প্রশাসনকে আরও সক্রিয়ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ

প্রশাসনকে আরও সক্রিয়ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ
কূটনৈতিক প্রতিবেদক: দেশের চলমান নানান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বৈঠকে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সক্রিয়ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রাখার জন্য বলা হয়েছে, যাতে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। বৈঠকে আসন্ন দূর্গাপুজা, আসন্ন নির্বাচন, চলমান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনসহ সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত কিছুদিন কিছু ইনসিডেন্ট হয়েছে, সেটার আলোকেই রোববারের (৭ সেপ্টেম্বর) বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র, বিদ্যুৎ ও জ্বলানি, আইন, পরিবেশ, নিরাপত্তাসহ ১০ জন উপদেষ্টা, পুলিশের আইজিপি, প্রিন্সিপাল সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সকলেই তাদের নিজ নিজ মতামত প্রকাশ করেন।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে, বৈঠকে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সক্রিয়ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জুলাইকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল সেটা বজায় রাখতে জোড় দেওয়া হয়। বৈঠকে বলা হয় যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন নিবিড় সম্পর্ক বজায় থাকে এবং সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে নিরাপত্তাজনিত কোনো ঘটনা না ঘটে এজন্য সবাইকে এলার্ট থাকতে বলা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশের বিরুদ্ধে মনিটরিং জোরদার করতে হবে, নেপথ্যে যারা সক্রিয় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন দূর্গাপুজায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে নানা রকম ষড়যন্ত্রমূলক চেষ্টা হতে পারে। গত বছর দূর্গাপুজায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয় ভালো অভিজ্ঞতা ছিল, গত বছরের অভিজ্ঞতা যেন এই বছরও কাজে লাগাতে পারি।
প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়েছেন, যাতে এবার সব ধরনের নিরাপত্তা যেন আগেই নেওয়া হয়, যাতে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। সাম্প্রায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য দেশের সকল ধর্ম ভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ধর্ম উপদেষ্টা অতি শিগগির সবার সঙ্গে কথা বলবেন। ক্রমাগতভাবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি মনিটরিং করার জন্য বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের আগাম প্রস্তুতি রাখতে হবে। ডাকসু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকের আলোচনায় আসে যে, পতিত ও পরাজীত ফ্যাসিবাদি শক্তি যখনই দেখছে যে দেশ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জুলাইয়ের হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া যতই এগিয়ে যাচ্ছে ততই তারা ডেসপারেড এবং বেপরোয়া হয়ে পড়ছে। এর ফলে তারা দেশের সার্বিক শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার জন্য, গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করার জন্য সকল শক্তি নিয়ে মাঠে নামছে। এটা এখন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নয়, এটা এখন জাতীয় ইস্যূ হয়ে দাড়িয়েছে। দেশের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে নূন্যতম ছাড় দেওয়া হবে না। সরকার মনে করে, দেশের স্বার্থে, জনগনের স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন নিয়ে প্রেস সচিব বলেন, এছাড়া পল্লী-বিদ্যুতের সমস্যা বিষয়ে দুইটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে। বদলীকৃতদের আগের জায়গাতে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত আদেশগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের কর্ম বিরতির কোনো প্রয়োজন নাই বলে অর্ন্তবর্তী সরকার মনে করে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দেশবিরোধী শক্তি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনে ইন্ধন দিচ্ছে। সরকার এদের বিরুদ্ধে ব্যস্থা নিচ্ছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বিষয়ে সরকার সহনশীল কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ বা গ্রহকসেবা ব্যাহত হলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
গত শুক্রবার রাজবাড়ীতে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে ওই ঘটনা সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানাতে প্রেস সচিব উপ-প্রেসসচিবকে বলতে বলেন। উপ-প্রেস সচিব বলেন, রাজবাড়ি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আজ পর্যন্ত এই ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দরবারে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়া ও পুলিশের ওপর হামলা এই চার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে যিনি কবর থেকে লাশ উত্তোলন করেছেন তার নাম কাজী অপু, তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এই সাতজনের মধ্যে অন্তত দুইজন আছেন যারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তাদের একজন হলেন গোয়ালন্দ ঘাট থানা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হিরু মৃধা, আরেকজন উজানচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ মৃধা। পুরো ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় যাদেরই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে।
আজ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যে বৈঠক হয়েছে সেখানেও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপদেষ্টাদের অবহিত করেছেন, স্থানীয় ইমান আকিদা রক্ষা কমিটি জেলা প্রশাসনের সাথে দুইবার এবং উপজেলা প্রশাসনের সাথে বেশ কয়েকদফা সভা করেছিলেন। সভা করে তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অনুমতি নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা উশৃঙ্খল হয়ে উঠেছিলেন, তারা কথা রাখেননি। এই বিষয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানতে চাওয়া হয় যে বৈঠকে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে কী বলা হয়েছে, সন্তোষজনক নাকি উদ্বেগজনক। জবাবে প্রেস সচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে উন্নতি হয় সেজন্য সরকার সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। আপনাদের বুঝতে হবে বিক্ষোভ কর্মসূচিসহ ৫ আগস্টের পর ১ হাজার ৬১৫টার মতো ঘটনা ঘটেছে। গড়ে প্রতিদিন ৪টি করে ঘটনা ঘটেছে বা বিক্ষোভ হয়েছে। তার মধ্যে ৬০০টি ঘটনা ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত। একটা বিপ্লবের পড়ে যে চাওয়া তৈরি হয়েছে সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে সবাই বিক্ষোভ করছেন। সবাই তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে রাস্তায় আসছেন। যেহেতু আগের সরকার গত ১৫ বছর নিপীড়ন করেছে, এই ধরনের বিক্ষোভকে দমন করেছে, তাই এখন সবাই তাদের দাবি দাওয়াগুলো এই সরকারের সময় আনছেন। এই সরকার এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনী যথেষ্ট ধৈর্যের সঙ্গে এই বিষয়গুলো মোকাবিলা করছে।
নির্বাচন সম্পর্কে প্রেস সচিব বলেন, যেভাবে হোক ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে। পৃথিবীর কোনও শক্তি এই নির্বাচন ঠেকাতে পারবে। নির্বাচন হবে এবং সেই বিষয়ে যত ধরনের প্রস্তুতি লাগে সেগুলো নেওয়া হচ্ছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটলে সরকারের দায়িত্ব নিন্দা জানানো। এটা যেকোনো দেশের যেকোনো সরকারের যেকোনো ঘটনার ক্ষেত্রে যেসবের নিন্দা জানানো উচিত, সেটা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এখন যদি এই ধরনের ঘটনা কেন ঘটছে জানতে চান, তাহলে বলি— রাজবাড়ীর ঘটনায় সেখানকার ডিসি দুইবার মিটিং করেছেন, টিএনও বেশ কয়েকবার সেখানকার ইমান আকিদা কমিটির সঙ্গে কথা বলেছেন। এখন স্থানীয় পর্যায়ে তাদের সঙ্গে বারবার মিটিং করা হচ্ছে, প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তারা তাদের প্রতিশ্রুতির কথাও বলেছেন যে, তারা তাদের বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ রাখবেন। তারপর যে ঘটনা ঘটলো, এটা খুবই ন্যাক্কারজনক একটি ঘটনা। এটা তো সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে সেটার নিন্দা জানানো। সরকারের যে বলিষ্ঠ কণ্ঠ সেটা তো বলতে হবে। আর প্রত্যেকটা ঘটনায় আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এমন না যে বসে থাকা হচ্ছে। নুরুল হক নুরের ঘটনায় আমরা ঘোষণা দিয়েছি, একটা তদন্ত কমিটি হয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখবে কীভাবে হলো, কার এখানে দোষ ছিল, কেন এই ঘটনা ঘটলো।