নগর প্রতিবেদকঃ
বিগত ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪ রাত প্রায় ৩.৩০ ঘটিকার সময় টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার মাঠে জোড় ইজতেমা কেন্দ্রিক কর্মকান্ড পরিচালনার লক্ষ্যে মাওলানা জোবায়েরপন্থীদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সাথীবৃন্দের মধ্যে হামলা, ভাঙচুর ও ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে আক্রমণ করলে, সে ঘটনায় মোট ৪ জন সাথী নিহত ও শতাধিক আহত হন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পরদিন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা পরিষদ ও সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট হামলার ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিশেষত বিদেশী মেহমানদের সম্মান রক্ষার্থে শুধুমাত্র এ বছর টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার মাঠে ইজতেমা করার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধের প্রেক্ষিতে আগামী ফেব্রুয়ারী ১৪-১৬, ২০২৫ বিশ্ব ইজতেমা করার অনুমতি প্রদান করা হয়। যদিও মাওলানা সাদপন্থিদের ইজতেমার করার ক্ষেত্রে মাওলানা জোবায়েরপন্থিদের ব্যাপক আপত্তি রয়েছে। শুধু আপত্তিই নয়, তাঁরা রবিবার ০৯-০২-২০২৫ জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে মাওলানা জোবায়েরপন্থি ওলামা-মাশায়েখ বাংলাদেশ ও তাবলীগের সাথীবৃন্দের আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বেশ কয়েকটি দাবিও তুলে ধরেন। ঐসব দাবি গুলোর মধ্যে সাদপন্থিদেরকে খুনি হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং টঙ্গী পবিত্র বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে ভন্ডামি করার সুযোগ না দেওয়ার জোর দাবি জানান। অধিকন্তু টঙ্গীতে ইজতেমার গোলযোগে হত্যাকান্ড জড়িত আসামীদের আগাম জামিন দেওয়ার জন্য তওহীদি জনতার পক্ষ থেকে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাথে সাথে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকৃত পলাতক খুনীদের গ্রেফতার ও গ্রেফতারকৃতদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছে। অন্যথায় তাঁরা কোনো ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনার দায়-দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত নন। এদিকে মাওলানা সাদপন্থিদের সম্পর্কে বারবার হামলা, ভাঙচুর, মিথ্যা মামলা ও নির্মম হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় বিগত ১লা ডিসেম্বর, ২০১৮ ও ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪। এদিকে মাওলানা জোবায়েরপন্থিরা হযরত মাওলানা সাদ সাহেব সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণাসহ অপদস্ত করেন এবং তাকে নবী বিদ্বেষী বলে আখ্যা দেয়া হয়। হযরত মাওলানা সাদ দারুল উলুম দেওবন্দ সমন্ধে যতটুকু বলেছেন- দয়া করে ততটুকুই আপনি বলতে পারেন। এর বাহিরে আপনারা মনগড়া বানোয়াট কিংবা অপপ্রচারমূলক কিছু বলতে পারেন না। ভারতীয় মাওলানা সাদ সাহেবের জিম্মাদারীত্বে বুলন্দ, ভূপাল, কার্নেল ও আওরঙ্গবাদের মতো এলাকায় বড় বড় ইজতেমা পরিচালিত হয়েছে। ঐসব ইজতেমাগুলিতে দেওবন্দ ও ভারতের প্রায় সব মাদ্রাসার শুরায় ও লাখের কাছাকাছি ওলামা-মাশায়েখ, হযরত অংশগ্রহণ করেন। এক কথায়, মাওলানা সাদ সাহেব সম্পর্কে ঐসব ইজতেমায় কেউ কোনো ধরণের আপত্তি করে নাই। “এমনকি দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি আবুল কাশেম নোমানী সাহেব এবং শিক্ষক ও পরিচালক হযরত মাওলানা আরশাদ মাদানী সাহেব উভয়ই বলেছেন-দারুল উলুম দেওবন্দ তাবলীগের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো পক্ষে কথা বলবে না। আমাদের উলামায়ে কেরামগণও কথায় ও কাজে দারুল উলুম দেওবন্দের সাথে ঐক্যমত পোষণ করেন”।
বাংলাদেশে হজ্বের পর মুসলিম বিশ্বের জন্য টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত। যেখানে মহান আল্লাহ তায়ালার নৌকট্য লাভের উদ্দেশ্যে কোনো দুনিয়াবী চাওয়া পাওয়ার বাহিরে থেকে দল মত নির্বিশেষে সকলের জন্য কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক ইবাদত বন্দেগী ও দ্বীনিই আমল কায়েম করা। কিন্তু সেখানে কেন হামলা, ভাঙচুর, মামলা, খুন-খারাবী ঘটছে? ইসলাম ধর্মে কোথাও মাওলানা জোবায়েরপন্থী কিংবা মাওলানা সাদপন্থীদের তাবলীগের কর্মকান্ড পরিচালনা করার কোনো বিশেষ নির্দেশ নেই। আমাদের চাওয়া রাজনীতি মুক্ত তাবলীগ জামাত পরিচালনা করা। আজকের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরিচালিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নিম্ন লিখিত বিষয়াদির প্রতি নজর দেওয়াই সময়ের দাবি।
যদি বাংলাদেশে তাবলীগ জামাত পরিচালনা করার ক্ষেত্রে দুই পক্ষ থাকে তাহলে উভয় পক্ষই সমতার ভিত্তিতে জামাত পরিচালনা করবে।
এমনকি কাকরাইলের মালওয়ালী মসজিদের পক্ষদ্বয়ের অবস্থান ও ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করতে হবে।
এ বছরের ন্যায় ভিন্ন ভিন্ন তারিখে উভয় পক্ষ তাবলীগ জামাতের কর্মকান্ড পরিচালনা করবে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মসজিদে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে তাবলীগের কর্মকান্ড পরিচালনা করার ক্ষেত্রে কোনো ধরণের বাধা দিতে পারবে না। আর যদি বাধা দেয় তাহলে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন।
মাদ্রাসার ছাত্র কিংবা মসজিদের মুসল্লিদের তাবলীগের কর্মকান্ডে জোর করা যাবে না।
কোনো ধরণের রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ডে তাবলীগ জামাতকে সম্পৃক্ত করা যাবে না।
যদি কেউ স্বেচ্ছায় তাবলীগ জামাতের কর্মকান্ডে নিয়োজিত হয়, তাহলে তাবলীগ জামাতের লোকেরা তাদেরকে অবশ্যই সহযোগীতা করবে।
তাবলীগের আড়ালে কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা যাবে না।
সর্বোপরি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তত্ত্বাবধানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মনীতি মেনে উভয়পক্ষ কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক তাবলীগ জামাতের কর্মকান্ড পরিচালনা করবে।