ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণকারী মাসুদুরকে পুলিশ ধরছে না

ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণকারী মাসুদুরকে পুলিশ ধরছে না

মোঃ আহসানউল্লাহ হাসানঃ
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুলিবর্ষনকারী পুলিশ-আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বেশীরভাগ আত্মগোপনে থাকলেও হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলার এজারহারভুক্ত আসামীদের অনেকেই আবার প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা বিগত ১৫ বছর খুনী হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের অন্তরালে রাষ্ট্রের টাকা লুটপাট করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। তারাই এখন সেই অর্থ খরচ করে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন পদে বহাল তবিয়তে থেকে রাষ্ট্রের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যাপক ভুমিকার রাখছে। এদের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের নয়াবাজার শাখার ম্যানেজার মাসুদুর রহমান মাসুদ অন্যতম। সে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে খুনি হাসিনার নির্দেশে পুলিশে সাথে মিশে বাড্ডা থানাধীন এলাকায় ৪জুলাই ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে। এতে ছাত্র-জনতার মধ্যে দুর্জয় আহম্মেদ নামের এক যুবক চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুত্বর আহত হয়। এঘটনায় ‘আগষ্ট বিপ্লব’ বিজয়ের পরে দুর্জয় আহম্মেদ দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যারচেষ্টা মামলা করেন। মামলা নং-১৬। মাসুদুর রহমান উক্ত মামলার একজন এজাহারভুক্ত আসামী। তবে বাদী দুর্জয় আহম্মেদের চোখ আলো নিভে গেছে।

মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল হকের ছেলে দুর্জয় আহম্মেদ (২৮) ছাত্র-জনতার পক্ষে আন্দোলনে অংশ গ্রহন করেন। ২০জুলাই বেলা ১১টায় বাড্ডা থানাধীন মধ্যবাড্ডা ইউলুপ এর নিচে পোস্ট অফিস গলির মাথায় পাকা রাস্তার উপর মাসুদুর রহমান সহ মামলার এজাহারভুক্ত অপরাপর আসামীরা আগ্নেয় অস্ত্র, চাপাতি, রামদা, লোহার রড, ককটেল ও লাঠিসোঠা নিয়ে পুলিশে সাথে মিলে ছাত্র-জনতাকে হত্যার উদেশ্যে তাদের উপর ব্যাপক গুলিবর্ষণ সহ হামলা চালায়। এসময় আসামী মাসুদুর সহ আসামীদের ছোড়া গুলিতে দুর্জয়ের বাম চোখে লাগলে সে গুরুতর আহত হয়। গুলির আঘাতে তার দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া লোহার রডের আঘাতে তার মাথার পিছন দিকে গুরুত্বর জখম হয়। আহত দুর্জয়কে আশেপাশের লোকজন উদ্ধার করে পার্শ্ববতী এএমজেড হাসপাতালে নিয়ে যায়। আওয়ামী মাসুদুর গংদের ভয়ে ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রেফার্ড করেন। তখন আশে পাশে থাকা লোকজন এবং দুর্জয়ের বড় বোন শিখা হক তাকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঐ দিন বিকালে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে তার বাম চোখের অপারেশন হয়। পরবর্তীতে সিএমএইচ এবং লায়ন চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে দীর্ঘদিন তার চিকিৎসা করা হয়।

তবে এখনো আতংঙ্কেই কাটছে দুর্জয়ের প্রতিটা মুহুর্ত। কারন মামলা করেও বিপাকে পড়তে হয়েছে তাকে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামীরা বুক ফুলিয়ে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের ধরছে না। আসামী ধরা ব্যাপারে পুলিশের ১পার্সেন্ট আগ্রহ নেই।
সুত্র জানায়, ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা মাসুদুর রহমান ব্র্যাক ব্যাংক আওয়ামীলী সিন্ডিকেটের অন্যতম প্রধান সদস্য। সে নিজেকে গোপালগঞ্জের পরিচয়ে দাপট দেখাতেন। খুণী হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর বন্ধু পরিচয়ে সব সময় প্রভাব বিস্তার করতেন। আওয়ামীলীগের মিছিল মিটিংয়ে অঢেল টাকা খরচ করতেন। বিগত দেড় দশক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির ওপর চেপে বসা ফ্যাসিবাদি শাসনে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপি সহ মাসুদুরের মতো এসব নেতাকর্মীরা রীতিমত দানবে পরিণত হয়ে ছিলো। সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, দলীয়করণ এবং আত্মীয়করণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার, সরকারি জমি, বন, নদী, খাল, পাহাড় দখল থেকে শুরু করে এমন কোন অপরাধ নেই যা তারা করেনি। নিজ নিজ এলাকায় তাদের কথাই ছিল আইন। তাদের ইশারা ছাড়া নড়েনি গাছের পাতাও। তাদের বাহিনীর কাছে সাধারণ মানুষ ছিল জিম্মি। প্রশাসন ছিল তাদের হুকুমের গোলাম, পুলিশ ছিল দলীয় দাস।

তাদের চরম প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন বিএনপি-জামাত, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। বিএনপি, জামাত-শিবির, জঙ্গী,স্বাধীনতাবিরোধী ট্যাগ দিয়ে চালানো হয়েছে গুম-খুন। মাসুদুরের মতো বাহিনী দিয়ে খুনী হাসিনা বিগত ১৫ বছরে এদেশটা নরকে পরিনত করে সবশেষে ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যা চালিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে স্বামীর বাড়ী মোদির কাছে চলে গেছে।
মাসুদুরের মতো ঘৃণিত আওয়ামী কর্মীদের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার ওপর ভয়ঙ্কর হামলার অভিযোগে মামলা হলেও পুলিশ তাদের ধরছে না। কারন খুনী হাসিনার নিয়োগকৃত ছাত্রলীগ সদস্যরা এখনো ৯০শতাংশের বেশী পুলিশে সক্রিয় রয়েছে। এদেরকে স্বপদে বহাল রেখে বিচার আশা করা আর আম গাছে কাঠাল আশা করা একই কথা।
তারা গ্রেফতার না হওয়ায় জনমনে বিশেষ করে হাসিনার পতন আন্দোলনে শহিদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষ বেড়েই চলেছে। তাদের কেউ ভারতসহ বিদেশে পালিয়েছেন, কেউ আবার দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের কয়েকজন সাগরে কোস্টার জাহাজে আশ্রয় নিয়েছেন বলেও জোর গুঞ্জন রয়েছে। তবে র‌্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। তাদের প্রত্যাশা এসব অপরাধীরা ধরা পড়বেন। মাসুদুররা পুলিশের নাকের ডগায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার কেউ কেউ প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালাচ্ছে। ৩১ডিসেম্বর-২০২৪ বাগেরহাটে মার্চ ফর ইউনিটিতে ছাত্র-জনতার গাড়ী বহরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে হামলার ঘটনা এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।

More News...

খাঁটি আওয়ামীলীগার সামিউলের অঢেল সম্পদ

অবৈধ সম্পদে লালেলাল ইঞ্জিঃ জামাল