মো: রানা আহমেদ:
লুটেররানী ফ্যাসিস্ট হাসিনার চেরাগে ঘষা দিয়ে বেরিয়ে আসে মতি-বেনজী-মিয়া-শিখর-কাউয়া-শালিকের মতো শতশত দৈত্য। যারা অন্যের উপকার করতে নয়, বরং অন্যের সম্পদ লুট করে নিজেদের সম্পদের পাহাড় গড়েছে। খুনী হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে গর্বের সাথে জাতির উদ্দেশ্যে বলেছিলেন তার পিয়নের কাছেও ৪শ কোটির সম্পদ রয়েছে। পিয়ন নাকি হেলিকপ্টার ছাড়া চলাফেরা করে না। খুনী হাসিনার এই দম্ভোক্তিটি শোনার পরে এদেশের মানুষের মনে একটা প্রশ্ন এসেছে ছিলো তাহালে হাসিনা কত লক্ষকোটি টাকার মালিক। হাসিনা এদেশের পাবলিক টয়লেট বানাতেও বাজেটের ফিফটি পার্সেন্ট টাকা কমিশন নিয়েছে। যেকারনে ৩শ টাকার বালিশের দাম ৬হাজার টাকা হওয়ার পরেও চোরের বিচার করে নাই খুনী হাসিনা। তার ১৫ বছরের শ্বৈরাচারি শাসন এদেশের প্রতিটা সরকারী দপ্তরের নিচতলা থেকে উপর তলা পর্যন্ত চোরের ফ্যাক্টরিতে পরিনত হয়েছে। এই তালিকার তার নিজের দপ্তরের চোর গুলো ছিলো শীর্ষ পর্যায়ে। হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর ছিলেন শীর্ষদের একজন। দেশের টাকা চুরি করে হয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক।
সাইফুজ্জামান শিখর হাসিনার এপিএস হওয়ার পরে তার আপন মামাতো ভাই সানাই শাওনকে তার বাড়ির ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসাবে রাখেন। বাসার দেখাশোনা ও বাজার করার দায়িত্ব ছিল তার। সানাই শাওন যেসব সম্পত্তি তত্ত্বাবধান করে এবং তার নাম ব্যবহার করে যে সব সম্পত্তি ও ব্যবসা অর্জন করা হয়েছে তার সব কিছুর মালিক সাইফুজ্জামান শিখর। মাগুরার মানুষ সবাই জানে, সাইফুজ্জামান শিখরের পিতা মো. আসাদুজ্জামান ছিলেন মাগুরা শহরের একজন গরীব মোক্তার । তিনি অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন। তার ছেলেরাই সারাজীবন প্রচার করে এসেছে যে, অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যুর পরে আসাদুজ্জামানের স্ত্রী মনোয়ারা জামান অর্থাৎ শিখরের মা সংসারের দুরাবস্থার কারণ উল্লেখ করে ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত সময়ে যখন হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন সংসার চালানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে খুলনার এমপি বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান এর মাধ্যমে ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা নিয়েছেন। সাইফুজ্জামান শিখর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় তার লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা নিয়েছেন। হঠাৎ করে শিখর প্রধানমন্ত্রীর এপিএস হওয়ার পরে কি যাদুর কাঠি পেয়ে গেলেন যে, রাতারাতি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গেলেন? শিখরের বড় ভাই শফিকুজ্জামান বাচ্চু মাদকাসক্ত। মেজভাই সাচ্চু মাগুরার সমস্ত টেন্ডারের টেন্ডারবাজ, মাতাল ও সব গুনই তার মধ্যে আছে। বিকাশ ফেনসিডিল চোরাচালানের নায়ক। সে নিজে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে গাড়ি এক্সিডেন্ট করে আগুনে পুড়ে অচল অবস্থায় আছে। তাকে অনেকবার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আটক রাখার পরেও কোন উন্নতি হয় নাই। ছোট ভাই হিশাম সবার থেকে বেশী গুনধর। সে মাগুরার ইয়াবা সম্রাট হিসাবে পরিচিত। অবৈধ অস্ত্রের মালিক ও মাগুরার সমস্ত অবৈধ অস্ত্রধারীদের গডফাদার। সে কারণে শিখর আপন গুণধর ভাইদের ভরসা না করে আপন মামাতো ভাই সানাই শাওনকে নিজের হাতের হাতিয়ার বানান। এপিএস হওয়ার পরে সব অবৈধ সম্পদ অর্জনের হাতিয়ার হল এই সানাই শাওন। দেশের সমস্ত তদবির বাণিজ্য করে শিখর যে টাকা কামিয়েছেন তার রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব এই সানাই শাওনের। গণভবনের এপিএস এর রুমে বসেই ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, খালিদ ভূঁইয়া, জিকে শামীম, লিয়াকত শিকদার সংশ্লিষ্ট বিভাগের অফিসারদের রুমে ডেকে নিয়ে টেন্ডার ভাগাভাগি করাই ছিল শিখরের কাজ। সম্রাট, খালিদের টেন্ডারের ভাগাভাগির সব টাকার অংশের ভাগ শিখরের পকেটে যেতো।
ঢাকার গ্রেপ্তারকৃত অনলাইন ক্যাসিনোর মালিক সেলিম প্রধানের সাথে শিখরের প্রতিনিধি হিসাবে সানাই শাওন ব্যবসা পরিচালনা করতো। দেশে বিদেশে সম্পত্তি, ব্যবসা সব কিছুর মালিক শিখর। তার পক্ষে সম্পত্তি দেখা শোনা করে এই সানাই শাওন। যে শিখরের জন্য তার লেখাপড়ার খরচ যোগাতে, সংসার চালাতে প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের টাকা নেওয়া হত সেই শিখর এপিএস হওয়ার পরে যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় দশ বছরের মধ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা, সম্পদের মালিক হয়ে গেলেন। শিখর বর্তমানে যে বাড়িতে বসবাস করে এটাও একজন হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে জোর করে দখল করা। বাড়ির মালিক ছিলেন কালিপদ ঘোষ নামে একজন ড্রাইভার। তাকে পরিবার পরিজনসহ বেনাপোল বর্ডার দিয়ে ভারতে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও তারা (কালিপদ ঘোষ) বাংলাদেশে ফেরত আসেন।
কালিপদ ঘোষের পরিবার পরিজন বর্তমানে ঢাকা শহরে বসবাস করেন। তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে আসল সত্য জানা যাবে। মো. আসাদুজ্জামান জীবিত থাকাকালে এই বাড়ির কাগজপত্র নিজ নামে করতে পারেনি। এবারের রেকর্ডে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দলিলপত্র ছাড়াই নিজ নামে নিয়েছেন। শিখর এপিএস হওয়ার পরে বাড়িতে রাস্তা সংলগ্ন ১৪তলা বিল্ডিংয়ের ৩তলা সম্পন্ন করেছেন। বাড়ির পিছনের ঠাকুরদের জমি দখল করে প্যালেশিয়ান বিল্ডিং তৈরি করেছেন। যেখানে নিজেরা থাকেন,আর সামনে বিরাট অংশ খালি জায়গা। অপর অংশে সানাই শাওনদের বাড়ি করে দিয়েছেন আর এক অংশে নিজ মায়ের নামে এনজিও’র বিল্ডিং তৈরি করেছেন। শিবরামপুর নিজ মামা বাড়ি পৌরসভার মধ্যে ২০ বিঘা জমির উপরে বাগান বাড়ি তৈরী করেছেন। আলিধানীতে ২০ বিঘা ধানী জমি, কাটাখালী, নড়িহাটি, বাশকোটা, টেংগাখালী, মালন্দ, মৃগিডাংগা, বাগডাংগা মৌজায় শত শত বিঘা ফসলি জমি ক্রয় করেছেন। শালিখার শতখালী এ.আর. (আসাদুজ্জামান-রশিদ) জুট মিল করেছে ৫০ বিঘা জমির উপর। নড়াইলে নিজ শ্যালকের তত্ত্বাবধানে ২০০ বিঘা জমি ও ইটভাটা রয়েছে। মানিকগঞ্জে প্রায় ১০০ বিঘা জমি খরিদ করেছে। সে জমির পরিচয় মানিকগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস এর মাধ্যমে জানা যাবে। ঐ জেলা প্রশাসক সব জমির মালিকদের মধ্যস্থতা করে এই জমি কিনে দিয়েছিল। চট্টগ্রামের চকরিয়ায় ১০০ বিঘা জমিতে মাছের ঘের রয়েছে। নারায়নগঞ্জে রয়েছে সুবিশাল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী।
গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীরের সাথে অংশীদারিত্বে রয়েছে জুট মিল এবং ঝুটের ব্যবসা। রাজশাহীতে রয়েছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় (বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়) ও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম রয়েছে। খুলনার অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিলের মধ্যে ২০ বিঘা জমি। সাভারের হেমায়েতপুরে একটি হাউজিং কোম্পানীর জমিতে ১০ তলা বাড়ী। ময়মনসিংহের ভালুকায় সোয়েটার ফ্যাক্টরী।
এ ছাড়াও বিদেশে বহু দেশের সঙ্গে তার হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে যার দেখা শোনা করে মামতো ভাই সানাই শাওন। শিখরের পরিবারে তিনি ছাড়া আর কারো কোন বৈধ আয়ের উৎস নাই।শিখরের সানাই শাওনকে বিশ্বাস করার কিছু কারণে রয়েছে। সানাই শাওন এর পিতা নজরুল ইসলাম টগরও শিখরের পিতা আসাদুজ্জামানের খুব বিশ্বস্থ ছিলেন। আসাদুজ্জামান মহম্মদপুর উপজেলায় মৌলবী জোকা গ্রামের এক হতদরিদ্র লোকের সস্তান ছিলেন। আসাদুজ্জামানের লেখা-পড়ার খরচ যোগানোর সামর্থ তার ছিল না। অনেক কষ্টে সৃষ্টে ‘নহাটা রানী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। এখানেই তার লেখাপড়ার ইতি হয়। আসাদুজ্জামান প্রথম জীবনে ২৭ টাকা বেতনে প্রাইমারী স্কুলে চাকরি নেন। এই সময়ে সে শালিখার হাটবাড়িয়া প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় হাটবাড়িয়ার জলিল বিশ্বাসের বাড়ি লজিং থাকতেন। তারপর ভাটোয়াইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় জয়নাল মোল্যার বাড়ি লজিং থাকতেন। পরবর্তীতে দেশে রেন্ট রোল রেকর্ড শুরু হলে স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে আসাদুজ্জামান বদর আমিনের চাকরি শুরু করে। বদর আমিনের কাজ ছিল শিকল দিয়ে মাঠে মাঠে জমি জমার সীমানা নির্ধারণ করা। পরে মাগুরায় ইসলামপুর পাড়ার মরহুম রোস্তম মোক্তারের সংস্পর্শে এসে মোক্তারী পাশ করে মাগুরায় মোক্তারী শুরু করেন। এ সময় তার খুবই দুরাবস্থা ছিল। এ সময় তিনি মোমিন মোক্তারের বাড়ির সামনে বাঁশের বেড়া দেয়া একটি টিনের ঘরের অর্ধেকে নিজে থাকতেন এবং বাকী অর্ধেকে চেম্বার ছিলো।
এই সময়ে আসাদুজ্জামান, এ্যাড. সোহরাব হোসেনের সংস্পর্শে আসেন। তখন মাগুরা মহকুমা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন সৈয়দ আতর আলী এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এ্যাড. সোহরাব হোসেন। এ্যাড. সোহরাব হোসেন সৈয়দ আতর আলীকে বাদ দিয়ে নিজে সভাপতি হওয়ার জন্য একজন সাধারণ সম্পাদক খুঁজছিলেন। সোহারাব হোসেন সেক্রেটারী হওয়ার মত কাউকে না পেয়ে নিজে সভাপতি এবং আসাদুজ্জামানকে সেক্রেটারী করেন। আসাদুজ্জামানকে মোক্তারী পেশাসহ সমস্ত রকম সহযোগিতা করেন। আসাদুজ্জামান কালিপদ ঘোষের বাড়ি দখল করার পর ঐ জমিতে ঘর করার জন্য সোহরাব হোসেন তার ইট ভাটা থেকে ঘর করার জন্য বিনামূল্যে ইট প্রাদন। তৎকালীন সময় মুসলিমলীগের প্রভাবশালী নেতা টেংরা মিয়া আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে বাড়ি দখলে নেয়ার চেষ্ঠা করলে সোহরাব হোসেন তা প্রতিহত করেন। সোহরাব হোসেন আসাদুজ্জামানকে সর্বতঃ প্রকার সহযোগিতা করেন। এ সময়ে সোহরাব হোসেন আসাদুজ্জামানকে শিবরামপুরের অতি দরিদ্র আবুল বিশ্বাস (আবো) এর মেয়ে মনোয়ারা জামানের সাথে বিবাহ দেন। আবুল বিশ্বাস (আবো) খুবই দরিদ্র ছিলেন। তার পুত্র নজরুল ইসলাম টগর। ছোট বেলা থেকে নজরুল ইসলাম টগর আসাদুজ্জামানের পরিবারের আশ্রয়ে থাকেন। নজরুল ইসলাম টগর আসাদুজ্জামানের বিশ্বস্ত ছিলেন। আসাদুজ্জামান মোক্তারী পয়সায় কায়ক্লেশে একটি ‘বেবী-টেক্সি’ কিনে নজরুল ইসলামকে দিয়ে চালাতেন। নজরুল ইসলাম টগর ঐ ‘বেবী-টেক্সির’ ড্রাইভার ছিলেন। পরে আসাদুজ্জামানের দখল করা বাড়ির সামনে একটি গোডাউন তৈরি করে টগরকে দিয়ে সারের ডিলারীর ব্যবসা করান। তাতেও সে কোন সুবিধা করতে পারে নাই। মুলত আসাদুজ্জামান এর পোষ্য ও অনুগত হিসাবেই টগর জীবন কাটিয়েছেন।
সে কারণেই আসাদুজ্জামানের বিশ্বস্থ টগরের ছেলে সানাই শাওন শিখরের খুবই বিশ্বস্থ ও আশ্রিত।
১৯৭০ সালে নির্বাচনের সময় আসাদুজ্জামান এমপিএ (মেম্বার অব প্রোভিনশিয়াল এসেমব্যালি) নির্বাচিত হন। কথিত আছে যে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মাগুরার ট্রেজারীর সমস্ত টাকা/রিলিফের মালামাল একটি জিপে করে সরাসরি কৃষ্ণনগর নিয়ে চলে যান। কথিত আছে তিনি সে টাকা তৎকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের নিকট জমা দেন নাই। আসাদুজ্জামান দেশে ফিরে এসে আবার মোক্তারী শুরু করেন। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু উকিল এবং মোক্তার সবাইকে সমান করে এ্যাডভোকেট করে দেন। এই ঘোষনার ফলেই আসাদুজ্জামান এ্যাডভোকেট হন। মূলত তিনি কখনও এ্যাডভোকেট ছিলেন না। তিনি মাধ্যমিক পাশ মোক্তার ছিলেন। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে মাগুরায় সস্তোষ দত্তের পরামর্শে মাগুরার একমাত্র পেট্রোল পাম্পটি আখতার এন্ড আখতার কোম্পানির মালিকদের নিকট থেকে জোর করে কাগজে সই করে কেড়ে নিয়ে মাগুরা ছাড়া করেন। আখতার এন্ড আখতার কোম্পানির মালিক স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মাগুরায় এক সংগে ডা. এম.এস আকবরের বাড়ির উত্তরের পাশের নিজ বাড়িতে থাকতেন। তারা পশ্চিম পাকিস্তানী হলেও বাংলায় কথা বার্তা বলতেন। তারা ইস্পাহানীদের নিকট আত্মীয় ছিলেন। আক্তার সাহেবকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে সস্তোষ দত্তের বাড়িতে আসাদুজ্জামান দলিলে সই করান। আক্তার সাহেব ঢাকায় গিয়ে তাদের আত্মীয় ইস্পাহানিদের নিকট নালিশ জানায় আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে। ইস্পাহানীরা পশ্চিম পাকিস্তানী হলেও আওয়ামীলীগের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিল। আওয়ামীলীগকে সহযোগীতা করার উদ্দেশ্যে ইস্পাহানিদের বীমা কোম্পানিতে বঙ্গবন্ধুকে একটি অনারারি চাকরি দিয়ে বেতন দিতেন। সে জন্য ইস্পাহানিদেরকে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত ভালো বাসতেন। আখতার সাহেব ইস্পাহানিদেরকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর নিকট আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে বঙ্গবন্ধু মাগুরা মহকুমা আওয়ামীলীগের সভাপতি সোহরাব হোসেনকে ডেকে নিয়ে আসাদুজ্জামানকে দল থেকে বহিস্কার করতে বলেন। ১৯৭৩ এর নির্বাচনে আসাদুজ্জামানকে প্রার্থী করবেন না বলে নতুন প্রার্থী খোজার নির্দেশ দেন। সোহরাব হোসেন আসাদুজ্জামানকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর নিকট ক্ষমা চাওয়ান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ক্ষমা করেননি। বাধ্য হয়ে সোহরাব হোসেন মাগুরা মহকুমা আওয়ামীলীগের মিটিং ডেকে আসাদুজ্জামানকে বহিস্কার করেন। মোল্ল্যা নবুয়ত আলীকে মহকুমা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। এই কারণেই ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে অখ্যাত অজ্ঞাত বিনোদপুর হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রশিদ বিশ্বাস মনোনয়ন পান এবং এমপি নির্বাচিত হন।
বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকতে এই আসাদুজ্জামান আর বঙ্গবন্ধুর নিকট ভিড়তে পারেন নাই। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে তিনি আবার আওয়ামীলীগে আসেন। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে আসাদুজ্জামান আর কখনও আওয়ামীলীগ করতে পারতেন না। আসাদুজ্জামান স্বাধীনতার পূর্বে ১ বার এমপিএ (মেম্বার অব প্রোভিনশিয়াল এসেমব্যালি) ও ৩ বার এমপি নির্বাচিত হন। তিনি কখনই ৫ বার এমপি ছিলেন না। এত কান্ড করার পরেও প্রচারের গুনে “না খেয়ে থাকা, বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া” ইত্যাদি কারণে আসাদুজ্জামানের একটি ক্লিন ইমেজ তৈরি হয়েছিল। তার ছেলেরাই প্রচার করেছে আসাদুজ্জামান না খেয়ে থাকতেন, বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। তার পুত্র শিখর দশ বছরে কিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হলেন? ১জন ৬ষ্ট গ্রেডের কর্মচারী, তার বেসিক বেতন ৪১ হাজার টাকা সর্ব সাকুল্যে ৬৩ হাজার টাকা। এই টাকা বেতন পেয়ে দশ বছরে শিখর কিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হন ? আওয়ামী আমলে মাগুরায় শিখর এবং তার ভাইদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। শিখর এবং তার ভাইদের হুকুম ছাড়া মাগুরায় গাছের পাতাও নড়তো না। প্রশাসন, ব্যবসা, দলীয় কর্মকান্ড, টেন্ডার, দখলদারী সব কিছুই সে ও তার ভাইদের হুকুমে চলতো। সমস্ত টেন্ডার তার নির্দেশেই সিদ্ধান্ত হতো। মাগুরা জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ঔষধ ক্রয়ের ১৩ কোটি টাকার একটি টেন্ডার হয়। এই টেন্ডারে সে সাড়ে ৩ কোটি টাকা নিয়ে বিএনপি’র মো. আজিজুল ইসলাম নামের একজন ঠিকাদারকে দিয়ে দেন। ঐ টেন্ডারে একটি টেন্ডার ফরম পারলা গ্রামের এক ঠিকাদার আপোষে না দেওয়ায় রাতে সদর থানার ওসি’র নেতৃত্বে পুলিশ দিয়ে রেড দিয়ে ওসি স্বয়ং ঐ টেন্ডার ফরম উদ্ধার করে এনে শিখরকে দেন।
যেসব সম্পদের মালিক সাইফুজ্জামান শিখর: সময় টিভি ১৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক। রাজশাহী বরেন্দ্র বিশ্ব বিদ্যালয়ের ৪০ শতাংশ মালিক। বসুন্ধরা গ্রুপে ৪০০ কোটি টাকা লগ্নি। গাজীপুরে ২০ বিঘা জমিসহ একটি গার্মেন্টস (তার মামাতো ভাই শাওন সানাই দেখা শোনা করে। ফরিদপুরে একটি ইন্ডাষ্ট্রিজ এর মালিক। সাভারে একটি ৬ তলা বাড়ী যা একটি হাউজিং কোম্পানী তাকে ঘুষ দিয়েছে। সীমাখালীতে একটি জুট মিলের ৫০ শতাংশ মালিক। যেটা তার বাবা আসাদুজ্জামানের নামে) মাগুরার শিবরামপুরে ১২ বিঘা জমির ওপর বাগান বাড়ী (যা হিন্দুদের জমি জোর করে দখল করা) মাগুরা জেলার ৪টি উপজেলায় কমপক্ষে ২০০০ একর জমি। মাগুরা সদর উপজেলার জাগলা গ্রামে একটি অটো ইট ভাটা। নিজের ভাইদের নামে ২টি ইট ভাটা। মাগুরা শহরে ৪তলা বাড়ী। মাগুরা শহরের ভায়না মোড়ে একটি আবাসিক হোটেল ও পেট্রোল পাম্প। ছায়াবাণী সিনেমা হলের সামনে ১ বিঘা জমি।
শিখরের বদৌলতে যারা ফকির থেকে কোটিপতি : মীর সুমন ২. শেখ রেজাউল ৩. মীর রুবেল ৪. তুহিন কাউন্সিলর ৫. খোকন ঠাকুর ৬. এডভোকেট শাকিল ৭. মুহিত চেয়ারম্যান ৮. রফিক চেয়ারম্যান ৯. ঠিকাদার মুক্তি ১০. ঠিকাদার দুলু ১১. মামাতো ভাই সানাই শাওন ১২. ছোট ভাই হিসাম ১৩. মেঝ ভাই সাচ্চু ১৪. পৌর কাউন্সিলর মাকুল ১৫. যুবলীগ নেতা এর নাম মোল্লা মাজেদুল। শেখর এপিএস থাকাকালে তার বাড়ির কাজের লোক। সে এখন কোটিপতি। মাগুরা শহরের খান পাড়ায় ২টি বাড়ি কিনেছে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। ‘নিজনান্দুয়ালীতে’ ১টা বাড়ি করেছে। ৭০ লাখ টাকায়। গ্রামে ২০ বিঘা জমি কিনেছে। সেখানেও ৩তলা বাড়ী নির্মাণ করেছে। তার বাড়ী মোহাম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর গ্রামে। ১৫ বছর ধরে শিখরের বাসার কাজের লোক। শিখর আমেরিকায় তার মামাত বোন দুলাভাই ও মামাতো ভাই শাওন সানাইয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার করে ৩টি বাড়ী ক্রয় করেছে। এই টাকা পাচারে সহযোগিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান। সে শাওন সানাইয়ের ডান হাত। নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া ও ব্রাসেলসে এই ৩ টি বাড়ী অবস্থিত। শিখরের বাড়ির কাজের লোক মোল্লা মাজেদুল। ৩ টি বাড়ী ও ২০ বিঘা জমির মালিক। শিখরের শ্বশুর আব্দুল আজিজ এক হিন্দুর বাড়ি দখল করে জোর পূর্বক তার মেয়েকে বিয়ে করে। সেই ঘরের মেয়ে সন্তান শিখরের বউ। শিখরের শ্বশুর যে বাড়ি ও বাড়ির মেয়েকে জোর পুর্বক দখল করায় ঐ পরিবার অভিমানে ভারতে চলে যায়। সে মতে তার শ্বশুরও ভুমিদস্যু এবং আরেক মাফিয়া। হিসাব করলে দেখা যায় শিখরের বউ হিন্দুর মেয়ে। মূলত শিখর মিয়ার শ্বশুর আব্দুল আজিজ মিয়ার স্থায়ী এক সুন্দরী হিন্দু মেয়েকে জোর করে বিয়ে করেন। মাগুরার কাউন্সিলর নান্টুর ভাই আসাদুজ্জামানের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে আমেরিকার বাড়ীতে রেখেছে শিখর। মাগুরার জাগলায় প্রকাশ সাহার এক একর ৭৬ শতাংশ জমি দখল কর সাবেক এমপির ভাইয়ের ইটভাটা নির্মাণ করেছে। ডেসটিনির মালিক রফিকুল আমিনের কাছ থেকে ৪০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন তদবীর বাবদ। সেই টাকা আজো ফেরত দেননি। রেজাউল কবীর সুরুজ। বাড়ি মোহাম্মদপুর উপজেলার পানিঘাটা গ্রামে। তারা তিন ভাই। এক ভাই ইমরুল কায়েস ঢাকায় রিয়েল স্টেট ব্যবসা করে। আরেক ভাই পানিঘাটা থাকে। তার নামে এলাকায় প্রচুর জমি কিনেছে। সম্প্রতি জমি সহ একটা বাড়ি কিনেছে। সুরুজ ১০ বছর যাবত জলি ও শিখরের এপিএস। প্রথম ৫ বছর কামরুল লায়লা জলির এপিএস। পরের ৫ বছর শিখরের এপিএস। এমপির যতপ্রকার সরকারী বরাদ্দ আছে (টিআর, কাবিখা,কাবিটা, থোক বরাদ্দ, মসজিদ,মন্দিরের অনুদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুদান, ম্যানজিং কমিটির অনুমোদন, প্রকল্প প্রণয়ন, চেয়ারম্যানদের কাছে ত্রান বিতরণ সব কিছুই এই সুরুজ করেছে।
এভাবে সে আজ শত কোটি টাকার মালিক। প্রামের বাড়িতে প্রচুর জমি ক্রয় করেছে। মাগুরা শহরে ৩ টি ফ্ল্যাট কিনেছে। ঢাকায় হাউজিং ব্যবসা আছে। তার সহযোগির নাম কামাল। এ ছাড়া আরো কিছু দালাল আছে। চেয়ারম্যানদের কাছে প্রতি টন চাউল গম ২৭/২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করতো। এ ছাড়া,শালিস দরবার,ব্যবসা, বাণিজ্য, ঠিকাদারী কমিশন আদায় করে। মাগুরা সদর উপজেলার চাউলিয়া ইউনিয়নের মালিকগ্রাম নগর বিল ও পদ্ম বিল এর মধ্যে ৫০ বিঘা জমির উপর একটা মাছের ঘের করেছে। গ্রীন ব্রিকস ব্যানার ফিনল্যান্ড প্রবাসীর ৩০ কোটি টাকা খেয়ে ফেলেছেন তিনি। শতখালি জুট মিল অনুমোদনে ৫০ কোটি টাকা হজম। এনটিভির সাংবাদিক আহমেদ পিপুল তার ব্যবসায়ীক পার্টনার। বাড়ি চুয়াডাঙ্গা। সে শিখরের সকল অপকর্মের সহযোগী। মাগুরার মাফিয়ার ডান হাত এক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ৪ ভাই। ইউনিয়নের হিন্দু বলতে এখন জনশূন্য। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারতো না। আর চেয়ারম্যান সাহেবতো নিজেও তার টাকার হিসাব জানেন না। শিখর তার বাড়ীর সামনে ৩০ শতাংশ খাস জমি দখল করে রেখেছে। মাগুরা সদর উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের নায়েব মন্জুকে দিয়ে এবার হাল রেকর্ড করে নিয়েছে। এই জমির মুল্য ১০ কোটি টাকা।