জেঁকে বসেছে শীত, নাকাল জনজীবন

জেঁকে বসেছে শীত, নাকাল জনজীবন
আয়েশা আক্তার: 
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। ঘরে-বাইরে সর্বত্র অনুভূত হচ্ছে তীব্র ঠান্ডা। সেইসঙ্গে বইছে হিমেল বাতাস। প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। গত দুদিন রাজধানীতে দেখা মেলেনি সূর্যের। ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন নগরী।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে যেন বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। এর আগের দিন বৃহস্পতিবারও একই অবস্থা ছিল। জীবিকার তাগিদে যারা কর্মস্থলে বের হয়েছেন সেই খেটে খাওয়া মানুষকে ভারী শীতবস্ত্র পরে বাইরে বের হতে দেখা যায়। তারপরও যেন ঠান্ডার হাত থেকে রেহায় নেই। রাস্তাঘাটে গণপরিবহণের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন মার্কেট কিংবা ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের। হঠাৎ গরম কাপড়ের বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সন্তুষ্ট বিক্রেতারাও।
আবার অনেক জেলায় গত কয়েকদিন ধরেই সূর্যের দেখা নাই। এই শীতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী নিম্ন আয়ের মানুষ। হিমেল হাওয়ায় কাঁপুনি ধরে যাচ্ছে শরীরে। পর্যাপ্ত শীতের পোশাক না থাকায় কনকনে ঠান্ডা নিয়েই কাটাতে হচ্ছে তাদের। এছাড়াও গ্রামের মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। আবার দেশজুড়ে প্রচণ্ড শীতে ঠান্ডাজনিত রোগ বেশি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষ ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় অনেক হাসপাতালে চাপ বেড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, দেশের ১৩ জেলার উপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া এবং চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে তাপমাত্রা বেড়ে আগামী কয়েকদিন শীতের অনুভূতি কমে আসবে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ কারণে ঢাকায় এত শীত অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ এবং কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, শীতকালে তাপমাত্রা কমবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কুয়াশার কারণে দিনের বেলা সূর্যের তাপ না পড়ায় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে গেছে। সাধারণত জানুয়ারি মাসে রাতের তাপমাত্রা কমে যায় এবং দিনের বেলা সূর্যের তাপের কারণে তাপমাত্রা বাড়ে। এ কারণে শীতের অনুভূতি এত বেশি হয় না। কিন্তু গত দুই দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেখানে থাকার কথা ২৪ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ কারণে শীতের অনুভূতি বেশি হচ্ছে।
তিনি আরও জানানা, পুরো জানুয়ারি মাস ঠান্ডা থাকবে। তবে গত দুইদিন যে অবস্থা রয়েছে সেটি সোমবার-মঙ্গলবারের মধ্যে কেটে যাবে। তখন তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। তবে এখন যে অবস্থা রয়েছে এর থেকে তাপমাত্রা আর কমবে না।
আরেক আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, শৈত্যপ্রবাহ কমে আসবে কি না বলা যাচ্ছে না; তবে তাপমাত্রা একটু বাড়বে- এর ফলে কয়েকদিন শীতের অনুভূতি কম থাকবে।
আবহাওয়ার জানুয়ারি মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে এক থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়; ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও আশেপাশের এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
কুয়াশার বিষয়ে বলা হয়, মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি এবং দিনের তাপমাত্রা দেশের পশ্চিমাংশে ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশের কোথাও কোথাও দিনের বেলা শীতের অনুভূতি বিরাজ করতে পারে।
শনিবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশের কোথাও কোথাও দিনের বেলা শীতের অনুভূতি বিরাজ করতে পারে।
রোববারের পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশের কোথাও কোথাও দিনের বেলা শীতের অনুভূতি বিরাজ করতে পারে।
বর্ধিত ৫ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা পর্যালোচনায় এ সময়ের শুরুর দিকে দেশের উত্তরাংশে হালকা বৃষ্টি বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়- রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন ও নিউমার্কেট নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান প্লাজা, গ্লোব সুপার মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট, সায়েন্সল্যাব, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশেপাশের সব মার্কেটেই ক্রেতারা ভিড় করছেন। তবে মূল মার্কেটের পাশাপাশি ফুটপাতে থাকা দোকানগুলোতেও নারী, পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সীদেরও অসংখ্য ক্রেতা দেখা গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দরকষাকষি যেমন হচ্ছে, বিক্রিও হচ্ছে সেরকম। এর মধ্যে পুরুষদের হুডি, জ্যাকেট, ফুলহাতা টি-শার্ট কেনার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। মেয়েরা ব্যস্ত সোয়েটার, চাদর, হুডি কিনতে। এছাড়া, শিশুদের জন্য জাম্পার, গেঞ্জি, টুপি, কাপড়ের জুতা কিনতে দেখা যায় অনেক নারী ক্রেতাকে। এ সময় হকারদের বলতে শোনা যায়, দেইখ্যা লন বাইছা লন, এক দাম ৩০০।
ক্রেতারা বলছেন, গত কয়েকদিন তুলনামূলক বেশি শীত পড়ায় তারা গরম কাপড় কিনতে এসেছেন। আর হঠাৎ শীত বাড়ায় ব্যবসায়ও লাভ হচ্ছে তাদের।
নিউমার্কেটে মোহাম্মাদপুর থেকে শীতের কাপড় কিনতে আসা সবুজ মিয়া বলেন, আজ অফিস ছুটির দিন। আবার প্রচন্ড শীত পড়েছে। এর আগে তো শীতের কাপড় প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু এখন শীতে টিকে থাকা দায় হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আজ আসলাম। মার্কেট ঘুরে দেখছি। মার্কেটের তুলনায় ফুটপাতে কম দামে কাপড় পাওয়া যায়।
ফুটপাতের বিক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, শীত বেশি এবং কাপড়ের দাম কম হওয়ায় বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। আবার শীত যত বাড়বে, এই কাপড়ের চাহিদাও তত বাড়বে।
ফুটপাতে শীতের কাপড় বিক্রি করা কয়েকজন দোকানদার জানান, এসব কাপড় তারা বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন রাস্তায় বিক্রি করেন।
পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শীত মৌসুমের আসার পর থেকে শুক্রবার মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে সবচেয়ে কম।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য মতে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৯৯ শতাংশ। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, শীতের তীব্রতা বেড়েই যাওয়ায় সর্বত্র জবুথবু অবস্থা। ছন্দপতন ঘটেছে মানুয়ের দৈনন্দিন জীবনে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমজীবি মানুষেরা। যেন কাঁপছে এ জনপদের মানুষ। শুক্রবার সকালে জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষ। ঠান্ডার কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকে। সকাল বেলা ঠান্ডার তীব্রতা বেশি থাকায় অতি প্রয়োজনীয় কাজ একটু দেরিতে করছেন কেউ কেউ। বিশেষ নদ-নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলগুলোতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।
জেলার দুধকুমার নদের পূর্বপাড়ের এলাকা দিনমজুরি করেন হোসেন আলি। ঘাড়ে কোদাল ও হাতে পাশুন নিয়ে যাচ্ছেন। তখন সকাল সাড়ে ১০টা প্রায়। শীত নিয়ে তিনি জানান, সকালে কাজ ধরার কথা। যাবার পারি নাই। হাত-পা ঠান্ডায় নাগি যায়। উপায় নাই। পেট তো চলা লাগবে।
একই এলাকার সাইদুর ইসলাম জানান, বাচ্চাদের নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। আমরাতো কাপড়চোপড় পড়ি। একটু বুঝি। বাচ্চাদের নিয়ে ভয়ে থাকি।
কনেকনে ঠান্ডায় শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট বেড়েছে মানুষের। ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের মানুষরা ঠান্ডা এড়াতে বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন না খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া। গৃহপালিত পশুপাখি নিয়েও বিপাকে অনেকে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া কৃষি পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, সকালে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আরও দুই থেকে তিন দিন কিছুটা তাপমাত্রা কমতে পারে এবং ঠান্ডা বাড়তে পারে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘ হতে পারে।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, পৌষের শীতে কাঁপছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের মানুষ। তীব্র শীতে জনজীবনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না সাধারণ মানুষ। তীব্র শীতে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন বোরো ধান চাষি, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষরা। অতিরিক্ত শীতে ধানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ধারণা কৃষকদের। তবে শীতে খেজুরের রসের মান ভালো হচ্ছে। বাগেরহাট শহরের রিকশাচালক রবিউল বলেন, পেটের টানে রিকশা নিয়ে বের হইছি। শীতে লোকজন তেমন বাইরে বের হচ্ছে না। তাই যাত্রী কম, আয়ও কম।
খেজুর গাছ কেটে রস বের করার কাজে নিয়োজিত আবুল হোসেন বলেন, শীতে সবকিছুর সমস্যা হলেও খেজুর গাছে রস বেড়েছে। রসের মানও ভালো।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ মো. হারুন অর রশিদ বলেন, শুক্রবার বাগেরহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি আনুমানিক দুই থেকে তিনদিন থাকবে।
ব‌রিশাল ব্যুরো জানায়, দুদিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলার পাশাপাশি হিমেল হাওয়া বয়ে চলায় বরিশালে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের জনজীবন। শুক্রবার বন্ধের দিন হওয়ায় প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না অনেকে। তবে শীতের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পেশাজীবী মানুষ।
বরিশাল আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বরিশালে সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া চলতি মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১২ ডিসেম্বর ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ২-৩ দিনে বরিশাল অঞ্চলে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
গত বুধবার দুপুরের পর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন কেটে গেলেও বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকাল থেকে সূর্যের দেখা মেলেনি। ফলে সকাল থেকেই ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষরা। আবার ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক ও নৌপথে বিঘ্নিত হচ্ছে যানবাহন চলাচল।
অপরদিকে বরিশাল নদীবন্দরে দেখা যায়, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও ঘন কুয়াশার কারণে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীদের চাপ কমে গেছে। তাছাড়া নির্ধারিত সময়ে নৌযান ছেড়ে গেলেও ঘন কুয়াশার কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে এক থেকে দুই ঘণ্টা বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। আবার ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক পথেও কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে যানবাহন চলাচল। এদিকে শীতে শিশু ও বয়স্ক মানুষের বাড়তি যত্নের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

 

More News...

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ১৭৮ জওয়ানের মুক্তিতে বাধা নেই

কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অংসুইছাইন চৌধুরী গ্রেপ্তার