বড় ভূমিকম্পের আভাস

বড় ভূমিকম্পের আভাস
নিজস্ব প্রতিবেদক:  রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। উৎপত্তিস্থল ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ৪৪৯ কিলোমিটার। উৎপত্তিস্থলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৬। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এ নিয়ে গত ১০ দিনে ৪ বার দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের আশপাশে ও দেশের ভেতরে ছোট বা মাঝারি আকারের ভূমিকম্প বেড়ে যাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে এবং আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ৫৩টি ভূমিকম্প হয়। এটি ছিল আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই উৎপত্তিস্থল ভূমিকম্পের সাবডাকশন জোনে (সিলেট থেকে কক্সবাজার অঞ্চল)। এই জোনে যে বিপুল শক্তি প্রায় হাজার বছর ধরে সঞ্চিত হয়ে আছে, তাতে যেকোনো সময় ৮ দশমিক ২ থেকে ৮ দশমিক ৯ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে। সাম্প্রতিককালে এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের প্রবণতা বেড়ে গেছে। এটি নির্দেশ করে বড় শক্তি বের হওয়ার পূর্ব লক্ষণ। অর্থাৎ বড় ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বাভাস।

আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রুবাঈয়্যাৎ কবীর বলেন, এটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচিত। ভ‚মিকম্পে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। এই ভূমিকম্প সিলেটেও অনুভূত হয়েছে। এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন। সিলেটে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ২টা ৫৫ মিনিটে সিলেটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন, সিলেট অঞ্চলে যে ‘ফল্ট’ রয়েছে, সেটি যে সক্রিয় আছে, বারবার এ রকম ছোট ছোট ভ‚মিকম্প সেই আভাসই দিচ্ছে। বাংলাদেশেও ভূ-অভ্যন্তরে ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চার হচ্ছে। তাই আমরা বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে আছি। এ দেশে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত, পার্বত্য অঞ্চলে বড় মাত্রার ভ‚মিকম্প একসময় হবে। বিশেষ করে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চল।

তবে ঢাকা থেকে ভ‚মিকম্পের উৎপত্তিস্থল ১০০ কিলোমিটার দূরে হলেও ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে। ভূমিকম্পে ঢাকা শহর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে। ভূমিকম্পের জন্য যেসব উপাদান কাজ করে এর অন্যতম হলো অধিক জনসংখ্যা ও ঘনবসতি। ঢাকায় স্থানভেদে প্রতি কিলোমিটারে ২৫ থেকে ৫০ হাজার লোক বসবাস করে। নিম্নাঞ্চল ভরাট করে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ ভূমিকম্পে কোনোভাবেই নিরাপদ নয়।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, একটি আদর্শ নগরে ২৫ শতাংশ খোলা জায়গা থাকে। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের পর নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে প্রয়োজনীয় খোলা জায়গা নেই ঢাকা শহরে। ঘনবসতির ঢাকা শহরটির ভূমিকম্প ঝুঁকি কমাতে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও তার বেশিরভাগই আলোর মুখ দেখেনি। তা ছাড়া ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মেনে চলার নির্দেশনা থাকলেও রাজধানীসহ অন্যান্য মহানগরীর বেশিরভাগ ভবন মালিকই তা মানেন না।

এ বিষয়ে আইন হওয়ার প্রায় ১৫ বছর পরও এটি ঠিকমতো বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার আশপাশে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে রাজধানীতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ভূমিকম্পের সাবডাকশন জোনে (সিলেট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত) গত এক হাজার বছরে বড় ধরনের ভ‚মিকম্প হয়নি। এই জোনে বিপুল শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে। সেটি পরিমাপ করে আমরা দেখেছি ৮ দশমিক ২ থেকে ৮ দশমিক ৯ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি সঞ্চিত আছে। যেকোনো সময় এই শক্তিটা বের হতে পারে।

তিনি বলেন, এই শক্তিটা আংশিক বের হতে পারে। ধাপে ধাপে বের হতে পারে। আবার একবারেও বের হতে পারে। সাবডাকশন জোন থেকে যখন ভ‚মিকম্প হয় তখন ৭০-৮০ শতাংশ শক্তি একবারে বের হয়ে যায়। বাকি শক্তি আস্তে আস্তে বের হয়। সাবডাকশনে এই জোনের মধ্যে আবার দুটি ভাগ আছে। একটা হলো লক জোন, যেটি আমাদেরই অংশ। আমাদের অংশে ভূমিকম্পের প্রবণতা কম। ভূমিকম্প হয়। তবে ঘনঘন ভূমিকম্প হয় না। অতীতে আমরা দেখেছি খুব একটা ভূমিকম্প হয়নি। ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েছে। কিন্তু গত দুই বছরে ভূমিকম্পের প্রবণতা বাড়ছে। সাম্প্রতিককালে এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের প্রবণতা বেড়ে গেছে। এটি নির্দেশ করে বড় শক্তি বের হওয়ার পূর্ব লক্ষণ। অর্থাৎ বড় ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বাভাস।
নগরবিদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, ভূমিকম্প মোকাবিলায় আমাদের এখনও অনেক ঘাটতি রয়েছে। যেহেতু ভূমিকম্পের আগাম কোনো সতর্ক বার্তা পাওয়া যায় না সে কারণে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। যেসব ভবন বিল্ডিং কোড মেনে করা হয়নি বা ভূমিকম্প সহনীয় নয় সেগুলোর বিষয়ে দ্রুত সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজউক, সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নির্মাণাধীন ভবনগুলো বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হচ্ছে কি না কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে তদারকি জোরদার করতে হবে।

তিনি বলেন, বিল্ডিং কোড না মানায় ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্পে দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে।

More News...

পালিয়ে থেকে সম্পত্তি বেচতে ক্রেতা খুঁজছেন নসরুল হামিদ

ঋণের টাকা লুটের যত আয়োজন