কেরানীগঞ্জে ইউপি সচিব ইফতেখারুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টারঃ
ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ সচিব ইফতেখারুল বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ৫আগষ্টের পরে ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক পালিয়ে যাওয়ার পরে ইউনিয়ন পরিষদকে পৈত্তিক সম্পদে পরিনত করেছেন। নাগরিক সনদ, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স,ওয়ারিশ সনদ,চারিত্রিক সনদ, ভূমিহীন সনদ, পারবারিক সনদ, অবিবাহিত সনদ, পুনঃ বিবাহ না হওয়া সনদ, বার্ষিক আয়ের সনদ, একই নামের প্রত্যয়নপত্র, অনুমতি পত্র, প্রকৃত বাকঁ ও শ্রবন প্রতিবন্ধী সনদ, অনাপত্তি সনদপত্র, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন সহ বিভিন্ন ভাতা কার্ডে নাম অর্ন্তভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউপি মেম্বার ও দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায়কে নিয়মে পরিনত করেছেন। এছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে চেয়ারম্যানের পছন্দের ঠিকাদার বা প্রভাবশালী ঠিকাদারের কাছ থেকে অর্থের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে কাজের সঠিক বাস্তবায়ন বুঝে না নেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছে, আওয়ামীলীগ চেয়ারম্যান ফারুক ও অন্যান্য মেম্বারগুলো পলাতক থাকার কারনে কোন জবাবদিহিতা না থাকায় সচিব ইফতেখারুল ইসলাম বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা লুটপাট সহ বিভিন্ন সনদপত্র গ্রহীতাদের হয়রানীর শিকার বানিয়ে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, সচিব ইফতেখারুল ইসলাম যোগদানের পর থেকে সরকারি আইনকে তোয়াক্কা না করে নিয়মিত অফিসে উপস্থিত থাকেন না। তিনি দুই-তিন ঘন্টা অফিসের কাজ করে নিজের খেয়াল খুশিমতো অফিসের নির্ধারিত সময়ের আগেই বাড়িতে চলে যান। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হন সেবা গ্রহীতা সাধারণ মানুষ।
এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব আয় ট্যাক্স আদায়, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু, ওয়ারিশ সনদ ইস্যু, গ্রাম আদালতের মামলার ফি আদায় করে কোষাগারে জমা দেন না। ট্রেড লাইসেন্স প্রদান বা নবায়নের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফি এর সমপরিমান অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, একটি ইলেকট্রিক শোরুমের ট্রেড লাইসেন্স করার পরিষদে যাই। বিস্তারিত আলোচনার পরে সচিব ইফতেখারুল ৯ হাজার টাকা দাবী করেন। যেখানে সরকারী ফি ৪ হাজার টাকা। পরে ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে ট্রেড লাইসেন্স করি। বিষয়টি নিয়ে কোন কিছু করলে ট্রেড লাইসেন্সটি বাতিল করে দিবেন হুমকি দেন। ট্রেড লাইসেন্স গ্রহীতাদের জবানবন্দি গ্রহন করা হয় বা ছদ্মবেশে একটি ট্রেড লাইসেন্স বানানোর চেষ্টা করলেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
ইউনিয়ন পরিষদের সকল সরকারি বরাদ্দ গোপন রেখে চেয়াম্যানের সাথে সিন্ডিকেট করে নিজের পছন্দ মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। ভিডব্লিউবি, মৎস্য ভিজিএফ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহার ভিজিএফ এর চাল, জিআর চালের তালিকা প্রস্তুত, উত্তোলন ও বিতরনে পছন্দের ইউপি মেম্বার ছাড়া কোন মেম্বারকে অবগত করেন না। অপরদিকে বয়স্ক ভাতা,বিধবা ভাতা,প্রতিবন্ধী ভাতা, মা ও শিশু সহায়তা ভাতা এবং ভিডাব্লিউবি, টিসিবির কার্ড দেয়ার কথা বলে একাধিক ভোক্তাদের কাছ থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কোন ভাতার বরাদ্দ আসলে তিনি ইউপি সদস্যদেরকে অবহিত করেন না বা কোন সভা করে সিদ্ধান্ত নেন না। প্রতিটি জন্ম/মৃত্যু নিবন্ধনে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আদায় করেন। প্রতিটি ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ৪/৫ হাজার টাকার অধিক অতিরিক্ত আদায় করেন। এই কাজে দালালও নিয়োজিত রয়েছে। যারা অতিরিক্ত টাকা দেয়, তাদের কাজ চাওয়া আগে হয়ে যায়। আর যারা অতিরিক্ত টাকা দেয় না, তারা ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
এমনকি ইউনিয়ন পরিষদে আসা জনসাধারনের সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলেন। নিয়মিত অফিস করেন না। এতে করে জনসাধারনকে চরম ভোগান্তিতে পরতে হয়। এককথায় ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের কাছে টাকা ছাড়া মিলছে না সেবা।
এব্যাপারে সচিব ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, কার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছি, তাকে নিয়ে আমার অফিসে আসেন। নিউজ করেন সমস্যা নাই।