সেতুর অভাবে ভোগান্তিতে দুই ইউনিয়নের মানুষ

সেতুর অভাবে ভোগান্তিতে দুই ইউনিয়নের মানুষ

মনজু সরদার, রাঙ্গাবালী প্রতিনিধি: একটি সেতুর অভাবে যুগ যুগ ধরে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে দুই ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন কৃষক, ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। দুই ইউনিয়নে হাজার হাজার মানুষের বসবাস হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন কোন উন্নতি হয়নি। একটি সেতুর অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াতের করছেন তারা।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দারছিড়া নদীর কথা। নদীটি উপজেলা সদর থেকে বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবী দুইটি ইউনিয়নকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। নদী পাড়ি দিয়ে জেলা-উপজেলা শহরে যাতায়াত করতে হয় ওই এলাকার বাসিন্দাদের। একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয় এসব এলাকার কৃষক শ্রমিক স্কুল কলেজ মাদরাসার ছাত্র ছাত্রীসহ হাজারো মানুষ।

রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা যাত্রা শুরু করে। এরপর ২০১৯ সালে বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নকে ভেঙ্গে বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবী দুইটি ইউনিয়ন গঠন করা হয়।

এই উপজেলার উত্তরে আগুন মুখ্য নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে মিলিত ময়েছে দারছিড়া নদী। নদীর পূর্ব দিকে রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর ও পশ্চিমে বড়বাইশদিয়া এবং মৌডুবী ইউনিয়ন। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে আরও জানা যায়, বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবী ইউনিয়নের বসবাসরত অধিকাংশ মানুষই মৎস্য, কৃষিজীবী। তাদের নানা প্রয়োজনে উপজেলায় যাতায়াত করতে হয়। তবে ওই নদীতে সকাল ৬টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত খেয়া চলাচল করেন।

এ ব্যাপারে বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আবুল বাশার বলেন, যুগ যুগ ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়ে আসছি, আমাদের দাবি খুব শীঘ্রই এখানে সেতু নির্মাণ করা হোক। তাহলেই দুই ইউনিয়নের মানুষের ভোগান্তি লাগভ হবে।

একটি সেতুর অভাবে যুগ যুগ ধরে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের এই পরিস্থিতিতে এই দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা ওই নদীর উপর সেতু নির্মাণে জোর দাবি জানিয়েছেন।

মৌডুবী ইউনিয়নের তরুন উদ্যোক্তা মো. আজিজুর রহমান সুজন বলেন, মৌডুবী ইউনিয়নের রয়েছেন পর্যটন স্পট জাহাজমারা সমুদ্র সৈকত। সবুজ বনাঞ্চল পাখির কিচিরমিচির শব্দ ও বিস্তীর্ণ বালুকাময় বিচ। দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকত। বালুচরে লাল কাঁকড়াদের ছোটাছুটি। ঢেউয়ের গর্জন। বাতাসের তালে ঝাউয়ের পাতার শো শো শব্দে এক অন্যরকম অনুভূতি। সমুদ্রতটে চিকচিকে বালুতে পা ফেলানো আর হঠাৎ সমুদ্রের জলরাশি ঢেউ এসে ছুঁয়ে যাওয়া। সাজ বেলায় পূর্বাকাশে সমুদ্রের বুক চিরে জেগে ওঠা লাল সুর্যটা বেলা শেষে পশ্চিম আকাশে হেলে পরার মতো দৃশ্য যেকোন জায়গায় দাঁড়িয়ে অবলোকন উপভোগ করা যায়। ভ্রমন পিয়াসুদের কাছে এ স্থানটি অতুলনীয়।

এখানে ভ্রমন পিপাসু লোকজন সমুদ্রবিলাসে আসেন। তবে এখানে আসতে হলে দাড়ছিড়া নদী পার হয়ে আসতে হয়। নদীতে ব্রিজ না থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয় প্রতিনিয়ত । এজন্য এখানে একবার কেউ এলে দ্বিতীয়বার আসতে চায় না। এই নদীতে একটি ব্রিজ হলে জাহাজমারা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের যাতায়াত বাড়বে। 

এ সময় কথা হয় বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন চরহালিম গ্রামের মো. সিয়াম নামে এক শিক্ষার্থীর সাথে। সিয়াম রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। তিনি বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নদী উত্তাল হয়ে উঠেলে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হয়।

উপজেলার যুব ফোরামের সভাপতি ও সমাজকর্মী মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হয়। বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে। এখানে ব্রিজ এখন সময়ের দাবি।

উপজেলার খালগোড়া বাজার ব্যাবসায়ী মো. আব্বাস উদ্দিন বাদল বলেন, ট্রলারে করে এই নদী পাড় হতে নানা ধরণের ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। উপজেলা সদরে আসতে এটাই একমাত্র বাধা। তাই এখানে ব্রিজ হলে বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবী ইউনিয়নের মানুষের ভোগান্তির অবসান ঘটবে।

বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসাইন বলেন, এই নদীতে একটি সেতুর নির্মানের জন্য বেশ কয়েকবার এলজিইডি কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

রাঙ্গাবালী জাহাগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া সু দাখিল মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা মো. শাহিন মাহমুদ বলেন, বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন থেকে আমার মাদরাসা ছাত্র-ছাত্রী পড়তে আসে। কিন্তু নদীতে খেয়া থাকার কারণে বর্ষা মৌসুমে ওদের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এজন্য অনেক অভিভাবকরা তাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের মাদরাসায় পাঠাতে অনিহা প্রকাশ করেন। এখানে ব্রিজ হওয়া সময়ের দাবি।

রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের দাড়ছিরা নদীর উপর ২৮০ মিটার একটি ব্রিজ নির্মাণ হবে। ইতোমধ্যে ড্রইং নিয়ে সার্ভে করা হয়েছে। এলাইমেন্টের দুই দিকে ডান এবং বামে তিন কিলোমিটার সার্ভে করা হয়েছে। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার টিম স্থান পরিদর্শন করেছেন। তারা ফিজিবিলিটি নিয়ে গেছে। যেহেতু এটি একটি বড় প্রকল্প এটি স্টেজ বাই স্টেজ কাজ চলতেছে এবং চলমান আছে। আশা করি কাজটি বাস্তবায়ন হবে। যেহেতু এটি একটি বড় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হয়। তিনি আরো বলেন, আমার সাথে প্রকল্প পরিচালকের সাথে কাজটি নিয়ে কথা হয় যত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন করা যায় বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

More News...

বিশ্বের ইতিহাসে কোন পতিত স্বৈরাচার পুনরুজ্জীবিত হয়নি, আওয়ামী লীগও হবে না : জমির উদ্দিন নাহিদ 

টঙ্গীতে মায়ের হাতে অবুঝ দুই শিশু ছেলে মেয়েকে বটি দিয়ে কুপিয়ে জবাই