পলাতক এআইজিপি রেজাউলের সম্পদের পাহাড়

পলাতক এআইজিপি রেজাউলের সম্পদের পাহাড়

মোঃ আহসানউল্লাহ হাসানঃ
খুনী হাসিনা পালানোর পরেই পালিয়েছে মীর রেজাউল আলম, বাংলাদেশ ট্যুরিষ্ট পুলিশের এডিশনার আইজি। বিপি নং-৬৯৯৫০৪৬৪৭৯। খুনী হাসিনার বিশ্বস্ত সৈনিক। মানবিক পুলিশকে দানবে পরিনত করার এক অসাধারন কারিগর। খুনী হাসিনার মসনদ রক্ষা পেলে পুরষ্কার হিসেবে পুলিশের আইজিপি হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। হাসিনার গুডবুকেই ছিলেন এই প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা। খুনী হাসিনার অর্ডার অনুযায়ী সব ধরনের কাজ করেছেন। ফলে একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে সবশেষ ট্যুরিষ্ট পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক হয়েছিলেন।

৫আগস্ট-২০২৪ ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ৯৮% পুলিশ সদস্য আত্মগোপনে চলে যান। পরবর্তীতে নতুন সরকারের আহ্বানে নিন্মস্তরের বেশীভাগ পুুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে যোগদান করলেও বড়সাইজের অনেকেই এখানো আত্মগোপনে রয়েছেন। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। আবার সরকার কোন কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছেন সরকার। তাদের একজন মীর রেজাউল আলম। তাকে দেশের কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে অষ্ট্রেলিয়া বা মালেয়শিয়া চলে গেছেন। শতকোটি টাকা আগেই পাঁচার করেছেন দেশের বাইরে। তবে দেশেও গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।

গ্রেড-১ এর নির্ধারিত একজন অতিরিক্ত আইজিপির মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা। সঙ্গে বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য মিলিয়ে মাসিক বেতন ১ লাখ ২০হাজার টাকা। পুলিশের একজন ডিআইজির বেতন তার থেকে ২০/৩০ হাজার টাকা কম। অন্যদিকে পঞ্চম গ্রেডের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বেতন সর্বসাকূল্যে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
৩০ বছর চাকরি করলে গ্রেড-ওয়ান পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা সর্বমোট সাড়ে ৪ কোটি টাকার মতো বেতন পান। কেউ কেউ শান্তি মিশনে দায়িত্ব পালন করে বাড়তি সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা আয় করতে পারেন। কিন্তু সংসারের খরচের পর ৩বা৪ কোটি টাকা সঞ্চয় করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। ফলে চাকরিতে থাকাবস্থায় এই আয় দিয়ে তাদের ৩/৪ কোটি টাকা খরচ করে একটি ফ্ল্যাট কেনাও অত্যন্ত কঠিন। সেখানে মীর সাহেবদের মতো এসব পুলিশ কর্মকর্তারা শতকোটি টাকার মালিক বনে যান কোন ম্যাজিকে।
সুত্র জানায়, পুলিশ বিভাগের টেন্ডার বানিজ্য, পুলিশের সরঞ্জাম কেনাকাটা, পূন:মেরামত ও সংস্কার, নির্মান, গ্রেপ্তার বানিজ্য, নিয়োগ ও বদলি বানিজ্য, অর্থের বিনিময়ে জমি দখল কার্যক্রম, বালু ব্যবসা, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, পুলিশের ঘুষ বানিজ্যের মাসোয়ারা আদায় সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে চাঁদা আদায় করে নজিরবিহীন অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে খুণী হাসিনার দানবীয় বাহিনীর প্রধান বেনজীর, মিয়া, মিজান, শহিদুল, মামুন-মনিরুলের মতো হাউন আঙ্কেলরা। এই তালিকায় তেমন একটা পিছিয়ে নেই অতিরিক্ত আইজিপি মীর রেজাউল আলম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের পাশাপাশি বিগত ১৬ বছর বিএনপি-জামাত সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুন ও দমন-পীড়নের মাষ্টারমাইন্ডদের পরীক্ষায় খুনী হাসিনার কাছে এ-গ্রেডে ছিলেন এআইজিপি মীর রেজাউল আলম। একারনে খুনী হাসিনার কাছ থেকে পেয়েছেন ধামাকা সব প্রোমশন। যার উপর ভর করে অবৈধ উপায়ে কামিয়ে নিয়েছেন শতশত কোটি টাকার সম্পদ। পিঠ বাঁচাতে রেজাউল আলম দেশে পালিয়ে গেলেও দেশে রেখে গেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
অনুসন্ধানে উঠে আসে এর লম্বা ফিরিস্তি। রাজধাণী উত্তরা ১০ নাম্বার সেক্টরের ৬ নাম্বার রোডের ১৩ নাম্বার আলিশান বাড়ীর মালিক এআইজিপি রেজাউল আলম। বাড়ী বর্তমান বাজার মূল্য ১০কোটি টাকার উপরে। নরসিংদীর ভাটপাড়া মৌজাধীন ৩৫৭৫নং জোতে জমির পরিমান ৫ একর ৩৮ শতাংশ। নরসিংদীর কামারচর মৌজাধীন ২০৮নং জোতে জমির পরিমান ১একর ১৫শতাংশ। নরসিংদীর নেহাব মৌজাধীন ১৯৪০নং জোতে জমির পরিমান ১৬শতাংশ। নরসিংদীর নগর পাঁচদোনা মৌজাধীন ৪৮৪নং জোতে জমির পরিমান ৮০শতাংশ। বাউনিয়া মৌজাধীন ১৫০/৮৮নং জোতে জমির পরিমান ৮.২৫শতাংশ। নরসিংদীর ভাটপাড়া মৌজাধীন ১৯১০, ৪৫৬৩, ৪৬৩২ ও ১৯৫৬নং জোতে জমির পরিমান ৬ একর ৭৭শতাংশ। রেজাউলের গ্রামের বাড়ী মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার চৌগাছি গ্রামে। ৫আগস্ট পট পরিবর্তনের পরবর্তী ১৮সেপ্টেম্বর তিনি মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সিডনি চলে গেছেন বলে সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে।

সূত্র জানায়, ঢাকায় একজন বিদেশি হত্যার ঘটনায় এক বিএনপি নেতা এবং তার পরিবারের কাছ থেকে কয়েক কোটি হাতিয়ে নেন দাপুটে পুলিশ কমর্কর্তা রেজাউল আলম। তিনি এই টাকা বিদেশে বসে ডলারে মাধ্যমে গ্রহন করতেন। জঙ্গিসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার নামে ব্যবসায়ী এবং বিরোধীদলের নেতাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। ঘুষের টাকা বিদেশ থেকে ডলার হিসেবে গ্রহন করতেন। মীর রেজাউল আলম পলাতক থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

 

More News...

খাঁটি আওয়ামীলীগার সামিউলের অঢেল সম্পদ

অবৈধ সম্পদে লালেলাল ইঞ্জিঃ জামাল