কর কর্মকর্তা তোহিদুলের সম্পদের পাহাড়

কর কর্মকর্তা তোহিদুলের সম্পদের পাহাড়

কর কর্মকর্তা তোহিদুলের সম্পদের পাহাড়

স্টাফ রিপোর্টার:

কর কর্মকর্তা তোহিদুল ইসলাম ইকবালের রাজধানীর ইস্কাটনে ৫ কোটি টাকার ফ্ল্যাট, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলাধীন পলিপলাশ গ্রামে নামে-বেনামে শত বিঘা জমি কিনে গড়ে তুলেছেন মৎস্য ও গবাদিপশুর খামার এবং ড্রাগন বাগান।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পলাতক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মতো তিনিও নিজ গ্রামে একটি রিসোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন। এজন্য চায়না থেকে ইঞ্জিনিয়ার আনার উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং বিস্তীর্ণ এলাকা বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

বর্তমানে কর আপিল অঞ্চল, খুলনায় কর কমিশনার হিসেবে কর্মরত তোহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বগুড়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েে। তার প্রতিবেশী আবদুর রহমান এ অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে তার ছোট ভাই আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে কবরস্থান দখল এবং ২০টি কবর উচ্ছেদের অভিযোগ থানায় দায়ের হয়েছে।

অভিযোগের মূল বিষয়সমূহ রিসোর্ট নির্মাণ ও খামারের জন্য শত বিঘা জমি ক্রয় করে সরকারি সড়ক ও কবরস্থান দখল করেন। চাকরি জীবনে সর্বমোট বেতন প্রায় ২ কোটি টাকা, অথচ সম্পদ পরিমান ২০ কোটিরও বেশি। সম্পদ ও জমির খতিয়ান দুদকের অভিযোগে বলা হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তোহিদুল ইসলামের বিত্ত-বৈভব বাড়তে থাকে। ঢাকা ও বগুড়ায় একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট

অস্ট্রেলিয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে বাড়ি, শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম ও শেরপুরে সরকারি জমি দখল করে পুকুর খনন ও জমি ক্রয় পলিপলাশ গ্রামে তার নামে ১৮টি হোল্ডিংয়ে মোট ১৬ দশমিক ৭০ একর জমি। তার ভাই আমিনুর রহমানের নামে ২১টি হোল্ডিংয়ে মোট ১৩ দশমিক ৭২ একর জমি। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, কবরস্থান দখল করে সেখানে থেকে ২০টির অধিক কবর উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং সরকারি সড়ক দখল করে স্থানীয়দের চলাচল ব্যাহত করা হয়েছে।

স্থানীয়দের বক্তব্য, গ্রামের কয়েকজন জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই তিনি ব্যাপক হারে জমি কিনতে শুরু করেন। অনেক সময় নগদ টাকার বান্ডিল দিয়ে জমি কেনা হয়। শ্রমিকদের বক্তব্য অনুযায়ী, এক রাতে ট্রাকভর্তি বস্তা আনা হয়েছিল, যাতে টাকার বান্ডিল ছিল বলে সন্দেহ হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্যরা জানান, জমিগুলো তিনি ধানের জমির প্রকৃতি দেখিয়ে প্রতি শতাংশ ৫০ হাজার টাকায় কিনেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের কর কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, তিনি খামারের জন্য কোনো জমির ট্যাক্স দেন না, শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতি বছর ২০০ টাকা দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করেন।

বগুড়ার শাজাহানপুর থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, কবরস্থান দখলের অভিযোগে তদন্ত চলছে। সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তোহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন “দুদক যদি তদন্ত করে প্রমাণ পায় তাহলে ব্যবস্থা নেবে, তাতে কোনো সমস্যা নেই।”

দুদক বগুড়া জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের অনুমতির জন্য তা প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে তদন্ত শুরু হবে।

চাকরি জীবনে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা বেতন পাওয়া কর কর্মকর্তা তোহিদুল ইসলাম ইকবালের বিরুদ্ধে ঢাকা ও তার নিজ গ্রামে ২০ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ অর্জন, কবরস্থান দখল, সরকারি সড়ক দখল এবং কর ফাঁকি অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে।