ফারহান: ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় যেন ঘুষ ও দুর্নীতির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। জমির নামজারি, খারিজ, জমাভাগসহ যেকোনো ভূমি-সেবা নিতে গিয়ে চরম হয়রানি ও ঘুষের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, এসব কার্যক্রম পরিচালনায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন এসিল্যান্ড সাদিয়া আকতারের ছত্রছায়ায় থাকা কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ‘কসাইখ্যাত’ পেশকার সাহাব উদ্দিন শিহাব, নাজির সোহানসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা-কমচারী মিলে এ ঘুষ বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ না দিলে ফাইল আটকে দেওয়া হয়, হয়রানি করা হয়, এমনকি মিথ্যা অজুহাতে নামজারি বা খারিজ ‘না-মঞ্জুর’ করে দেওয়া হয়। আবার মোটা অঙ্কের টাকা দিলে জাল দলিলেও হয় খাজনা-খারিজ, অথবা জবরদখল উল্লেখিত পর্চায় নামজারি কিংবা দলিলের দাগ ওভার রাইটিং বা পরিবর্তন করে নামজারি করে দেওয়ার মতো সব কাজ
অন্যদিকে দালাল সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য হয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠেছেন এই অফিসের নাইটগার্ড মানিক। জানা গেছে, অল্পদিনেই সাভার এলাকায় নিজস্ব জায়গা কিনে গড়ে তুলেছেন ভবন। মানিক নাইটগার্ড হলেও পরিচয় দেন অফিস সহকারী হিসেবে। মূলত তিনি দালাল সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য।
সম্প্রতি একটি কল রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। যেখানে ঘুষের হারও নির্ধারিত থাকতে শোনা গেছে—নরমাল খারিজ ৩,০০০ টাকা, এলএ কেস ৭-৮ হাজার, বিআরএস খাস ১৪-১৫ হাজার, এবং এসএ পাট খাস ১৭-১৮ হাজার টাকা। এ নিয়ম পূর্বতন এসিল্যান্ডের সময়ে নির্ধারিত হয়েছে, বর্তমান এসিল্যান্ড এখান থেকে এক টাকাও কমাতে পারবে না। এই টাকা সর্বশেষ এসিল্যান্ড থেকে শুরু করে উক্ত অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার মধ্যে বন্টন হয় বলে দাবি করা হয়।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, অবিলম্বে এই ঘুষ বাণিজ্য বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত সরেজমিনে তদন্ত করে এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। একই সাথে, ভূমি সেবা প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করা প্রয়োজন, যাতে সাধারণ মানুষ কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়াই তাদের ন্যায্য সেবা পেতে পারে।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আশুলিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া আকতার মুঠোফোনে বলেন, খাজনা-খারিজের কোনো রেটের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আর আমার এখানে কোনো রেটও নেওয়া হচ্ছে না। আমার কাছে যতগুলো হাত কপি আসে আমি কোন চিহ্ন দেখলে তা না মঞ্জুর করে দেই। আপনি প্রমাণগুলো আমার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান অথবা আপনি অফিসে আসেন।।