নজর মোহাম্মদ গোষ্ঠীর পৈতৃক কবরস্থান নিয়ে অপপ্রচার, ইতিহাস বিকৃতি ও ধর্মীয় অনুভূতির অপমানের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
স ম জিয়াউর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে :
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আজ ১৩ মে বিকাল ৪টায় নজর মোহাম্মদ সমাজের পক্ষ থেকে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিনশ’ বছরের পুরনো পৈতৃক কবরস্থান নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার, ইতিহাস বিকৃতি এবং ধর্মীয় অনুভূতির অবমাননার প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নজর মোহাম্মদ সমাজের প্রতিনিধি এড. মফিজ আলম। তিনি বলেন, “এই কবরস্থান আমাদের বাপ-দাদার, আমাদের গোষ্ঠীর আদিপুরুষদের চিহ্ন বহনকারী পবিত্র স্থান। অথচ কিছু স্বার্থান্বেষী মহল মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কবরস্থানের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমাদের গোষ্ঠীগত, পারিবারিক ও ধর্মীয় মর্যাদায় আঘাত করছে।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঐতিহাসিক এই কবরস্থানের বৈধ মালিকানা সিএস রেকর্ডে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও, আরএস ও বিএস খতিয়ানে কিছু অংশ খাস হিসেবে ভুলভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এই দুর্বলতাকে পুঁজি করে মোনাফ সওদাগর গং কবরস্থানের মালিকানা দাবি করে অপতৎপরতা শুরু করেছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, “আমরা ইতোমধ্যে এল.এস.টি. মামলা নং ৫২২৩/২০২৫ এর মাধ্যমে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। অথচ মামলা চলাকালীন অবস্থায় ভূমি অফিসের কিছু কর্মকর্তা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে একতরফাভাবে ‘ডিসি চট্টগ্রামের মালিকানাধীন খাস জমি’ নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন—যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও প্রশ্নবিদ্ধ।”
বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, “এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোনাফ সওদাগর ও তার সহযোগীরা ‘কবরস্থান উদ্ধার’ বলে মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি কিছু মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে আমাদের ‘ফ্যাসিবাদী’ বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে—যা শুধু আমাদের মান-সম্মানই নয়, আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে চরমভাবে আঘাত করছে।”
নজর মোহাম্মদ সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, এই বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হোক এবং এই কবরস্থানের ইতিহাস ও মালিকানা যাচাই করে সঠিক তথ্য তুলে ধরা হোক। একইসাথে, বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ও ধর্মীয় অপব্যবহার যেন আর না হয়—সে জন্য সাংবাদিক সমাজের দায়িত্বশীল ভূমিকা কামনা করছি।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বক্তারা আরও বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নই, আমাদের একমাত্র লক্ষ্য পৈতৃক কবরস্থানের মর্যাদা রক্ষা। আইনের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে, কিন্তু প্রয়োজনে সামাজিক ও মানবিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চালিয়ে যাবো।”
তারা আরও জানান, মোনাফ সওদাগর, লতিফ কমান্ডার, আবু বক্কর, রানা ও বিপ্লবসহ একটি কুচক্রী মহল তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমাজের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়—“এই কবরস্থান আমাদের আত্মপরিচয়ের অংশ, ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতীক এবং পূর্বপুরুষদের স্মৃতিচিহ্ন। আমরা এই কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষায় কোনো আপস করবো না এবং আইনি ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এর মর্যাদা রক্ষা করবো।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মহাসচিব মো: কামাল উদ্দিন, মো : শামসুল আলম, মো : বাহাদুর আলম, মো সালেহ জহুর, মো খোরশেদ আলম, মো : জাফর আলম।