সাব্বির কাজী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরে ফের বেড়েছে জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য। একের পর এক ঘটছে ট্রলার ডাকাতির ঘটনা। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুটে নেয়া হচ্ছে ট্রলার, মাছ ও জ্বালানি তেল। জীবিকার তাগিদে প্রতিনিয়ত জীবননাশের শঙ্কা নিয়েও মাছ শিকারে যাচ্ছেন জেলেরা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ শিকার শেষে তীরে ফিরছিলেন ‘এফবি মা’ নামের একটি ফিশিং বোট। পায়রা বন্দর সংলগ্ন সাগর মোহনায় এসে পৌঁছালে একদল জলদস্যু তাদের ট্রলারে বন্দুক দিয়ে ছররা গুলি চালায়। এতে ট্রলারে থাকা জেলে জালাল শরীফ, শাহ আলম ও মিজানুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। এসময় বাকি জেলেদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রলারে থাকা ইলিশ ও জ্বালানী তেল সহ পাঁচ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এছাড়াও সম্প্রতিকালে সমুদ্রে জেলে ট্রলারে হামলা ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জেলেদের কাছ থেকে মাছ লুটের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে বলে জানান জেলেরা।
বঙ্গোপ সাগরে নতুন করে জলদস্যুদের উৎপাত বাড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন জেলেরা। তবুও পেটের দায়ে জীবননাশের শঙ্কা নিয়ে সমুদ্রে মাছ শিকারে যাচ্ছেন তারা।
জেলেরা জানান, ফিশিং বোট নিয়ে সমুদ্রে চলাচল করে জলদস্যুরা। ট্রলার দেখে বোঝার উপায় নেই যে কোনটা জেলেদের ট্রলার আর কোনটা ফিশিং বোট। জেলেদের বেসে এসে হঠাৎ করে তারা হমলা চালায়। গুলি করে আতঙ্ক ছড়িয়ে মাছ, জ্বালানি তেল, জাল ও ট্রলার লুট করে নিয়ে যায়।
সমুদ্র উপকূলের নিকটবর্তী এলাকায় জলদস্যুরা হামলা চলালেও প্রশাসনের তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা।
পটুয়াখালী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল জানান, জেলে ট্রলারে জলদস্যুদের হামলার ঘটনা শোনা যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার যে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে তিন জন জেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আমরা আহত জেলেদের খোঁজ খবর নিয়েছি। তাদেরকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। সেই সঙ্গে দস্যু গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করবে। সমুদ্র নিরাপদ রাখতে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি সমুদ্রে জলদস্যুদের উৎপাত বেড়েছে। জেলে ট্রলারে হামলা করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে দস্যুরা। কিছু জেলে আহত হয়েছে। আমরা তাদের বাড়িতে খোঁজ খবর নিয়েছি। জেলেদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। পাশাপাশি সমুদ্রে মাছ শিকারী জেলেদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। জলদস্যু হামলা থেকে রক্ষায় সমুদ্রে সকল জেলেদের একসঙ্গে থেকে মাছ শিকারের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ থেকে মাছ শিকার করলে হামলা করতে সাহস পাবেনা।
একসময় সুন্দর বন সহ উপকূলীয় এলাকা ছিলো জলদস্যুদের কবলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অভিযানের ফলে গত কয়ে বছর সমুদ্র অনেকটা নিরাপদ থাকলেও সম্প্রতি এক মাস ধরে আবারও বেড়েছে জলদস্যুদের উৎপাত।
সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলা পটুয়াখালীর অধিকাংশ মানুষই মৎস্য পেশার ওপর নির্ভরশীল। এ জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৮৬ হাজার। এর বাইরেও অর্ধলাখ মানুষ মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন।