এলজিইডির সাখাওয়াতের ৩শ কোটি টাকার সাম্রাজ্য

এলজিইডির সাখাওয়াতের ৩শ কোটি টাকার সাম্রাজ্য
Print

ফারহান আব্দুল্লাহ ॥
ফ্যাসিস্ট হাসিনা দীর্ঘ ১৫ বছরে উন্নয়নের নামে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা দেশে থেকে চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে। বড় বড় মেগা প্রকল্প, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্টের মতো প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজেরই অন্তত ৭০ভাগ টাকা চুরি করেছে হাসিনা ও তার সিন্ডিকেটের লোকেরা। আর এই সিন্ডিকেটে আছে ছোট চোর-বড় চোর। সবচেয়ে ছোট চোর হাসিনার পিয়ন, সেও চুরি করেছে ৪শ কোটি টাকা। এদেরই একজন এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন। তিনি আবার ফ্যাসিস্ট হাসিনার শীর্ষ চোর সিন্ডিকেটের অন্যতম প্রভাবশালী চোর জাহাঙ্গীর কবীব নানকের ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত। নানকের প্রভাব খাটিয়ে সাখাওয়াত বাগিয়ে নিয়েছেন একাধিক প্রমোশন সহ ৩হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালকের পদ। মনপ্রান উজার করে দেশের টাকা চুরি করে সাখাওয়াত গড়ে তুলেছেন অন্তত ৩শ কোটি টাকার সম্পদের বিশাল সাম্রাজ্য।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এলজিইডির বিভিন্ন পদে প্রায় ৩০ বছর চাকুরী করে ২০২৩ সালে হয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। ৩১ বছরের চাকুরী জীবনে সব মিলিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন নিয়েছেন মাত্র ২কোটি ২৪লক্ষ টাকা। অথচ বর্তমান বাজার মূল্যে তার সম্পদের পরিমান ৩শ কোটি টাকার উপরে। ঘুষ,দুর্নীতি,অনিয়ম ও প্রকল্পের টাকা চুরি করেই এমন সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে জানায় তার নিকট জনেরা।

সাখাওয়াত হোসেন ১৯৯২ সালে জামালপুর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী পদ থেকে তার সরকারি কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সান্নিধ্যে এসে তিনি যেন টাকা কামানোর মেশিনে পরিনত হন। নানকের অদৃশ্য ছোয়ায় শাখাওয়াত হোসেন ২০২১-২২ অর্থবছরে রংপুর বিভাগ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ২য় পর্যাযের প্রকল্প পরিচালক পদে দায়িত্ব পান। ৩হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে কাজের ৭০ ভাগেরই বাস্তবে কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় না। প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভার কার্যবিবরনি মিটিং এর কিছু কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এলজিইডির ১হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দের ২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে ১১অক্টেবর২-০২১ তারিখে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এদের মধ্যে একটি প্রকল্প হলো রংপুর বিভাগ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়)।

প্রকল্প পরিচালক সাখাওয়াত হোসেনের এই প্রকল্পে বাজেট ধরা হয়েছিলো ২হাজার ৮শ ৮৪ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা । পরবর্তী ধাপে ২শ কোটি বাজেট বাড়িয়ে করা হয় ৩হাজার ৮শ ৮৪ কোটি ৮৬ লক্ষ করা হয়। ১০পার্সেন্ট কমিশনে শাখাওয়াত হোসেন এই প্রকল্প থেকে অন্তত ৩শ কোটি টাকার উপরে চুরি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও সাখাওয়াতের অঢেল সম্পদের বিবরনীর দিকে তাকালেই এর সত্যতা চোখের সামনে ভেসে উঠে। শাখাওয়াত হোসেনের এই প্রকল্পের উপ পরিচালক আব্দুর রশিদ মিয়া ও সহকারী প্রকৌশলী রাসেদুল হাসানও কমিশনে পিছিয়ে নেই।

শাখাওয়াত হোসেনের সম্পদ বিবরনীতে দেখা যায়, রাজধানীর আফতাবনগরের এফ ব্লকের ৫ ও ৭ নং রোডে ৬কাঠার দুটি প্লটে ৯তলা ফাউন্ডেশনে বিলাশবহুল বাড়ির নির্মান কাজ চলছে। আফতাবনগরের এইচ ব্লকে ছেলে সোয়েব সামদানীর নামে ৩ কাঠা প্লটে ৭ তলা বাড়ি। বনশ্রীর জি ব্লকে ৫ কাঠার প্লটে আছে ৮ তলা বাড়ি। ধানমন্ডির ইন্দিরা রোড বাসা:৪৩/ই-১ এ. ইন্দিরা রোড এ আরো একটি ৬ তলা বাড়ি। চুরির কালো টাকা সাদা করার জন্য রাজধাণীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-ব্লকে ২/২১ বাড়ীতে স্ত্রী আসিয়া খাতুন ও ছেলে সামদানীর নামে গড়েছেন পরিজা প্রপার্টিজ নামে একটি রিয়েল স্টেট কোম্পানি। এই কোম্পানির নামে উত্তরা ও বনশ্রীতে কয়েকটি বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। পূর্বাচল ৮ নাম্বার সেক্টরে ৫কাঠার প্লট। উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে পারিজা প্রপার্টিজ এর ব্যানারে ৩ কাঠা জমির উপর ৭ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন স্ত্রী আসিয়া খাতুন। বরিশালের রুপাতলী বাকেরগঞ্জে ৩টি বাড়ি সহ রয়েছে বিপুল পরিমাণ জমি। বরিশাল সদর রুপাতলীতে স্ত্রী আসিয়া খাতুনের নামেও রয়েছে ১একর ৮২ শতাংশ জমি। রুপাতলী মৌজার ৭২৯২ খতিয়ানে ৯শতক জমিতে একটি বাগান বাড়ি।

বাকেরগঞ্জের ভরপাশা মৌজার ৪৪৪২ খতিয়ানে পুত্র সোয়েব সামদানির নামে ২০ শতক জমি। রাঙামাটিতে রিসোর্ট, কক্সবাজারে হোটেল সহ কানাডাতে গড়েছেন সেকেন্ড হোম। সাখাওয়াত হোসেনের মতো এমন একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দুর্নীতি করে দৃশ্যমান কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করার পরেও কেনো দুদকের নজরে এলোনা এই নিয়ে সাধারণ জনমনে অসন্তোষ এবং ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

এব্যাপারে প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্য জানতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হয়নি।

More News...

খাঁটি আওয়ামীলীগার সামিউলের অঢেল সম্পদ

অবৈধ সম্পদে লালেলাল ইঞ্জিঃ জামাল