খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলাকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কামালের ক্যাশিয়ার মোশারফের নিয়ন্ত্রণে কাওরান বাজারের চাঁদাবাজি
স্টাফ রিপোর্টার:
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত মোশাররফ হোসেন ওরফে মিনতিকে ১৭ এপ্রিল-২০২৫ তারিখে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। এখনো মোশারফ এর অনুসারীরা কারওয়ান বাজার একাধিক পয়েন্ট থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে । গড়ে তুলেছে মোশারফ বাহিনী। আর
মোশারফ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে মূল নেতৃত্বে রয়েছে দিলীপ কুমার, কামাল হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, জাকির হোসেন, মোহাম্মদ নজরুল আলম খান ও মিজানুর রহমান পাটোয়ারী। দিলীপ কুমার গ্রেপ্তার পরে বাকি সদস্যদের দিয়ে চলমান রাখছে চাঁদাবাজি।
রাজধানীর সবচেয়ে বৃহত্তম পাইকারি আড়ত কাওরান বাজার এখন চাঁদাবাজদের অভয়ারন্য। নানা উপায়ে দিনভর চলে হরদম চাঁদাবাজি। আর এ চাঁদাবাজি অর্থ মাস শেষে দাঁড়ায় কয়েক কোটি টাকার ঘরে। শুধু তাই নয়, টাকার বিনিময়ে সিটি করপোরেশনের পার্কিং স্পটগুলোও এখন নিয়ন্ত্রণ করছে ওই চক্র। সেখান থেকেও মাস শেষে আদায় হচ্ছে কোটি টাকা। সিটি করপোরেশন নামমাত্র টাকা পেলেও বাকি সব চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রকদের হাতে।
কাওরানবাজার তিনটি মৎস্য আড়ৎ থেকে মোশারফ প্রায় বিশ কোটি টাকা চাঁদা তুলে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এক মৎস্য আড়ৎদার।
তিনি জানান যে, মোশারফ গত ১৬ বছরে কারওয়ান বাজার আড়ৎ থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা চাঁদা তুলে এর একটি অংশ দিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে। এতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তেজগাঁও সরকারি ও সিটি কর্পোরেশন এর জায়গা দখল করে ঘরে তুলেন একটি তথাকথিত ক্লাব যেখানে তিনি ক্যাসিনো ব্যবসা করতেন।
তৎকালীন ক্যাসিনোর ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদের অনেকেই গ্রেফতার হলেও মোশারফের কোন কিছু হয়নি কারণ এই ব্যবসার একটি অংশ চলে যেত তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের অফিস, একটি অংশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস মনির ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফান্ডে।
তার চাঁদাবাজির অংশ পেতেন তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন শ্রমিক লীগ এর সভাপতি কাশেম ওরফে হাত কাটা কাশেম। তিনি পুরা কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন। তারও একটি সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ গ্রুপ ছিল যারা কারওয়ান বাজার পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করতো। গত ৫ই আগস্ট দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার পরে সবাই পালিয়েছেন। কিন্তু মোশারফ এখনও জেলে বসে তার কিছু চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী দিয়ে কারওয়ান বাজারের মাসোয়ারাদের নিয়ন্ত্রণ রেখেছে।
কারওয়ান বাজার মৎস্য আড়ৎদের মালিক সমিতির একজন জানান , ডিটিএল নামক একটি মৎস্য আড়ৎ হক-বে কোম্পানির কাছ থেকে সাত বছর আগে একটি সংগঠনের নামে ক্রয় করা হয়েছিল। সেই আড়তে শেয়ার দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক মোশারফ ও তার সহযোগীরা। ইতিমধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যবহার করে শরীয়তপুর জেলার গোশাইরহাট একটি উপজেলায় বিনা ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন হয় নির্বাচিত হয়, একটি সূত্রে জানিয়েছেন মোশারফ এর উত্থান হয়েছিল একদম ছোট জায়গায় থেকে অর্থাৎ প্রথমে তিনি কুলির কাজ করতেন তাই তার নাম ছিল মিনতি মোশাররফ। পরে তিনি তথাকথিত তরুণ লীগ নামে একটি সংগঠন করেন । এই সংগঠনের সভাপতি দাবি করতেন তিনি।২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন হওয়ার পরে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগে যোগদান করেন। সেখান থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বদৌলতে তেজগাঁ থানা আওয়ামী লীগের যুব ক্রীড়া সম্পাদকের পদটি ভাগিয়ে নেন। তার এই অপকর্মের বিরুদ্ধে একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিক অর্থাৎ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় রিপোর্ট হওয়ার পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের পেটুয়া বাহিনী পুলিশের সহযোগিতায় তারা দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা অফিস ঘেরাও করেছিল।
অন্য একটি সূত্র জানায়, মোশারফ ও তার বাহিনী বর্তমান কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন। তিনি তৎকালীন তেজগাঁও থানার ওসি ও পুলিশের সহযোগিতায় ছাত্রদের উপর গুলি বর্ষন করেছিলেন। তাই সাধারণ মৎস্য আড়ৎদারদের দাবি এই ব্যবসায়ী নামধারী চাঁদাবাজদের হাত থেকে কারওয়ানবাজাকে চাঁদাবাজ মুক্ত দেখতে চাই।