স্টাফ রিপোর্টারঃ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালকসহ সিন্ডিকেটভূক্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমান সংযুক্ত অভিযোগ দায়ের করা সত্ত্বেও ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনা সরকারের নিয়োগ প্রাপ্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব আশরাফ উদ্দিন তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনছে না দুর্নীতিবাজদের। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ প্রকল্প পরিচালক আহমেদ আরিফ রশিদের স্ত্রী খাদিজা পারভীন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, যার মাধ্যমে আরিফ রশিদ প্রতিরক্ষার সচিব সহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রালয়ের ডি-ফোরের কিছু অফিসারদের ম্যানেজ করে আসছেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। যে কারণে আবহাওয়াবিদ মমিনুল ইসলামকে অবৈধ প্রক্রিয়া পরিচালক পদে নিয়োগ ও তার স্বজনপ্রীতির টেন্ডার বানিজ্য, দুর্নীতি, পিডি আরিফ রশিদের ২৪৭ কোটি টাকার প্রকল্পের অর্থ হরিলুট, স্বজনপ্রীতির টেন্ডার বানিজ্যের মাধ্যমে ঠিকাদারের নিকট থেকে কোটি টাকার ফ্ল্যাট গ্রহন, টেন্ডারের কোন কাজ না করেই কোটিকোটি টাকার বিল তুলে নিয়ে সটকে পড়া সাবেক পরিচালক আজিজুর রহমানের সীমাহীন দুর্নীতির তথ্যপ্রমান, কোটি কোটি টাকা অডিট আপত্তি দেড় যুগেও বুঝিয়ে না দেয়ার মতো ভয়াবহ তথ্যপ্রমান সব কিছুই দৃশ্যমান হওয়া সত্ত্বেও সচিব আশরাফ উদ্দিন অদৃশ্য কারণে এই দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় না আনায় দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদের পাহাড় প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২০সালে আবহাওয়াবিদ মমিনুল ইসলাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিকল্পনা মহাশাখার তৎকালীন ইনচার্জ থাকাকালীন সময়ে অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরন কেন্দ্রের কনফারেন্স রুম, আইসিটি রুম, এক্সিকিউটিভ রুমের ইনটেরিয়র ডেকোরেশন সহ বৈদ্যুতিক মেরামত ও সংস্কার কাজের ৮৭ লাখ টাকা কোন কাজ না করেই তৎকালীন পরিচালক সামসুদ্দিন আহম্মেদের সাথে সিন্ডিকেট গড়ে আত্মসাৎ করেন। এবিষয়ে তদন্ত পরবর্তী তার নামে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। বিভাগীয় মামলা নং-০১/২০২০। কিন্তু মমিনুল ইসলাম ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব ড. মো: আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি মোটা অংকের টাকা ঘুষের বিনিময়ে মামলা ধামাচাপা দেন। ৫আগষ্ট খুনী হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে ড. মোহাম্মদ ইউনুছ সরকারের সময়ে দেশের সরকারী দপ্তর গুলোতে পদোন্নতির বন্যা বইয়ে গেছে। হাসিনার আমলে অধিকার বঞ্চিত বা চাকুরীচ্যুত হওয়া কর্মকর্তাদের প্রাপ্যতা ফিরিয়ে দিতে চাকুরীতে পূর্ন:বহাল বা পদোন্নতি দেয়ার অন্তরালে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা হাসিনার দোসররা একজন আরেকজন পদোন্নতি দিয়ে এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরের গুরুত্বপূর্ন পদে বসিয়ে দিয়েছেন। এই তালিকায় বাদ পড়েনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ আশরাফ উদ্দিন ৪ধাপ ডিঙ্গিয়ে অর্থাৎ ৭ম গ্রেড থেকে একলাফে ৩য় গ্রেডে এই দুর্নীতিবাজ মমিনুল ইসলামকেই পদোন্নতি দিয়ে পরিচালকের চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছেন। যা আইনের পুরোপুরি লঙ্গণ। তবে গুণজন উঠেছে, আবহাওয়া অফিসের সিন্ডিকেবদ্ধ একাধিক কর্মকর্তার শতশত কোটি দুর্নীতির ফাইল ধামাচাপ দিতে মোটা অংকের টাকা ঘুষের বিনিময়ে সচিব আশরাফ উদ্দিন ম্যানেজ করে মমিনুল ইসলামকে পরিচালক বানানো হয়েছে। যেন সিন্ডিকেটভুক্ত কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে কোন কথা না বলেন। একারনে মমিনুল ইসলাম ক্ষমতার চেয়ারে বসেই টেন্ডার কার্যক্রমে বিশেষ শর্ত জুড়ে দিয়ে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে টেন্ডার কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। যা নিয়ে জনকথা পত্রিকায় টেন্ডার প্রকাশের আগেই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিলো।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মুজিবসেনা আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে অন্তত ৫০কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে। জয়বাংলার শ্লোগান দিয়ে এরা সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। সাড়ে ১৮কোটি টাকার অডিট আপত্তি ধামাচাপা দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছিলেন প্রোমশন, অবসরে গিয়েও কমিশন রানী শেখ রেহনাকে কোটি কোটি ঘুষ দিয়ে কাঠালরানী হাসিনার নির্দেশে পেয়েছিলেন চুত্তিভিত্তিক নিয়োগ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বোচ্চ পদে বসে কলমের খোঁচায় করেছেন অর্ধশত কোটি টাকার দুনীতি। যেখানে প্রতিটি চুরিরই সুনির্দিষ্ট ডুকমেন্ট রয়েছে জনকথার অফিসে। ক্ষমতার অপব্যবহার, চাহিদা তুলনায় অতিরিক্ত ক্রয় দেখিয়ে বিল পরিশোধ, বিধি অনুসারে দাপ্তরিক প্রাকল্পিত ব্যয় নির্ধারণ কমিটি গঠন না করে আইটেম ভিত্তিক প্রাক্কলন প্রস্তুত, পাইলট রেডিওসন্ডি ক্রয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি, চুক্তি মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত বিল পরিশোধ, চুক্তিপত্রে উল্লেখিত সকল যন্ত্রপাতির সরবরাহ না করা সত্ত্বেও বিল পরিশোধ, বাস্তবে কমিশনিং ও প্রশিক্ষণ না করা সত্ত্বেও বিল পরিশোধ, ক্রয় পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত না থাকা সত্ত্বেও ক্রয় দেখিয়ে বিল পরিশোধ, ১২টি স্টেশনের সার্ভিসের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, ১০ টাকার কানেক্টর ১০হাজার টাকায়, ১৫শ টাকার সুইচ ২ লক্ষ টাকায়, ১লক্ষ ৫০হাজার টাকার ইউপিএস ৬লক্ষ ২০হাজার টাকায় কেনাসহ অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করে দুয়েকটি ঠিকাদারী কোম্পানির মাধ্যমে একই পঞ্জিকা বর্ষে একই কোম্পানির মাধ্যমে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা। ২০২১/২২ ও ২২/২৩ অর্থবছরে একই সরবরাহকারীর নিকট থেকে একই মডেল ও উৎপাদনকারীয় ডিজিটাল বায়োমিটার পূর্বের তুলনায় অতি উচ্চ মুল্যে ক্রয় দেখিয়ে বিল পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি করেন ৩৮ লাখ ১১ হাজার ৪৪০ টাকা, চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত মুল্যে ক্রয় দেখিয়ে বিল পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৪ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা। বেষ্ট কোয়ালিটির একটি মডেমের দাম বর্তমান বাজারে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা হলেও আজিজ এটা কিনেছেন ২৫ হাজার টাকা মূল্যে। প্রতিটি মডেম কেনার ক্ষেত্রে আজিজ ও তার সিন্ডিকেট চুরি করেছে ২২/২৩ হাজার টাকা। ডেল কোম্পানীর একটি কম্পিউটার বা পিসি বর্তমান বাজার মূল্য সর্বোচ্চ ৬৮ হাজার টাকা, আজিজ এটা কিনেছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩শ টাকায়। কেনাকাটার এসব সামগ্রী সরেজমিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেই এরূপ শিক্ষিত চুরির ঘটনাগুলোর সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
গায়েবী কেনাকাটায় ৩৬ কোটি টাকা উধাও, ৯কোটি টাকার মেশিনারিজ ১পয়সার কাজে লাগেনি, অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় কোটি কোটি টাকা বিল পরিশোধ, জিনিসপত্র সরবরাহ না করেই বিল পরিশোধের মাধ্যমে লুটেররাণী ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক আহমদ আরিফ রশিদ ও তার সিন্ডিকেট শতকোটি টাকার অধিক দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য প্রমানে উঠে এসেছে। আরিফ রশীদ মোটা অংকের কমিশনের ভিত্তিতে নিজের পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধমে ৮কোটি ৫২লাখ ৯৯ হাজার ৫শ টাকা খরচ করে বাংলাদেশে অপ্রয়োজনীয় অপটিক্যাল রেইনগজ নামক যন্ত্র/মেশিনারিজ ক্রয় করেন। যন্ত্রটি কাজে লাগুক বা না লাগুক তাতে কি আসে যায়। অপ্রয়োজনীয় কিন্তু ব্যয়বহুল এই যন্ত্রপাতি ক্রয় করে আবহাওয়া আফিসে ফেলে রেখেছেন। এটি একদিনের জন্যও কোন কাজে ব্যবহার হয়নি। পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাজ্জাক ইন্টারট্রেডকে প্রায় ৯ কোটি টাকা মূল্যে ১১টি পোর্টাল হাইড্রোজেন জেনারেটর ক্রয় করেন। জেনারেটর কখনো চালুই করা হয়নি। ৫নভেম্বর-২০২০, ১৫ফেব্রুয়ারী-২০২১ এবং ১৭ ফেব্রুয়ারী-২০২১ তারিখে তিনটি এওয়াজ (অটোমেটিক ওয়েদার অবজারবিং সিস্টেম) ক্রয় দেখানো হয়, যার প্রতিটির ক্রয় মূল্য ছিল ২কোটি ৯২ লাখ ৩০ হাজার ৯৬৫ টাকা। অথচ এগুলোর মূল সিস্টেম এখনো অচল হয়ে পড়ে আছে।
এই সিন্ডিকেটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের ডি-ফোর কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, আবহাওয়াবীদ রুবাইয়াত কবির, আবহাওয়াবিদ রাসেদুজ্জামান গংরা সরাসরি জড়িত। এদের অনেকেই দেশে বিদেশে বিশাল পাহাড় সম্পদের গড়ে তুলেছেন। এরা যে কোন সময় এরা দেশ ছেড়ে পালাবে। এখনই এদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।