মোঃ আহসানউল্লাহ হাসানঃ
টেন্ডারে বিশেষ শর্ত জুড়ে দিয়ে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে টেন্ডার কাজ পাইয়ে দিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের চলতি দায়িত্বে থাকা পরিচালক মমিনুল ইসলাম। টেন্ডার প্রদানের প্রক্রিয়া শেষ আগেই পরিচালকের পছন্দের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিডিটিকে টেন্ডার কাজ দেয়া হয়েছে বলে জনকথা পত্রিকা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো। কিন্তু টেন্ডার প্রদানের প্রক্রিয়া শেষ দেখা গেছে টেন্ডারের কাজটি বিডিটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানই পেয়েছে। এতে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন বিষয়টি আলোচনা-সমালোচনা চলে আসে। তবে এসব বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করলে তাদেরকে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করতে দেখা যায়নি। এমনি কি লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরেও কোন তদন্ত কার্যক্রম গ্রহন করেনি। বরং প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের ডি-৪ শাখার কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, অভিযোগের নথিই নাকি খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সুত্র বলছে, ফ্যাসিস্ট হাসিনার ১৫ বছরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরে ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মান,পূন:মেরামত ও সংস্কার, বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনাকাটার টেন্ডার কাজ গুলো ২/৩টি সিন্ডিকেটবদ্ধ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানই ঘুরে ফিরে পেয়ে আসছে। দপ্তরের বড় বড় কর্মকর্তারা তাদের পছন্দের এই ঠিকাদারদের সাথে সিন্ডিকেট করে অভিনব কৌশলে রাষ্ট্রের টাকা চুরি করে আসছে। উন্মুক্ত টেন্ডার পদ্ধতিতে ঠিকাদাররা টেন্ডার ক্রয়ে অংশ গ্রহন করতে চাইলেও টেন্ডারে বিশেষ শর্ত সংযুক্ত থাকায় টেন্ডার আহ্বানকারী কর্মকর্তার পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া যেন কেউ অংশগ্রহন করতে না পারে। এ প্রক্রিয়ায় টেন্ডারের কাগজপত্রে সব কিছুই ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ থাকে। কিন্তু বাস্তবে কাজের ৭০ভাগই খুজে পাওয়া যায় না। একই জিনিস প্রতি বছর কেনাকাটা, সংস্কার বা পূন:মেরামতের নামে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা চুরি করে থাকেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা। যেকারনে সব কিছুতেই তাদের চরম নিরবতা।
সুত্র আরো জানায়, ২৪৭ কোটি টাকার প্রকল্পের পিডি আহমেদ আরিফ রশিদের দুর্নীতি ও দপ্তরের অসংখ্য দুর্নীতির নথিপত্র গোপন রাখার জন্য প্রতিরক্ষা সচিব থেকে শুরু করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও মাজ্জাক, বিডিটি এবং স্মার্ট নামের ৩টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট গড়ে মোটা অংকের টাকার খরচ করে বর্তমান পরিচালক মমিনুল ইসলামকে অবৈধভাবে প্রক্রিয়ায় চলতি দায়িত্বে বসিয়েছে। এই অবৈধ পরিচালক মমিনুলও আরিফ রশীদের প্রকল্পে উপ-প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ছিলেন। তদন্ত করলে দুর্নীতিতে তার সংশ্লিষ্টতার পাওয়া যাবে। একারনে তার কাছে অভিযোগ দিয়ে তদন্ত বা বিচার কোনটাই আশা করা যায় না। মাজ্জাক, বিডিটি এবং স্মার্টের সাথে এদের শতশত কোটি টাকার অবৈধ কেনাকাটা করেছে যার সুস্পষ্ট প্রমান থাকা সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা এদের কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কারণ, প্রতিরক্ষার অনেক কর্মকর্তা ও এদের এই দুর্নীতির টাকার ভাগ-বাটোয়ারায় অংশীদার।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, ৩/৪ লাখ টাকার ১১টি হাইড্রোজেন গ্যাস জেনারেটর ৯ কোটি টাকায় কেনার অন্তরালে ব্যাপক লুটপাটের পরেও আবার সেগুলো নতুন করে ক্রয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা চালাচ্ছে পরিচালক মমিনুল ও সিন্ডিকেট। টেন্ডারের আগেই জনকথা পত্রিকায় বিডিটিকে কাজ দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করা হলে তাকেই টেন্ডার কাজ দিয়ে সিন্ডিকেটবদ্ধ কর্মকর্তারা তাদের দুর্নীতি প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাজ্জাক, বিডিটি ও স্মার্ট টেকনোলজি দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তাদের সাথে মিলে ফ্যাসিস্ট হাসিনার ১৫ বছরে আবহাওয়া অধিদপ্তরে ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মান, পূন:মেরামত ও সংস্কার, বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনাকাটার টেন্ডার কাজ গুলো ঘুরে ফিরে পেয়ে আসছে। এদের কাছে আবহাওয়া অফিসের সব কিছুই জিম্মি। ৫ আগষ্টের পর মহাচোর পরিচালক আজিজুর রহমান আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বার্ধ হলে তদস্থলে একজন সৎ কর্মকর্তা ৩মাস দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পায়। কিন্তু সৎ হওয়ার কারনে তাকে পেছনে কাঠি করে বাড়ী পাঠিয়ে দিয়ে আজিজের উত্তরসূরী মমিনুলকে পদে বসানো হয়েছে।
এদের বিরুদ্ধে শতশত কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমান থাকা সত্ত্বেও জামাই আদরে দিব্যি তাদেরকে চুরি করার সুযোগ করে দিচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়। আবহাওয়ার যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে রাজস্ব খাত ও আরিফের প্রকল্প থেকে শতশত কোটি টাকার যে যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে সেগুলো খুবই নিম্মমানের হওয়ায় বেশীরভাগই অকেজো পড়ে আছে। ইতালি ব্র্যান্ডের দেখিয়ে ঢাকা নবাবপুর থেকে মালামাল ক্রয় প্রক্রিয়া সংযুক্ত করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজ আরিফ রশীদের প্রকল্পের কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের পিসিআর জমা দিচ্ছেন না। শোনা যাচ্ছে, বেনজিরের মত এই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কর্মকর্তারা যে কোন মুহূর্তে দেশ ছেড়ে পালাবে। এদের এখনই বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দূর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের রক্তের ঋণ কিছুটা পরিশোধ করা সম্ভব হবে। হাসিনার দোসর বেনজির, মতিউরের মত আবহাওয়া অফিসেও রয়েছে ডজন খানেক দুর্নীতিবাজ অফিসার। যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে শত শত কোটি টাকার দূর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমানপত্র।
মমিনুল ইসলাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিকল্পনা মহাশাখার দায়িত্ব পালনে সাবেক পরিচালক সামসুদ্দিনের সময় ঝড় সতর্কীকরণে বিল্ডিং-এ ৮৭ লক্ষ টাকার ইন্টিরিয়রের কাজের কোন কাজ না করেই ব্যাপক দুর্নীতি করেছিল, যা নিয়ে প্রতিরক্ষার সাবেক সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল তদন্ত শুরু করেন। শোনা যায়, মমিনুল ইসলাম মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তৎকালীন সচিব ম্যানেজ করে তদন্ত কার্যক্রম ধামাচাপা দেয়। বিষয়টি এখনো তদন্ত করলে দুর্নীতির তথ্যপ্রমান উঠে আসবে।
এব্যাপারে একাধিকবার চেষ্টা করেও প্রতিরক্ষা সচিবের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পরিচালক মমিনুল ইসলাম বলেন, এগুলো মন্ত্রনালয়ের বিষয় , মন্ত্রনালয় দেখবে।