শিক্ষা খাতে বড় কোনো সুখবর ছিল না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। একইসঙ্গে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার কথা জানানো হয়। কর্মকর্তাদের সংখ্যার দিক দিয়ে বিসিএস শিক্ষা বড় ক্যাডার। এখন বিসিএসে শিক্ষাকে ক্যাডার হিসেবে না রেখে আলাদা করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
এ সুপারিশ জানাজানির পর থেকেই তীব্র আপত্তি শুরু করেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর বদলে যেতে থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র। দলীয় মনোভাবাপন্ন উপাচার্যদের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অথবা নিজে থেকেই পদত্যাগ করেন তারা। শিক্ষা প্রশাসন ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করা হয়। এমপিওসহ শিক্ষকরা নানা দাবিতে বছরজুড়েই রাজপথে ছিলেন। গত ১৫ বছরের শিক্ষা প্রশাসনে চলা নানা অসংগতি দূর করতে করতেই শিক্ষা বছর শেষ হতে চলেছে।
আগামী বছরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আসছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বইয়ে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি যুক্ত হচ্ছে। বাদ দেওয়া হচ্ছে বইয়ের প্রচ্ছদে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত উক্তি। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসে যার যা ভূমিকা তা সেভাবে সন্নিবেশিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ জিয়াউর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী-যার যা ভূমিকা এগুলো ইতিহাসের অংশ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে নিহত আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধদের ‘বীরত্বগাথা’ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই পরিমার্জন করে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হবে। স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক পর্যায়ের ১ কোটি ৮৯ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ২৩ কোটি কপি বই ছাপানো হচ্ছে। আর একগুচ্ছ পরিবর্তন নিয়ে নতুন পাঠ্যবই হাতে পাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকার পাঠ্যক্রম ও শিক্ষা পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছিল। নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়া হয়েছিল। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আনা হয়েছিল পরিবর্তন। এ ছাড়া নবম শ্রেণিতে বিভাগ পছন্দের সুযোগ নেই। এর বদলে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো বিভাগে পড়তে পারবে। নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ষান্মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে বিগত সরকারের শিক্ষা প্রশাসন।
আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলে আসছিলেন, শিক্ষার্থীদের আনন্দময় পরিবেশে পড়ানোর পাশাপাশি মুখস্থ-নির্ভরতার পরিবর্তে দক্ষতা, সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে শেখাতেই নতুন এই শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে। তবে আলোচিত এই শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পরীক্ষার আগের রাতে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁস হয়। এমনকি ইউটিউবে এসব প্রশ্নের সমাধানও পাওয়া গেছে। এ নিয়ে অভিভাবকরা তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা সরকার পরিবর্তনের পর বিতর্কিত শিক্ষাক্রম বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, পুরোনো পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষাক্রম চলবে, এতে পরীক্ষাপদ্ধতি থাকবে।
দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি বলেছিলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তৈরি করা শিক্ষাক্রম ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’।
এরপরই পাঠ্যবইয়ের সংস্কার শুরু করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।