বিআরটিসির কর্মকর্তা মাসুদ তালুকদারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টারঃ
বিআরটিসির ঢাকা ট্রাক ডিপোর ম্যানেজার মাসুদ তালুকদারের বিরুদ্ধে পেট্রোল পাম্প থেকে কমিশন বাণিজ্য, গাড়ীর টায়ার টিউব, লুব্রিকেন্ট, তেল-গ্যাস, কম্প্রেসার কেনা, ট্রাক মেরামত, ডিপোর নির্মাণ ও সংস্কার সহ যাবতীয় দিক নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগকারীরা বলছেন, মাসুদ তালুকদার ইতিপূর্বে যে সকল ডিপোর দায়িত্ব পালন করছেন, ওই সকল ডিপোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে অনিয়ম-দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন। ঢাকার যাত্রীবাড়ি বাস ডিপো ও কুমিল্লা বাস ডিপোতে দায়িত্ব পালনকালে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল। ওই মামলার একটিতে তাকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল।
সংস্থাটির একাধিক গাড়ীচালক ও কন্ডাক্টর জানিয়েছেন, ঢাকা ট্রাক ডিপোর ম্যানেজার মাসুদ তালুকদারের বিরুদ্ধে পেট্রোল পাম্প থেকে কমিশন বাণিজ্য, বাসের ট্রিপ চুরি, চুঙ্গি আদায়, খাতায় রাজস্ব আয় কম দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, বাস-ট্রাক মেরামতের নামে টাকা লুটপাটের অভিযোগ একাধিকবার হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং কর্পোরেশনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বারবারই ছাড় পেয়ে গেছেন। ট্রিপ চুরি, রাজস্ব লুট, রক্ষণাবেক্ষণের নামে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো, দরপত্র ছাড়া নির্মাণ ও মেরামতের কাজে নিজের পছন্দের লোক দিয়ে করানোর অভিযুক্ত এমন কর্মকর্তাকে শাস্তি না দিয়ে উপহার স্বরূপ বদলি করায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা জানান, বাসের ট্রিপ চুরি, যন্ত্রাংশ কেনার নামে অতিরিক্ত ব্যয় ও নিজের পকেট ভারী করেছেন ডিপো ম্যানেজার মাসুদ তালুকদার ও তার সিন্ডিকেটের লোকজন। ডিপোতে যানবাহন মেরামত ব্যয়, গাড়িতে অতিরিক্ত জ্বালানি তেল ব্যবহারসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগও রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
কাউন্টার সংস্কার কাজে টেন্ডার আহবান না করে পছন্দের লোক দিয়ে কাজ করিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করছেন ওই ডিপোর এক কর্মচারী। এছাড়াও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের এক কর্ণধার ও একই অভিযোগ করেছেন। সংশোধিত দরপত্রে সিডিউল কিনতে গেলে সিডিউল না দেওয়ার অভিযোগ করছেন ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া মতিঝিল বাস ডিপোর দূরপাল্লায় চলাচলের গাড়ীর সামনের চাকাতেও রাবার টায়ার ব্যবহারের অভিযোগ আছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক বলেন, ম্যানেজার মাসুদ তালুকদার দূরপাল্লার বাসের সামনের চাকাতে রাবার টায়ার ব্যবহার করে বছরের পর বছর গাড়ী চালিয়েছেন। এসব টায়ারের নতুন বিল দেখিয়ে রাবার টায়ার ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করছেন মতিঝিল ডিপোর অনেক চালক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক চালক বলেন, দূর পাল্লার বাসের সামনের চাকার রাবার টায়ার ব্যবহার নিষেধ থাকলেও ম্যানেজার মাসুদ তালুকদার তা মানেননি। তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সচিবালয়ের এক অনুষ্ঠানে দুটি বাস রাস্তায় বিকল হয়। তাছাড়া জোড়াতালি দিয়ে গাড়ী চালানোর জন্য গাড়ীতে অতিরিক্ত তেল অপচয় হয়। যা চালকদের বেতন থেকে মাস শেষে কর্তন করার কথা বললেন এ চালক।
এসি বাসের ইঞ্জিন বাইরে বিক্রি করে ওই বাসে টিসি বাসের ইঞ্জিন যুক্ত করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন কমলাপুরের বাসিন্দা মো. শহিদুল ইসলাম। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, মতিঝিল বাস ডিপোর সাবেক ম্যানেজার মো. মাসুদ তালুকদার ওই ডিপোতে কর্মরত তার চাচাতো ভাই আমজাদকে দিয়ে অশোক এসি বাসের ইঞ্জিন যার নম্বর (ব-১১-৬৭৯৮) বাইরে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করে ওই বাসে টিসি ইঞ্জিন লাগিয়ে রাখেন। এক পর্যায়ে নিজের দুর্নীতি ঢাকতে বাসটি অকেজো তালিকায় যুক্ত করে হেড অফিসে নোট পাঠান বলে জানান অভিযোগকারী। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে মতিঝিল বাস ডিপো থেকে জোয়ারসাহারা বাস ডিপোতে বদলী করা হয়। হাসিনা সরকার পরিবর্তনের পরে তিনি খোলস পাল্টিয়ে জোয়ারসাহারা বাস ডিপোতে থেকে পদায়ন নিয়ে ঢাকা ট্রাক ডিপোতে যোগদান করেন।
অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে মুঠোফোনে মাসুদ তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। গাড়ীর ইঞ্জিন বিক্রি প্রসঙ্গে বলেন, এসি গাড়ীর ইঞ্জিনের স্থলে টিসি গাড়ীর ইঞ্জিন লাগানো যায় না। তাছাড়া এসি গাড়ীর ইঞ্জিনের যে ছাঁচ তাতে টিসি গাড়ীর ইঞ্জিন লাগানো সম্ভব নয়। যে গাড়ীর ইঞ্জিন বিক্রির অভিযোগ করা হয়েছে ওই গাড়ীটি এখনো মতিঝিল বাস ডিপোতে আছে। গাড়ীটি দেখতে চাইলে মতিঝিল ডিপোতে আসতে পারেন।