খাদ্য অধিদপ্তরের পিডি আমিনুল যখন নিজেই ঠিকাদার

খাদ্য অধিদপ্তরের পিডি আমিনুল যখন নিজেই ঠিকাদার

খাদ্য অধিদপ্তরের পিডি আমিনুল যখন নিজেই ঠিকাদার

মোঃ আহসানউল্লাহ হাসানঃ
সরকারি চাকুরিবিধিতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে কোন সরকারি কর্মকর্তা তার কর্মরত প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করতে পারবে না। সিডিউল ক্রয় অর্থাৎ ঠিকাদারি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, এমনকি তার পরিবারের কেউ অথবা আত্মীয়-স্বজনও ঐ দপ্তরের ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ হতে পারবে না। অথচ সরকারী চাকুরিবিধির এই নিয়মটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অতিগোপনে কারসাজি করে নিজ পরিবারের লোকজনের নামে সাড়ে ২০কোটি টাকার টেন্ডার কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন খাদ্য অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক আমিনুল ইসলাম। সর্বনিন্ম দরদাতাকে টেন্ডারের কাজ না দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা নিজের ভাইকে টেন্ডার কাজের অনুমোদন দিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের জাল পেতেছেন পিডি আমিনুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের ভেতর আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইলেও সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিরবতা পালন করছেন বলে দৃশ্যমান হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, খাদ্য অধিদপ্তরের অর্থায়নে দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্য গুদাম ও আনুষাঙ্গিক সুবিধাদি নির্মান প্রকল্পের অধীনে বাগেরহাট-মংলা এলাকায় খাদ্য গুদাম নির্মানের লক্ষ্যে টেন্ডার আহ্বান করেন প্রকল্প পরিচালক আমিনুল ইসলাম। এতে বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টেন্ডার সিডিউল কেনার নিয়ম থাকলেও পিডি আমিনুল ইসলাম নিজের আপন ভাই মিঠু, খালাতো ভাই সহিদ ও ভাগিনা আরমানের মাধ্যমে একটি নামসর্বস্ব ঠিকাদারী লাইসেন্স বানিয়ে সাড়ে ২০কোটি টাকা টেন্ডার কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। নিজ ভাইয়ের নামে এই লাইসেন্সটির ১০লাখ টাকার কাজের যোগ্যতা না থাকলেও খাদ্য অধিদপ্তরের কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লাইসেন্সধারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে ভীতি প্রদর্শন করে সিডিউল কেনা থেকে বিরত রাখেন। তারপরেও একটি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের সকল শর্তপূরন করে অতিগোপনে সিডিউল ক্রয় করে টেন্ডারে অংশগ্রহন করেন। এতে সর্বনিন্ম দরদাতা হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানটি ১ম স্থান অধিকার করেন। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানটিকে টেন্ডারের কার্যাদেশ না দিয়ে নিজের ভাইয়ের নামে সর্বোচ্চ দরদাতা ২য় স্থানে থাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডারের কার্যাদেশ প্রদান করেন আমিনুল ইসলাম।

এখানে আরো একটি মজার ব্যাপার ঘটেছে, যেকোন টেন্ডারের মোট বরাদ্দের ১০/১২ শতাংশ কমে টেন্ডারের কার্যাদেশ প্রদান করার নিয়ম রয়েছে। এটা মেনেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো টেন্ডার ক্রয়ের দরপত্র সাবমিট করেন। সেই অনুযায়ী ১ম স্থান অধিকারকারী প্রতিষ্ঠানটি সাড়ে ২০কোটি টাকার বরাদ্দের মধ্যে ১৮ কোটি টাকার কিছু বেশী নির্ধারন করে দরপত্র সাবমিট করে ছিলেন। এতে সরকারের অন্তত সোয়া ২কোটি টাকার মতো খরচ কম লাগতো। কিন্তু পিডি আমিনুল ইসলাম তার ভাইয়ের নামের লাইসেন্সের মাধ্যমে নামেমাত্র ২/৩ লাখ টাকা কম দেখিয়ে পুরো বরাদ্দের অর্থাৎ ২০কোটি ৩৯ লাখ টাকার কার্যাদেশই হাতিয়ে নিয়েছেন। এই ঘটনার কারনে পিডি আমিনুলের ভাইয়ের নামে সাবমিটকৃত সিডিউলটি দরপত্র বাছাইকরন কমিটিতে শতভাগ বাতিল বলে গন্য হওয়ার কথা এবং পিডি আমিনুল নিজেই এটা বাতিল করতে পারতেন। কোন সিডিউল যদি যাচাই-বাছাইয়ে উপযুক্ত না হয়, তাহলে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করবেন। এটাই নিয়ম। কিন্তু পিডি আমিনুল ইসলাম তা না করে টেন্ডার কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদের মোটা অংকের কমিশন দিয়ে বা দেয়ার শর্তে সর্বনিন্মদরদাতা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে নিজের ভাইয়ের নামের দরপত্র পাশ করেন। পিডি আমিনুলের ভাই ঠিকাদারী কাজের ‘ঠ’ও বোঝে না, আমিনুল নিজেই কোটি টাকা সিকিউরিটি মানি সহ সিডিউলের সমস্ত নথিপত্র নিয়ন্ত্রন করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

খাদ্য অধিদপ্তর সুত্র বলছে, পিডি আমিনুল ইসলাম বা তার ভাই টেন্ডার কাজটি অনুমোদন পাওয়ার মাধ্যমেই দুই আড়াই কোটি টাকা লাভ করে বসে আছেন। ৭/৮ কোটি টাকায় নির্মান যোগ্য গুদামঘর নির্মানের প্রাক্কলন বানিয়েছেন সাড়ে ২০ কোটি টাকা। এই টেন্ডারটিতে ধাপে ধাপে অন্তত ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা হরিলুট করা হবে। আমিনুলের ভাইয়ের টেন্ডার প্রাপ্তির বিষয়টি বৈধতা পেলে বাংলাদেশে আইন বলতে কিছুই থাকবে না।
এব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, পুরো কথাটাই মিথ্যা। এখানে যা বলা হয়েছে, তাও মিথ্যা । নামসহ এই সাংবাদ গুলো দেখিয়ে, মানুষকে ধোকা দিয়ে টাকা নেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে নিজেদেরকে ব্যবহার করে চলছে। যা অন্যায়। আপনাদেরও আইন অনুযায়ী বিচার হবে। মিথ্যা কোন কিছু লিখলে এর বিচার হবে। আপনারাও আইনের উর্ধ্বে নন। অন্যায় আশায় মানুষকে বিব্রত করবেন না।

More News...

নিউইয়র্কে ট্রাম্পের সংবর্ধনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার