বিডিআর বিদ্রোহের শহীদ দিবস ঘোষণা ও উদযাপন নয়, প্রকৃত অপরাধীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন
বিশেষ প্রতিনিধি:
বিগত ০৮ জানুয়ারী, ২০২৫ রোজ বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিন দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসুচী পালন করে সারাদেশে চাকরীচ্যুত বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সদস্যবৃন্দ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সদস্যবৃন্দের তিন দফা দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বলেন- “যদি ন্যায়বিচারের কোন ইঙ্গিত না দেখি” তাহলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার শাহবাগ ব্লকেড করব। অতঃপর, বৃহস্পতিবার ঘন্টাব্যাপী শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচী পালন করে আবার চাকরীচ্যুত বিডিআর সদস্যবৃন্দরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে বাড়ি ফিরে যান। সারা দেশের বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সদস্যবৃন্দের অবস্থান কর্মসূচীতে তিন দফা দাবিগুলো নিম্নরুপঃ
১। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০০৯ ফ্যাসিস্ট হাসিনা ষড়যন্ত্রের শিকার পিলখানাসহ সারা দেশে চাকরীচ্যুত সকল বিডিআর সদস্য ও পরিবারকে পূনঃবাসন পূর্বক চাকরীতে পূনঃবহাল।
২। দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত জেলবন্দি সকল বিডিআর সদস্যদের জেল হতে মুক্তি।
৩। জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে পিলখানা হত্যাকান্ডের প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতকরণ।
অবশেষে ঐসব দাবীগুলোর প্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০২৫ রোজ মঙ্গলবার প্রথমবারের মত ২০০৯ সালে ঘটে যাওয়া ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী বিডিআর বিদ্রোহের সময় মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। তন্মধ্যে ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তা রয়েছে। ঐসব শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে “জাতীয় শহীদ সেনা দিবস” উদযাপন করা হয়। এ সম্পর্কে রাজধানী ঢাকার মহাখালীর রাওয়া মিলনায়তনে ২৫ ফেব্রুয়ারী দুপুরে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত হয়ে আহবান জানিয়েছে- “এখন পরিবেশ হয়েছে। দেশ তদন্ত কমিশনের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশের অমূল্য সম্পদ বিডিআর বিদ্রোহের সময় ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকারীদের নিরাপদে রাখার কোন সুযোগ নেই। এর পিছনের কুশীলবদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে”। আর এদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসও ২৫ ফেব্রুয়ারী রোজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে বলেন-“পিলখানা হত্যার সুবিচার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ দায়বদ্ধ”। ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০২৫ রোজ মঙ্গলবার জাতীয় শহীদ সেনা দিবস পালন উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ন্যাপ ভাসানী ও ছাত্র-জনতার বিপ্লব আদর্শ বাস্তবায়ন পরিষদ যৌথ আয়োজনে ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান বঙ্গদ্বীপ মোসতাক আহমেদ ভাসানী এক মানব বন্ধনের সভাপতির বক্তব্যে বলেন “শেখ হাসিনা নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তাঁর ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ভাবে বিদেশী শক্তির ইঙ্গিতে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারকে বিডিআর বিদ্রোহের নামে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। তিনি আরো বলেন-এ দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করে সিকিম বানানোর একটি পরিকল্পনাও ছিল। শেখ হাসিনা সকল প্রকার অনিয়ম, নির্বাচনে কারচুপি, হত্যা, গুম, খুন, সন্ত্রাস, দুর্নীতির মধ্য দিয়ে গোটা জাতিকে জিম্মি করে রাখে। যেখানে কোন ভোটাধিকার ছিল না, মানবিকতা ছিল না, আইনের শাসন ছিল না। এক কথায় বলতে গেলে কোন কিছুই সঠিক বালাই ছিল না। পরিশেষে এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সর্বোচ্চ বিচার দাবি করছি। তা নাহলে এ ঘটনার আবারো পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। সেদিন বিদেশী শক্তির উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন বিডিআর ও সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেওয়া আর বাহিরে বসে হাততালি দেওয়া ও বগল বাজানো। আমরা সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীকে আধুনিকীকরণ ও শক্তিশালী করার আহবান জানাই। আমরা পারমাণিক ক্ষমতাসম্পন্ন রাষ্ট্র দেখতে চাই। সকল স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রী সামরিক প্রশিক্ষণের দাবি জানাই”। এদিকে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উদযাপনকালে রাওয়া মিলনায়তনে শহীদ মেজর মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী রিতা রহমান জুলি বলেন- “আমরা খুব বেশি কিছু চাইনি। চেয়েছি শহীদী মর্যাদা, ও বিচারটা সুষ্ঠুভাবে হোক। যারা দোষী তারা যেন সামনে আসে, যেন সুষ্ঠু বিচার হয়। শহীদ সেনা দিবসের দাবি পূরণ হয়েছে। সুষ্ঠূ তদন্তের জন্য যেহেতু কমিশন গঠন হয়েছে, আমরা আশার ওপরই বেঁচে আছি। আশায় বেঁচে থাকতে হবে। আশ্বস্ত হচ্ছি বিচার হবে, মানুষ জানবে ঘটনার নেপথ্যে কারা ছিল”।
রোজ মঙ্গলবার শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অন্তর্বতীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অবঃ) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন- আমাদের ৫৭ জন অফিসার শাহাদাত বরণ করেছেন। সব মিলিয়ে ৭৪ জন শাহাদাত বরণ করেছেন। তাদের আত্মার মাগফেরাতের জন্য এসেছি। এটা প্রতি বছরই আসা হয়। কিন্তু এবার একটু ডিফারেন্ট। এবার শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা শহীদ সেনা দিবসে এখানে এসেছি। শহীদ পরিবাররাও আসছে। তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। সর্বোপরি আমাদের দাবী, বিগত দিনের তিন দফা গুলি পূরণের মাধ্যমে বিডিআর বিদ্রোহে ঘটিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আর ন্যায়বিচার নিশ্চিতের প্রথম ধাপ হিসেবে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা ও উদযাপন করা হয়েছে। সবশেষ জাতীয় শহীদ সেনা দিবস ঘোষণার মাধ্যমে আমরা অপরাধীদের একটা চপেটাঘাত করেছি এবং যেকোনো মূল্যে ঐসব চপেটাঘাত কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হবে।