আবহাওয়া অধিদপ্তরে ৪ধাপ ডিঙ্গিয়ে মমিনুলের পদোন্নতি: পর্ব-৪

আবহাওয়া অধিদপ্তরে ৪ধাপ ডিঙ্গিয়ে মমিনুলের পদোন্নতি: পর্ব-৪

ঘুষের বিনিময়ে বিভাগীয় মামলা ধামাচাপা
মোঃ আহসানউল্লাহ হাসানঃ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিকল্পনা মহাশাখার তৎকালীন ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মোঃ মমিনুল ইসলাম মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে তার নামে হওয়া দুর্নীতির বিভাগয়ি মামলা ধামাচাপা দিয়ে চাকুরীতে বহাল থেকে এখন একই কায়দায় ৪ধাপ ডিঙ্গিয়ে আবহাওয়াবিদ থেকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালকের পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন বলে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে আবহাওয়াবিদ মমিনুল ইসলাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিকল্পনা মহাশাখার তৎকালীন ইনচার্জ থাকাকালীন সময়ে অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরন কেন্দ্রের কনফারেন্স রুম, আইসিটি রুম, এক্সিকিউটিভ রুমের ইনটেরিয়র ডেকোরেশন সহ বৈদ্যুতিক মেরামত ও সংস্কার কাজের ৮৭ লাখ টাকা কোন কাজ না করেই তৎকালীন পরিচালক সামসুদ্দিন আহম্মেদের সাথে সিন্ডিকেট গড়ে আত্মসাৎ করেন। উক্ত কাজের টেন্ডার পিডব্লিউডি করার নিয়ম থাকলেও মমিনুল ইসলাম নিজের পরিকল্পনায় নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে টেন্ডার কাজ পাইয়ে দেন। কিন্তু নামমাত্র কাজ করে বরাদ্দের অন্তত ৮০ভাগ টাকার বিল তুলে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করেন। একারনে ঠিকাদারের সাথে ব্যাপক ঝামেলা তৈরি হলে এক ঠিকাদার বিষয়গুলো উল্লেখ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। মন্ত্রনালয় অভিযোগের তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে আদেশ জারি করেন। বিভাগীয় মামলা নং-০১/২০২০। এই সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রনালয় ১জানুয়ারী-২০২১ তারিখে ৩.০০.০০০০.০৪০.২৭.০০১.২০.৩৫ সংখ্যক স্মারক মুলে বিভাগীয় মামলা রুজুপূর্বক অভিযোগনামা জারি পূর্বক প্রকাশ করেন।
কিন্তু মমিনুল ইসললাম উক্ত মামলায় ৩ফেব্রুয়ারী-২০২১ তারিখে কারন দর্শানোর লিখিত জবাব দাখিল করেন এবং ব্যক্তিগত শুনানীতে অংশ গ্রহনের অনুমোতি প্রার্থনা করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৩মার্চ-২০২১ তারিখে ব্যক্তিগত শুনানী গ্রহন করা হয়। উক্ত শুনানীতে মমিনুলের বক্তব্য, লিখিত জবাব ও উপস্থাপিত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র সন্তোষজনক না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আণীত অভিযোগ তদন্তের জন্য মন্ত্রনালয়ের যুগ্নসচিব ফারাহ শাম্মীকে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়। তবে মমিনুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত না করে নিরপরাধী উপস্থাপন করে যুগ্নসচিব ফারাহ শাম্মীও তদন্ত প্রকিবেদন দাখিল করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জনকথাকে জানান, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব ড. মো: আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে যুগ্নসচিব ফারাহ শাম্মীকে নির্দেশনা দিয়ে মমিনুল ইসলামকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেন। সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল হাসিনার দাপটের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়কে দুণীতির আখড়ায় পরিনত করেছিলেন। তিনি যা বলতেন, তাই ঘটাতেন। আইন-কানুনের কোন তোয়াক্কা করতেন না। তার দপ্তরেরই এক কমিটি দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে অপরাধ প্রমান করেন এবং আরেক কমিটি সেই অভিযোগ থেকে অপরাধীকে অব্যাহতি প্রদান করে মমিনুলে নামে বিভাগীয় মামলা ধামাচাপা দেন।
৫আগষ্ট খুনী হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে ড. মোহাম্মদ ইউনুছ সরকারের সময়ে দেশের সরকারী দপ্তর গুলোতে পদোন্নতির বন্যা বইয়ে গেছে। হাসিনার আমলে অধিকার বঞ্চিত বা চাকুরীচ্যুত হওয়া কর্মকর্তাদের প্রাপ্যতা ফিরিয়ে দিতে চাকুরীতে পূর্ন:বহাল বা পদোন্নতি দেয়ার অন্তরালে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা হাসিনার দোসররা একজন আরেকজন পদোন্নতি দিয়ে এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরের গুরুত্বপূর্ন পদে বসিয়ে দিয়েছেন। এই তালিকায় বাদ পড়েনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ আশরাফ উদ্দিন ৪ধাপ ডিঙ্গিয়ে অর্থাৎ ৭ম গ্রেড থেকে একলাফে ৩য় গেডে এই দুর্নীতিবাজ মমিনুল ইসলামকেই পদোন্নতি দিয়ে পরিচালকের চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছেন। যা আইনের পুরোপুরি লঙ্গণ। তবে গুণজন উঠেছে, আবহাওয়া অফিসের সিন্ডিকেবদ্ধ একাধিক কর্মকর্তার শতশত কোটি দুনূীতির ফাইল ধামাচাপ দিতে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে সচিব আশরাফ উদ্দিন ম্যানেজ করে মমিনুল ইসলামকে পরিচালক বানানো হয়েছে। যেন সিন্ডিকেটভুক্ত কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে কোন কথা না বলেন। একারনে মমিনুল ইসলাম ক্ষমতার চেয়ারে বসেই টেন্ডার কার্যক্রমে বিশেষ শর্ত জুড়ে দিয়ে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে টেন্ডার কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। যা নিয়ে জনকথা পত্রিকা টেন্ডার প্রকাশের আগেই সংবাদ প্রকাশ করে। কিন্তু টেন্ডার প্রদানের প্রক্রিয়া শেষ দেখা গেছে, ঐ টেন্ডারের কাজটি বিডিটি নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানই পেয়েছে। এতে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন বিষয়টি আলোচনা-সমালোচনা চলে আসে। তবে এসব বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করলে তাদেরকে এব্যাপারে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করতে দেখা যায়নি। এমনি কি লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরেও কোন তদন্ত কার্যক্রম গ্রহন করেনি। বরং প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের ডি-৪ শাখার কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, অভিযোগের নথিই নাকি খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব বিষয় এখনো তদন্ত করলে দুর্নীতির ভয়াবহ তথ্যপ্রমান উঠে আসবে।
এব্যাপারে একাধিকবার চেষ্টা করেও প্রতিরক্ষা সচিবের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পরিচালক মমিনুল ইসলাম বলেন, এগুলো মন্ত্রনালয়ের বিষয়, মন্ত্রনালয় দেখবে।

More News...

ঋণের টাকা লুটের যত আয়োজন

৪ ফকিরের সাম্রাজ্য