মুরাদ হোসেন মুসাঃ
ঘুষ আর সরকারী কর্মকর্তা যেন একই মায়ের পেটের জমজ ভাই। একটি ছাড়া আরেকটি সম্পূর্ন অচল। চাকুরী নিতে গেলে ঘুষ লাগে। আবার চাকুরী হওয়ার পরে সেই ঘুষের টাকা সুদে আসলে উঠিয়ে নিতে ঘুষ খাওয়া লাগে। এতো টাকা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়েছি এই কথাটি কেউ স্বীকার না করলেও চাকুরীটা হারানোর ভয়ে নিজেরটা গোপন রেখে অন্যের বেলায় মুখ উচিয়ে ঠিকই বলতে শোনা যায়, “ঘুষ ছাড়া এদেশে চাকুরী পাওয়ার দিন হারিয়ে গেছে”। একারনে ঘুষ ছাড়া চলেই না কোন অফিসের ফাইল। ছোট থেকে বড় কর্তা সবাই ঘুষের বিনিময়ে গ্রাহক সেবা দিচ্ছেন ক্লান্তিহীনভাবে। বেতনের চাইতে অর্জিত সম্পদের পরিমানটা বেশী হলেই ঘুষ-দুর্নীতির তকমাটা নামের আশেপাশে ঘুরতে থাকে। একসময় ঘুষ-দুর্নীতির রহস্যটা বেরিয়ে আসে। এই যেমন রাজস্ব কর্মকর্তা মতির মতিগতি দেখে মনেই হয় নাই দুনিয়ার সব সুখ-সম্পদ রয়েছে তার পরিবারে। তবে মতিউর উড়ে গেছে, রয়ে গেছে তার শিষ্য শামীম আল মামুন। ট্যাক্স ফাইলে সাড়ে ৩ কোটি টাকার হিসাব দেখানো এই কর্মকর্তার চৌদ্দগোষ্ঠির সবাই আমেরিকায় থাকেন। শুধু তিনিই রয়ে গেছেন এদেশে। কাষ্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ, ডেমরা অফিস থেকে সম্প্রতি বদলি হয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদর দপ্তরে যোগদান করেছেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শামীম আল মামুন।
ঘুষের বিনিময়ে চলে কাষ্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়া। ঘুষের বিনিময়ে প্রকৃত তথ্য গোপন রেখে রাজস্ব আদায় করে থাকে এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একাধিক সুত্র থেকে এদের মধ্যে সাবেক ডেমরা বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শামীম আল মামুনের নামটিও উঠে এসছে। আওয়ামী দাপটে সেবাগ্রহীতার ফাইল আটকিয়ে আদায় করতেন মোটা অংকের টাকা। যার সত্যতা মিলে তার সম্পদ অর্জনের ফিরিস্তি দেখলে। তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মোহম্মদী হোমস আ/বা প্রধান সড়কের বি ব্লকে ৭ নাম্বার বাড়ীর ৪/ডি নং ফ্ল্যাটের মালিক। যার বর্তমান বাজার মূল্য অন্তত ৩ কোটি টাকা। তার নিজ নামে ধানমন্ডি সার্কেলের রামচন্দ্র মৌজার ২৬৫৬০ নং খতিয়ানে জমির পরিমান ০.৬৬ শতাংশ এবং একই মৌজায় ২৬৫৫৯ নং খতিয়ানে জমির পরিমান ০.০০৫৮ শতাংশ। যার বর্তমান বাজার মূল্য কোটি টাকার উপরে। ভাইয়ের নামে অর্ধকোটি টাকার মূল্যের টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ী। গাড়ীর নাম্বার ঢাকা মেট্টো-ঘ-২২-০২৬৬। গ্রামের বাড়ী টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানাধীন হাদিরা বাজার গ্রামেও রয়েছে আলীশান বাড়ী ও শতবিঘা জমি। তার আয়কর নথিতেও রয়েছে সাড়ে ৩ কোটি টাকা হিসাব-নিকাশ। ট্যাক্স ফাইল-৭১৯৭৮০৬০৩১৭৮। এছাড়া তার ভাই-বোন সহ আত্মীয় স্বজনেরাদের বেশীর ভাগই আমেরিকাতে স্যাটেল্ড।
এব্যাপারে শামীম আল মামুন বলেন, আমার ট্যাক্স ফাইলে সাড়ে ৩ কোটি টাকা সম্পদের হিসেব দেয়া আছে। আমার পরিবারের সবাই উচ্চ শিক্ষিত, সবাই আমেরিকাতে স্যাটেল্ড। আর কিছু জানতে চান। আপনার পত্রিকা কত কপি চলে।