পর্দ্দার অন্তরালে ৩শ কোটি টাকা ঘুষ বানিজ্যে ত্রিরত্ন নাহিদ আলম ভুঁইয়া

পর্দ্দার অন্তরালে ৩শ কোটি টাকা ঘুষ বানিজ্যে ত্রিরত্ন নাহিদ আলম ভুঁইয়া

পদোন্নতির অদৃশ্য বাজারে সচিবের চেয়ারের দাম শত কোটি টাকা! এনবিআর চেয়ারম্যান হওয়ার পথে কথিত ৩৯৫ কোটি টাকার আর্থিক চুক্তি : নেপথ্যের শক্তিশালী সিন্ডিকেটে ত্রিরত্ন নাহিদ ইসলাম, শফিকুল আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

ডেস্ক রিপোর্টঃ
প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের পদ এখন আর কেবল জোষ্ঠতা, যোগাতা বা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হচ্ছে না, এমন অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু সম্প্রতি বানিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানকে ঘিরে ওঠা এক চাঞ্চল্যকর তথ্য আবারও সেই অভিযোগকে সামনে নিয়ে এসেছে। অতিরিক্ত সচিব থেকে শুরু করে বাণিজ্য সচিব এবং সর্বশেষ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান হওয়ার প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে প্রায় ৩৯৫ কোটি টাকার আর্থিক চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্র বলছে, প্রথম ধাপে বাণিজ্য সচিব পদে যেতে মাহবুবুর রহমান প্রায় ৩৫ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব হওয়ার জন্য আরেক দফা চুক্তি হয়, যেখানে টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় ৬০ কোটি। সবশেষ ও সবচেয়ে বড় চুক্তিটি হলো এনবিআর চেয়ারম্যানের পদ পাওয়ার জন্য, যার পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, এই বিপুল অর্থ কয়েক ধাপে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল এবং তা নিশ্চয়তা রক্ষা করতে ব্যাংক চেক ব্যবহার করা হয়েছে। সাইফুল ইসলাম নামীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি নেপথ্যে থেকে এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। সূত্র জানায়, ওই চেকগুলোর কয়েকটিতে তার স্বাক্ষরও রয়েছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, এই বিশাল অঙ্কের অর্থ কোথায় যাচ্ছে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে তিনজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম, যারা প্রশাসনের ভেতরে তিন পান্ডব নামে পরিচিত। এরা হলেন- প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

অভিযোগকারীরা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রকল্প অনুমোদনের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলোতে ও এই সিন্ডিকেটের অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তাদের প্রভাবের কারণে প্রশাসনে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, পূর্ববর্তী সরকারের আমলেও তিনি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছেন বলে সমালোচনা আছে। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে তার গাড়িতে রাজউকের একজন এমএলএসএস কর্মচারী জাকির হোসেন সব সময় ঘোরাঘুরি করেন।

বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের যতরকম দালালী কাজ সেগুলো সচিবের পিএ এবং জাকির মিলে করে থাকেন। মাহাবুবের টাকা গ্রহনের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন জাকির হোসেন। এমনকি দেশে ইন্টারনেট বন্ধের মতো বিতর্কিত সিদ্ধান্তে তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, যদি এ ধরনের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে শীর্ষ প্রশাসনিক পদ নির্ধারণ হয়, তবে রাষ্ট্রীয় কাঠামো কতটা টেকসই থাকবে। প্রশাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার বদলে অর্থনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে সচিব বা চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হলে পুরো সিষ্টেম দুর্বল হয়ে পড়বে। তখন রাষ্ট্র পরিচালনায় জবাবদিহিতা, সুশাসন বা স্বাচ্ছতা কার্যত ধ্বংস হয়ে যাবে।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তার ভাষায়, আমার পদোন্নতি সম্পূর্ণ নিয়মমাফিক হয়েছে। কারও সাথে আর্থিক চুক্তির প্রশ্নই আসে না। এসব মিথ্যা প্রচারণা। সাইদুল ইসলাম নামের যিনি নেপথ্যে থাকার অভিযোগ রয়েছে, তার সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তথ্য বলছে, প্রশাসনের শীর্ষ পদে উঠতে যদি সত্যিই শত শত কোটি টাকার ‘চুক্তি সংস্কৃতি’ চালু হয়ে থাকে, তবে তা রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত ছাড়া কিছু নয়। সূত্র জানায়, ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে কিছু গোয়েন্দা সংস্থা প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে- এই অস্বচ্ছ লেনদেনের বিষয়গুলো কি আলোর মুখ দেখবে নাকি আবারও রাজনৈতিক প্রভাবের আড়ালে চাপা পড়ে যাবে।