আবহাওয়া অফিসে হাসিনাপ্রেমী রশীদের ২৪৭ কোটি টাকার প্রকল্পে হরিলুট

আবহাওয়া অফিসে হাসিনাপ্রেমী রশীদের ২৪৭ কোটি টাকার প্রকল্পে হরিলুট

মোঃ আহসাউল্লাহ হাসানঃ
গায়েবী কেনাকাটায় ৩৬ কোটি টাকা উধাও, ৯কোটি টাকার মেশিনারিজ ১পয়সার কাজে লাগেনি, অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় কোটি কোটি টাকা বিল পরিশোধ, জিনিসপত্র সরবরাহ না করেই বিল পরিশোধের মাধ্যমে লুটেররাণী ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক আহমদ আরিফ রশিদ ও তার সিন্ডিকেট শতকোটি টাকার অধিক দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য প্রমানে উঠে এসেছে। জয়বাংলার শ্লোগান দিয়ে বিগত ১৫ বছরে এসব মুজিবসৈনিকেরা সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে ফোকলা করে বনে গেছেন কোটিপতি।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, যেসকল দেশে বা এলাকায় বৃষ্টিপাত খুবই কম হয় বা একবারেই হয় না বলেই চলে সেসব অঞ্চল বা দেশে অপটিক্যাল রেইনগজ নামক যন্ত্র বা মেশিনারিজ স্থাপন করে সামান্য পরিমান বৃষ্টির পরিমাপ ও বিভিন্ন উৎপাদনের জন্য পরিকল্পণা তৈরি ও গবেষনার কাজ চালানো হয়। আর যন্ত্রটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কোনভাবেই উপযুক্ত নয় বলে মনে করেন একাধিক আবহাওয়াবিদ। অথচ আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক আরিফ রশীদ মোটা অংকের কমিশনের ভিত্তিতে নিজের পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধমে ৮কোটি ৫২লাখ ৯৯ হাজার ৫শ টাকা খরচ করে উক্ত যন্ত্রটি ক্রয় করেন। যন্ত্রটি কাজে লাগুক বা না লাগুক তাতে কি আসে যায়। তিনি অপটিক্যাল রেইনগজের মতো অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ৩০ গুণ বেশী দামে ক্রয় করে আবহাওয়া অফিসে ফেলে রেখেছেন।

কিন্তু এক দিনের জন্যও এগুলো ব্যবহারের কোন রেকর্ড নেই। ১৮জুন-২০২২ তারিখে ৬৫ সেট অপটিক্যাল রেইনগজ ক্রয় করেন, যার প্রতিসেটের বাজার মুল্য ১৩ লাখ ১২ হাজার ৩শ টাকা, অর্থাৎ ৮কোটি ৫২লাখ ৯৯ হাজার ৫শ টাকা। এগুলো সেট হিসেবে উল্লেখের কারন হলো জনসাধারণের চোখে খুলি দেয়া। অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশনের ক্ষেত্রেও প্রতি সেট ১৩ লাখ ১২ হাজার ৩শ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব সেটে ৩টি সেন্সর ও ২টি সোলার প্যানেল ছাড়া আর কিছুই নেই এবং এই সমস্ত কাজ গুলোই দেওয়া হয়েছে নিজের সিন্ডিকেটের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাজ্জাক ইন্টারট্রেডকে। ২০আগষ্ট-২০১৯তারিখে ১১টি পোর্টাল হাইড্রোজেন জেনারেটর ক্রয় করা হয়। এটি একধরনের ৩০/৩৫ কেজি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডারের মাথায় প্রেসার নজেলযুক্ত, যা বেলুন ফুলানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। আবহাওয়াবিদদের মতে এর প্রতিটি বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ২৫/৩০ হাজার টাকা। অথচ মাজ্জাক ইন্টারট্রেডকে দেয়া হয়েছে ৭৪ লাখ ২২ হাজার ১১৮টাকা হারে। এই মূল্য দেখে আবহাওয়া অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তার চোখই কপালে উঠে গেছে। এটিকে এরা আবহাওয়া অফিসের ডাকাতি বলে আখ্যা দিয়েছেন অনেকে। ৫নভেম্বর-২০২০, ১৫ফেব্রুয়ারী-২০২১ এবং ১৭ ফেব্রুয়ারী-২০২১ তারিখে তিনটি এওয়াজ (অটোমেটিক ওয়েদার অবজারবিং সিস্টেম) ক্রয় দেখানো হয়, যার প্রতিটির ক্রয় মূল্য ছিল ২কোটি ৯২ লাখ ৩০ হাজার ৯৬৫ টাকা। আবহাওয়াবিদদের মতে এগুলোর দাম ৩০/৩৫ লাখ টাকার বেশী নয়। অথচ এগুলোর মূল সিস্টেমই এখনো অচল হয়ে পড়ে আছে।

এমআইসিএস অর্থাৎ মেট্রোলজিক্যাল ইনফর্মেশন এন্ড কমিউনিকেশন সিস্টেম,ডেটা সেন্টার, ইন্টারনাল নেটওয়ার্ক ও ফোর্সকাস্ট প্রডাকশন সিস্টেম, অটোমেশন সফটওয়ার ফর রাইটিং ফোর্সকাস্ট এই সফটওয়ার ২টি ৩৬কোটি টাকায় স্মার্ট টেকনোলজিস লিঃ এর কাছ থেকে ক্রয় দেখানো হলেও বাস্তবে এগুলো সরবরাহ না করে বিল পরিশোধের মাধ্যমে সমস্ত টাকাই ভাগাভাগি করে নেয়া হয়েছে। এসময় স্মার্ট টেকনোলজিস প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদার কোম্পানি হিসেবে নিষিদ্ধ ছিলো। কালো তালিকাভুক্ত এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত মুল্য দেখিয়ে বিল পরিশোধ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সকল যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করা সত্ত্বেও বিল পরিশোধ করার তথ্য প্রমান উঠে এসেছে।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২৪৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি করায় প্রকল্পের মূল সিষ্টেমই অচল হয়ে পড়ে আছে। পূর্ন:মেরামত ও সংস্কারের নামে অধিদপ্তরের রাজস্বখাত থেকে আরো অর্থ বরাদ্দ প্রাপ্তির প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রকল্পের বাস্তবায়নের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্প বুঝিয়ে দিতে পারছেন না । ২০০৯ সালের আরিফ রশীদ আরো একটি প্রকল্পের পরিচালক থাকাবস্থায় ১৮কোটি ৫০ লক্ষ টাকার অডিট আউট আপত্তি অদ্যবধি নিষ্পত্তি না করে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন। এছাড়া আরিফ রশীদের অধীনে ২০০৯ সালে শেষ হওয়া বান্দরবান আবহাওয়া কেন্দ্রের যন্ত্রগুলো আজ পর্যন্ত অধিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি বলে সাবেক পরিচালক আজিজুর রহমান এক লিখিত চিঠিতে উল্লেখ করেন। কারন ঐ প্রকল্পেও এবারের মতো লুটপাটের স্টীমরোলার চালানো হয়েছিলো।

ফলে স্মার্ট টেকনোলজিস লিঃ এসব কাজের বিনিময়ে পিডি আরিফ রশীদকে ঢাকার কল্যাণপুরে অবস্থিত বিলাশ বহুল স্মার্ট গার্ডেন ভবনে ২টি ফ্ল্যাট গিফট করে। যার প্রতিটি ১৯০০ স্কয়ার ফিটের এবং প্রতি স্কয়ার ফিট মূল্য ৭হাজার টাকা। দুইটি ফ্লাটের বর্তমান বাজার মূল্য ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা উপরে। ফ্লাট দুইটি স্মার্ট গার্ডেনের পঞ্চম তলায়, ৭৪/বি/১, রোড ১৪ কল্যাণপুর। এই ফ্ল্যাটে তিনি নিজেই বসবাস করেন। তার আরেকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে মিরপুর ১নম্বর পাইকপাড়া রোডে।
এব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক আহমদ আফির রশীদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে একাধিকবার তার অফিস কক্ষে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

More News...

খাঁটি আওয়ামীলীগার সামিউলের অঢেল সম্পদ

অবৈধ সম্পদে লালেলাল ইঞ্জিঃ জামাল