আশংঙ্কা ছিলো। তাই অবৈধ প্রক্রিয়া হওয়া সত্ত্বেও এদের কেউ বিরোধীতা বা ভেটো প্রদান করেনি।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, চলতি দায়িত্ব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান নীতিমালা-২০২৩ এর ৫(গ) অনুসারে চলতি দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে পদোন্নতির জন্য প্রণীত জেষ্ঠ্যতা সংক্রান্ত গ্রেডেশনের তালিকা যথাযথভাবে অনুসরন করিতে হইবে এবং এইক্ষেত্রে চাকরী সন্তোষজনক থাকিলে জেষ্ঠ্য কর্মকর্তাকে বাদ দিয়া কনিষ্ঠ কর্মকর্তাকে চলতি দায়িত্ব দেয়া যাইবে না। ধারা-৮ এর ১এ বর্নিত সমপদধারীদের মধ্য হইতে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা সম্ভব না হইলে কেবল শূণ্য পদের ফিডারভুক্ত অব্যবহিত নিম্নপদধারীদের মধ্য হইতে জেষ্ঠ্যতা, কর্মদক্ষতা ও সন্তোষজনক চাকরির ভিত্তিতে পদোন্নতির যোগ্যতা বিবেচনা করিয়া চলতি দায়িত্ব প্রদান করা যাইবে।
মমিনুল ইসলামের ক্ষেত্রে এই বিধানটি সম্পূর্ন লঙ্গণ করা হয়েছে। কারন তিনি সপ্তম গ্রেডের কর্মকর্তা হয়ে একলাফে ৩য়-গ্রেডে নিয়োগ পেয়েছেন, তিনি ফিডারভুক্ত নয়, ফিডারভুক্ত হলে তিনি ৪র্থ গ্রেডে থাকতেন। আর ৪র্থ গ্রেড থেকে ৩য় গ্রেডে এই বিধানটি প্রযোজ্য ছিলো। সংশ্লিষ্ট সুত্র আরো জানায়, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিন্ডিকেটভুক্ত তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিডিটি কপরপোরেশন, মাজ্জাক ইন্টার ট্রেড ও স্মার্ট টেকনোলজি সম্মিলিতভাবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে মমিনুল ইসলামকে পরিচালকের পদে বসিয়েছেন। আর পরিচালকের পদে বসেই মমিনুল ইসলাম বিডিটি কপরপোরেশনকে ২কোটি টাকার একটি টেন্ডার গিফ্ট দিয়েছেন। তবে এই গিফট দেয়ার নীল-নকশা জনকথা পত্রিকা আগাম সংবাদে প্রকাশ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ে কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছিলো। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সাথে সিন্ডিকেট করে এই তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানই ঘুরেফিরে বিগত খুণী হাসিনার আমলে শতশত কোটি টাকার টেন্ডারের কাজ বাগিয়ে নিয়ে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। মমিনুল ইসলাম তার পূর্বসূরি দুর্ণীতির দায়ে বরখাস্ত সাবেক পরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদ, গণ-আন্দোলনে পদত্যাগকৃত পরিচালক আজিজুর রহমানের পথ অনুসরন করে এদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক আহম্মেদ আরিফ রশীদ, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি আবহাওয়াবিদ রুবাঈয়াত কবির, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার মমিনুর রহমান, আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান ও সকল দরপত্র আহ্ববান কর্তৃপক্ষ যান্ত্রিক প্রকৌশলী আবু সাজ্জাদ চৌধুরী গংরা প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ে কয়েজন কর্মকর্তার সাথে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে আবহাওয়া অফিসের সকল দুর্ণীতি ধামাচাপা দিয়ে আসছেন। যেকারনে মমিনুল ইসলামের এই নিয়োগ নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। কারন ৩য় গ্রেডের অর্থাৎ যুগ্ন-সচিব মর্যাদা সম্পন্ন হাজার হাজার কর্মকর্তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব পালন করে আসছে। তাদের মধ্য থেকে যে কাউকে এই পদে নিয়োগ দেয়া যেতো। মমিনুল ইসলামকেই কেন নিয়োগ দিতে হলো।
সংশ্লিষ্ট সুত্র আরো জানায়, এই দপ্তরের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও দুদকের মামলায় জড়িত সাবেক পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের মন্ত্রী টাকলা মুরাদের নিকটতম আত্মীয় সাবেক পরিচালক মো: আজিজুর রহমানের উত্তরসূরি মমিনুল ইসলাম। লুটপাটের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য মমিনুল ইসলামকে অবৈধ প্রক্রিয়ায় পরিচালক বানানোর জন্য নিয়োগ কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের টেন্ডার সিন্ডিকেট। পরিচালক মমিনুলের কারসাজিতে এখনও চলছে এই সিন্ডকেটের অবিরাম টেন্ডার বানিজ্য। টেন্ডার সিন্ডিকেটের অন্যতম দুই সদস্য সাবেক পিডি আহমেদ আরিফ রশিদ ও তার প্রকল্পের সাবেক ২ ডি পি ডি মো: রুবাঈয়াত কবির এবং মো: রাশেদুজ্জামান। এরা মমিনুল ইসলামকে অবৈধ প্রক্রিয়া পরিচালকের চলতি দায়িত্বে বসাতে সমস্ত আয়োজন করে দেন। যাতে তারা নির্বিঘ্নে টেন্ডার গুলো বিডিটি কপরপোরেশন, মাজ্জাক ইন্টার ট্রেড ও স্মার্ট টেকনোলজিকে পাইয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করতে পারেন। এই সিন্ডিকেটের সাথে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডি-৪ অধিশাখার কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলেও আবহাওয়া অফিসের একাধিক কর্মকর্তা প্রচার করে থাকেন। এসব কর্মকর্তার দম্ভোক্তি গুলোর সাথে বাস্তবতারও ব্যাপক মিল রয়েছে।
দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট প্রমানপত্রের কপিসহ পরিচালক মমিনুল ইসলাম ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হলেও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এমনকি ঐ অভিযোগ কপিই খুজে পাচ্ছেনা মন্ত্রণালয়ের ডি-৪ এর অধিশাখায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান। এরাই রক্ষক ও ভক্ষক হওয়ার কারনে বছরের পর বছর ধরে এসব দুর্নীতিবাজদের বিচার হচ্ছে না।
দুর্ণীীতর টাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক ও বর্তমানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ এবং দেশের বাইরে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। যেকোনো সময় এরা দেশ ছেড়ে পালাবে। আহমেদ আরিফ রশিদ তার প্রকল্প বুঝিয়ে না দিয়েই কানাডায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পরিচালক মমিনুল ইসলাম প্রতিদান স্বরূপ ব্যাপক কারসাজি করে সম্প্রতি হাইড্রোজেন গ্যাস জেনারেটর ক্রয়ের টেন্ডার দূর্নীতির মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদার বিডিটি কর্পোরেশনেকে দিবেন বলে টেন্ডার প্রদান কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগেই তথ্যমতে জনকথার প্রকাশিত সংবাদে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু টেন্ডার প্রদান কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে দেখা গেছে, বিডিটি কর্পোরেশনকেই পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক টেন্ডার পাইয়ে দেয়া হয়েছে।
এব্যাপারে মমিনুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রনায়ল আমাকে এই পদে দায়িত্ব দিয়েছে, এটা মন্ত্রনালয়ের ব্যাপার।