মো. মোস্তাকিম আহম্মেদ: কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকার বাসিন্দা বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দ আবুল হোসেন খোকন ওরফে গ্যাস খোকন তিতাস গ্যাসের কেরানীগঞ্জ জিনিজিরা জোনাল অফিসের একজন ঠিকাদার। তবে তিতাস গ্যাসের ঠিকাদারী লিষ্টে তার নাম-ঠিকানা খুজে পাওয়া না গেলেও তার কাছে চাইলেই তো গ্যাসের সংযোগ লাগিয়ে দিতে পারেন। এর জন্য টাকা একটু বেশী নেন। তবে সুন্দর মতোই অবৈধ গ্যাস সংযোগ লাগিয়ে দিতে পারেন। প্রতিটি সংযোগের জন্য তাকে বা তার সিন্ডিকেটকে ৫ থেকে ৭/৮ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। তবেই বাসাবাড়িতে জ্বলে উঠে গ্যাসের চুলা। আর এভাবেই বিগত ১৫বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক গ্যাস খোকন।
কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ হাউজিং এলাকার প্রতিটি বাড়ীতেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদান, চুলা প্রতি গ্যাসের টাকা উত্তোলন আর গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে খোকন এখন অঢেল সম্পদের মালিক। হাসনাবাদ হাউজিংয়েই গড়েছেন ১০তলা বাড়ী। যার বর্তমান বাজার মুল্য ৫ কোটি টাকা অধিক। তবে জানাজানি হওয়ার ভয়ে তিনি এই বাড়ীতে নিজে বসবাস করেন না। কমদতলী গ্যাস অফিসের পাশেই নিজের আরেকটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পে ৫কাঠার প্লট সহ গ্রামের বাড়ীতে অর্ধশত বিঘা জমি কিনেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তার লাইফ স্টাইল দেখলেই বুঝা যায় সে কতটা স্বচ্ছল মানুষ। বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হওয়ার সুবাদে খুনী হাসিনার রাজত্বকালে কেরানীগঞ্জ গ্যাস অফিসে তার প্রভাব এতটাই ছিলো যে তিনি যা বলতেন তাই করতেন। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দেয়া ক্ষেত্রে তার প্রভাব ছিলো সবচেয়ে বেশী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ গ্যাস অফিসে অধীনে বাসাবাড়ী সহ বিভিন্ন এলাকার গার্মেন্টস পন্য ওয়াশ মেইল ও ডায়ার মেশিনের ব্যবহার করা হয়। ডায়ার মেশিনে কাপড় শুকানো ও ওয়াশ মেইলে কাপড় ভিজানোর জন্য পানি গরম করতে জন্য প্রচুর পরিমান গ্যাসের ব্যবহার করা হয়। এক একটি কারখানায় প্রায় প্রতিদিন আনুমানিক দুই হতে তিনশত ডাবল চুলার পরিমান গ্যাস পোড়ানো হয়। প্রতিষ্ঠান মালিকরা এসব গ্যাসের সংযোগ বৈধ উপায়ে পায় না, আবার পেলেও খরচ পড়ে অনেক বেশী। যেকারনে অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও স্থানীয় দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান মালিকরা অবৈধ উপায়ে গ্যাস সংযোগ নিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে খোকন সোনা সবার আগে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, হাসনাবাদ হাউজিং এলাকাজুড়ে প্রতিটি বাড়ীতেই খোকনের হাতে দেয়া গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। আবার গ্যাসের বিলও তিনিই কালেকশন করেন। কারোর বিল অফিসে জমা পড়ে আবার কারোর বিল খোকনের পকেটেই থাকে। ২০১২ সাল থেকে গ্যাসের নতুন সংযোগ বন্ধ থাকলেও ২০১২ সালের পর নির্মিত শতশত বাড়ীতে জ্বলছে গ্যাসের চুলা। এক একটি বাড়ীতে ২০থেকে ৪০টি চুলা জ্বালানো হয়। চুলা প্রতি গ্যাস বিল ১হাজার টাকার অধিক। এভাবে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা কালেকশন করে তার সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগাভাগি করেন খোকন। আর এভাবেই গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।
দুদকের ঢাকা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের এককর্মকর্তা বলেন, ‘অপরাধী যে-ই হউক না কেন, তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। অবৈধভাবে কেউ সম্পদ অর্জন করলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। ’ আপনাদের প্রকাশিত অসংখ্য নিউজ থেকে অপরাধীরা চিহ্নিত হয়ে শাস্তির আওতায় এসেছে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে সৈয়দ আবুল হোসেন খোকন বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি কোন অবৈধ কাজের সাথে জড়িত নই। এগুলো মিথ্যা ভিত্তিহীন। তবে কিছুক্ষণ পরেই বাংলা টিভির কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি আরিফ নামের এক সাংবাদিক দিয়ে ফোন করিয়ে নিউজ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন এবং তার সাথে দেখা করার কথা বলেন।