রাজস্ব কর্মকর্তা দর্জি রুবেলের সীমাহীন দুর্নীতি : অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য (পর্ব-৩)
অনুসন্ধানী প্রতিবেদক :
রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন তো দূরের কথা, বছরের পর বছর দাপ্তরিক ক্ষমতার অপব্যবহার, অস্বচ্ছ লেনদেন আর রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় রাজস্ব কর্মকর্তা দর্জি রুবেল গড়ে তুলেছেন এক অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি বেতন-ভাতার সঙ্গে তাঁর জীবনযাত্রার আকাশছোঁয়া ব্যয়ের কোনো মিল নেই। নিয়মিত ঘুষ গ্রহণ, ফাইল আটকে রেখে সুবিধা আদায়, প্রভাব খাটানো—এসবই তাঁর দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে।
আয়-ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৈষম্য
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, দর্জি রুবেলের ঘোষিত আয়ের সঙ্গে তাঁর আর্থিক লেনদেন ও জীবনধারার কোনো মিল নেই। বিলাসবহুল বাড়ি, দামি গাড়ি, বিপুল ব্যাংক হিসাব, নানা জায়গায় জমি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান—সবই তাঁর অবৈধ আয়ের ইঙ্গিত বহন করছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে তিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ঘুষ ও অনৈতিক সুবিধা আদায়কে নিয়মিত চর্চায় পরিণত করেছেন।
রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় দাপট
কেবল দপ্তরের ভেতরেই নয়, রুবেল ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণে তিনি দীর্ঘদিন দায়মুক্ত থেকে দুর্নীতির জাল বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে আঁতাত রয়েছে, যা তাঁকে আরও অদম্য করে তুলেছে।
সাংবাদিকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা
যখনই তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়, তখনই রুবেল মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে সাংবাদিকদের নরম করার চেষ্টা চালান। এমনকি অনেককে নিজের প্রভাব বলয়ের মধ্যে নিয়ে এসে গড়ে তুলেছেন একধরনের সুরক্ষা চক্র। এর ফলে গণমাধ্যমে তাঁর দুর্নীতির কাহিনি দীর্ঘদিন চাপা পড়ে থেকেছে। সাংবাদিক সমাজে অর্থবিত্ত দিয়ে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ নতুন নয়, তবে রুবেলের ক্ষেত্রে তা আরও সুপরিকল্পিত বলে অভিযোগ উঠেছে।
তদন্তের দাবি তীব্রতর
প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন সংস্থার একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মতে, দর্জি রুবেলের বিরুদ্ধে যদি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালিত হয়, তাহলে অবৈধ সম্পদ ও দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসবে। স্থানীয় সাধারণ মানুষের ভাষ্য—একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও যিনি এত বিশাল অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন, তাঁর বিচার না হলে প্রশাসনের প্রতি আস্থা আরও নষ্ট হবে।
বর্তমানে দর্জি রুবেল নোয়াখালীতে কর্মরত আছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন নাগরিকরা—“এমন প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কবে নেওয়া হবে কার্যকর ব্যবস্থা?