নারায়নগঞ্জে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে কোটিপতি ইসমাইল প্রধান

নারায়নগঞ্জে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে কোটিপতি ইসমাইল প্রধান

স্টাফ রিপোর্টারঃ
আবাসিক বাড়ী ও বিভিন্ন কল-কারখানায় অবৈধ উপায়ে গ্যাস সংযোগ দিয়ে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের আঞ্চলিক অফিসের ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা-কর্মচারী, গ্যাসের লাইন সংযোগকারী ঠিকাদার ও স্থাণীয় প্রভাবশালী দালালের সমন্বয়ে একটি শাক্তিশালী ত্রি-মূখী সিন্ডিকেট। ফলে অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে কোটিপতি বনে যাচ্ছেন এসব গ্যাস লুটেরাগন। ৩০/৩৫ বছর চাকুরী করে বেতন, বোনাস ও পেনশন মিলে যত টাকা পেতেন, তারচেয়েও শতগুণ বেশী সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ফতুল্লা অফিসে এই সিন্ডিকেটের অন্যতম ওয়েল্ডার ইসমাইল প্রধান। তিনি ফতুল্লার তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে গ্যাস বিস্ফোরনে ৩৪ মুসল্লি অগ্নিদগ্ধে নিহতের মামলায় চার্জসিটভুক্ত আসামী। অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানে তার অন্যতম সহযোগি শাকিল ও শামীম। ইসমাইল প্রধান তিতাসের গ্যাস লাইন সংযোগের ক্ষেত্রে ওয়েল্ডিং কাজের একজন ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী। তার বেতন-ভাতা খুবই সীমিত। তবে উপরি ইনকাম অনেক বেশী। বাসাবাড়ী সহ কল-কারখানায় অবৈধ উপায়ে গ্যাসের সংযোগ দিতে পারলেই কারীকারী টাকা। বাসাবাড়ীতে প্রতিটি ডবল চুলার মাসিক গ্যাস বিল ১১শ টাকা এবং ২০১২ সালের পর নতুন সংযোগ বন্ধ থাকায় বাড়ীওয়ালারা লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে তিতাসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অবৈধ উপায়ে গ্যাস সংযোগ নিয়ে থাকে। মাসে মাসে প্রতিটি চুলার হিসেবে অবৈধ পন্থায় গ্যাসের বিল পরিশোধ করে ব্যবহারকারীরা। আর ইসমাইলরা তা নিজের পকেট ভরে। এসব কাজে ইসমাইলরাই থাকে প্রথম সারিতে। ইসমাইলদের মতো এক একজন গ্যাস চোরের অধীনে অন্তত শতাধিক বাড়ীর নিয়ন্ত্রণ থাকে। মাসে লাখ লাখ টাকা আদায় করে এরা উপর তলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত ভাগ-বন্টণ করে। উত্তর চাষাড়া কায়েমপুর পুরোনো মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ইসমাইল প্রধান অর্ধকোটি টাকা মূল্যের জমি কিনে টিনসেড় নির্মান করে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় ইসমাইল নিজেই আবার পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়ীতে ভাড়া থাকেন। তিনি নারায়নগঞ্জের গডফাদার খেলার আগেই পালিয়ে যাওয়া শামীম ওসমানের লুটপাট বাহিনীর অন্যতম সদস্য। শামীম ওসমানের শেল্টারে বিগত ১৫ বছরে নারায়গঞ্জের গ্যাস অফিসকে ধ্বংসযজ্ঞে পরিনত করেছেন ইসমাইল সিন্ডিকেট। শামীম ওসমানের হয়ে যুবলীগ নেতা সুমন নিয়ন্ত্রন তিতাসের এই জোনাল অফিসের ইসমাইল সিন্ডিকেটকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবাসিক ও বানিজ্যিক মিলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা একটি ঘনবসিতপূর্ন এলাকা। এখানে অসংখ্য মিল-কারখানা সহ ৯৮ শতাংশ বাসাবাড়িতেই এখন গ্যাসের সংযোগ বিদ্যমান রয়েছে। ২০১২ সালের পরে গ্যাসের নতুন দেয়া বন্ধ হলেও ঐ সময় গ্যাস সংযোগের পরিমান ছিলো ৪০ শতাংশের নিচে। অর্থাৎ গত ৮/১০ বছরে অন্তত ৪০/৪৫ শতাংশ নতুন সংযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ সংযোগ ২০১২ সালে পূর্বের ডিমান্ড নোটের ভিত্তিতে ৩/৪ বছরের সমপরিমান গ্যাস বিল ব্যাংক জমা সহ ৩/৪ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে অনেক গ্রাহকই নতুন সংযোগ পেয়েছে। আবার কেউ কেউ একটি ডমেষ্টিক লাইনকে ৪/৫ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে ১১টি পর্যন্ত চুলার অনুমোদন পেয়েছে। আর বাকী ৩০ শতাংশ সংযোগই গ্রাহকরা সম্পূর্ন অবৈধভাবে ব্যবহার করে যাচ্ছে। তবে গ্যাসের বিল পরিশোধের ভুয়া বই দ্বারা, আবার কেউ কেউ বই ছাড়াই দালাল-ঠিকাদার-গ্যাস কর্মকর্তাদের গ্যাস বিলের টাকা পরিশোধ করছে। কিন্ত টাকাগুলো সরকারী কোষাগারে জমা না হয়ে সিন্ডিকেটের মধ্যে আনুপাতিক হারে ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে। আর এই ভাগাভাগির একটি মোটা অংশ হাতিয়ে নিচ্ছে কোটিপতি ওয়েল্ডার ইসমাইল। ফতুল্লা গ্যাস অফিসের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় তার অধীনে অন্তত শতাধিক বাড়ীতে অবৈধ সংযোগ রয়েছে বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করে। যেখানে প্রতিমাসে গ্যাসবিল বাবদ ১০ লাখ টাকা অধিক আদায় করা হয়। আর এই টাকার এক-তৃতীয়াংশের মালিক ইসমাইল। অর্থাৎ এই খাতে তার মাসিক আয় ২থেকে ৩লাখ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিতাসের এক কর্মচারী জানান, ফতুল্লার ওয়াসা সংলগ্ন ওসমান সাহেব রোড়ের মজিবর মিয়ার ৭তলা বাড়ীতে ২৮টি চুলায় অবৈধ উপায়ে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। ২৮টি চুলা জ্বালানোর জন্য ইসমাইলকে তিনমাস অন্তর অন্তর ৭৫ হাজার টাকা বিল দিতে হয়। মাঝে মাঝে গ্যাস অফিসের অফিসাররা এসে লাইন কেটে দেয়। আবার ইসমাইল লাইন চালু করে দেয়। গত ৩বছরে একাধিকবার এই বাড়ীর গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ইসমাইল সবকিছু ঠিকঠাক করে দিয়েছে। হেড অফিস থেকে অভিযান টিম আসার আগেই বাড়ীওয়ালাকে জানিয়ে দেয়া হয়, তখন লাইন খুলে রাখতে হয়। একই চিত্র দেখা গেছে চিতাশাল এলাকার নুরুল ইসলামের বাড়ী, দেওয়ান ফার্মেসীর বাড়ী, ইতালি কাসেমের বাড়ী সহ শতাধিক বাড়ীতে একই প্রক্রিয়ায় অবৈধ উপায়ে গ্যাস সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ইসমাইল ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
এব্যাপারে ইসমাইল প্রধান বলেন, এসব তথ্য আপনাকে কে দিয়েছে, তাকে নিয়ে আমার অফিসে আসেন। ম্যানেজারের সামনে এসে বলতে বলেন। ম্যানেজার স্যার সব কিছু জানে।

More News...

খাঁটি আওয়ামীলীগার সামিউলের অঢেল সম্পদ

অবৈধ সম্পদে লালেলাল ইঞ্জিঃ জামাল