নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফ্যাসিস্ট হাসিনার ১৫ বছরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরে ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মান, পূন:মেরামত ও সংস্কার, বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনাকাটার টেন্ডার কাজ গুলো ২/৩টি সিন্ডিকেটবদ্ধ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানই ঘুরে ফিরে করে আসছে। দপ্তরের বড় বড় কর্মকর্তারা তাদের পছন্দের ঠিকাদারদের সাথে সিন্ডিকেট করে অভিনব কৌশলে রাষ্ট্রের টাকা চুরি করে আসছে। উন্মুক্ত টেন্ডার পদ্ধতিতে ঠিকাদাররা টেন্ডার ক্রয়ে অংশ গ্রহন করতে চাইলেও টেন্ডারে বিশেষ শর্ত সংযুক্ত থাকায় টেন্ডার আহ্বানকারী কর্মকর্তার পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া যেন কেউ অংশগ্রহন করতে না পারে। এ প্রক্রিয়ায় টেন্ডারের কাগজপত্রে সব কিছুই ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ থাকে। কিন্তু বাস্তবে কাজের ৭০ভাগই খুজে পাওয়া যায় না। একই জিনিস প্রতি বছর কেনাকাটা, সংস্কার বা পূন:মেরামতের নামে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা চুরি করে থাকেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা। সম্প্রতি স্মার্ট টেননোলজিস লিমিটেড নামীয় সিন্ডিকেটবদ্ধ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ কারসাজিতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কম্পিউটার এক্সেসরিজ কেনাকাটার কার্যাদেশ প্রদান করেছে দপ্তরের পরিচালক মোমিনুল ইসলাম। এই টেন্ডারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতার ক্ষেত্রে আইএসও সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছে। যেন স্মার্ট টেননোলজিস লিমিটেড ছাড়া কেউ দরপত্র ক্রয় করতে না পারে। ফলে সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়া সত্ত্বেও স্মার্ট টেননোলজিস লিমিটেডকে দরপত্রের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। আবার কর্মকর্তাদের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেয়ার জন্য ভুয়া ঠিকাদাররাও অসংগতিপূর্ন সিডিউল জমা দিয়ে থাকেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক টেন্ডার আইডি নং-১০৩০২৮৩ এর কার্যাদেশ স্মার্ট টেননোলজিস লিমিটেডকে প্রদান করা হয়েছে। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এক্সেসরিজ কেনাকাটার ক্ষেত্রে টেন্ডারে আইএসও সার্টিফিকেট প্রদানের শর্তটি জুড়ে দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেননোলজিস লিমিটেডকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। স্মার্ট টেননোলজিসের সাথে আইএসও সার্টিফিকেটবিহীন আরো ২টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সর্বনিন্ম মূল্যে দরপত্র জমা দিয়েছিলো। শুধুমাত্র স্মার্ট টেকনোলজিকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য হার্ডওয়্যার-এর টেন্ডারে সফটওয়্যার সিকিউরিটি রিলেটেড আইএসও- ২৭০০১:২০১৩ সার্টিফিকেট সনদ টেন্ডার ক্রাইটেরিয়াতে চাওয়া হয়। এতে সর্বোচ্চ দরদাতা স্মার্ট টেকনোলজিকে কাজ দিয়ে এনওসি ইস্যু করেন পরিচালক মোমিনুল ইসলাম। যা তদন্তের মাধ্যমে খুব সহজেই প্রমাণ করা সম্ভব। রাজস্ব খাত ছাড়াও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত পিডি আহমেদ আরিফ রশীদের ২৪৭ কোটি টাকার প্রকল্পে এভাবেই কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়। যেকারণে প্রকল্প শেষ হওয়া সত্ত্বেও প্রকল্পের মূল সিস্টেমসহ প্রকল্পের যন্ত্রপাতি দীর্ঘ দিন অচল অবস্থায় পড়ে আছে। এছাড়াও এ প্রকল্পের পিসিআর জমা প্রদান না করে তালবাহানার মাধ্যমে সময় ক্ষেপন করা হচ্ছে। অপরদিকে ১৫ বছর পূর্বে শেষ হওয়া প্রকল্পেরও অডিট আজ পর্যন্ত করা হয়নি বা করানো হয়নি।
কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টারের কোন প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও শুধুমাত্র প্রকল্পের টাকা লুটপাটের উদ্দেশ্যে ৫০কোটি টাকার বেশী ব্যয়ে কু-কৌশলে একটি ডাটা সেন্টার স্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক। আর এই ডাটা সেন্টারের জন্য বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রতিমাসে রাজস্ব খাত হতে ৮ লক্ষ টাকার বেশী বিল প্রদান করা হয়, যার মিটার নং-এম৭৪২০। প্রকল্প বুঝিয়ে না দিয়ে রাজস্ব খাত হতে বিল পরিশোধের এখতিয়ার না থাকলেও বিল পরিশোধের প্রক্রিয়া চলমান রেখেছে বর্তমান পরিচালক মোমিনুল ইসলাম। মাসিক ৮ লক্ষ টাকা খরচ করে শুধুমাত্র ডাটা সেন্টারটি সচল রাখা হয়েছে। ডাটা সেন্টারের সার্ভারে ডাটা স্টোরেজ ছাড়া আর কোন কার্যকারিতা নাই। ডাটা এনালাইসিস করার জন্য স্মার্টের নিকট হতে কয়েক কোটি টাকার সফটওয়্যার ক্রয় করা হলেও বাস্তবে তার কোন আউটপুট নেই। সফটওয়ার বিশেষজ্ঞ বা বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিম দ্বারা তদন্ত করলে লুটপাটের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসবে।
আরিফ রশীদের বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্প (কম্পোনেন্ট-এ) তে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১টি হাড্রোজেন গ্যাস জেনারেটর ক্রয় করা হয়েছিল, যার একটিও সচল নেই। বর্তমানে আরো হাড্রোজেন গ্যাস জেনারেটর কেনার টেন্ডার আহবান করা হয়েছে, গোপন চুক্তির মাধ্যমে বিডিটি নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার কাজ দেয়া হবে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। পুর্বে ক্রয়কৃত ১১টি হাড্রোজেন গ্যাস জেনারেটর কখনই সচল ছিল না। প্রতিটি পর্যবেক্ষণাগারে ইনচার্জদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মিথ্যা রিপোর্ট আদায় করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, হাড্রোজেন গ্যাস জেনারেটর সচল থাকলে কসটিক সোডা ও ফিরো সিলিকন কেনা দরকার হতো না। কিন্তু প্রতিটি পর্যবেক্ষণাগারে কসটিক সোডা ও ফিরো সিলিকন কেনা হয়েছে। ম্যানুয়াল হাড্রোজেন গ্যাস জেনারেটর বর্তমান বাজার মুল্য ২৫/৩০ হাজার টাকা হলেও পিডি আরিফ রশীদ ও ডিপিডি মোমিনুল ইসলাম প্রতিটি জেনারেটর ক্রয় করেন ৭৪ লক্ষ্য টাকা হারে।
অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, স্মার্ট টেকনোলজি, মাজ্জাক ট্রেড ও বিডিটি নামক ৩টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে সাথে সিন্ডিকেট গড়ে সাবেক পরিচালক আজিজুর রহমান, বর্তমান পরিচালক মোমিনূল ইসলাম, আবহাওয়াবিদ ও প্রকল্প পরিচালক আরিফ রশীদ, আবহাওয়াবিদ ও ডিপিডি বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্প (কম্পোনেন্ট-এ) রুবাইয়াত কবির, আবহাওয়াবিদ ও ডিপিডি বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্প (কম্পোনেন্ট-এ) রাশেদুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সিনোফটিক মহাশাখা) আবু সাজ্জাদ চৌধুরী (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার) একজন আরেকজনের সহযোগিতায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের শতশত কোটি নানা কৌশলে লুটপাট করে আসছে।