গচ্চা যাবে ৭০ কোটি টাকা

গচ্চা যাবে ৭০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক:মেগা প্রকল্প থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বাদ দেওয়া হয় প্রকল্প পরিচালক মাকসুদুল ইসলামকে। তার বিরুদ্ধে মামলাও করে দুদক। এরপর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া হোসেনকে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করেছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত এটি অনুমোদন না করায় তার সাইনিং পাওয়ার নেই। ফলে বেবিচককে গচ্চা দিতে হবে ৭০ কোটি টাকারও বেশি। যত সময় গড়াবে গচ্চার পরিমাণ ততই বাড়বে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আড়াই মাস ধরে থার্ড টার্মিনালে প্রকল্প পরিচালক নেই। জাকারিয়া হোসেনকে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দিয়ে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করে বেবিচক। কিন্তু এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়নি। ফলে জাকারিয়া হোসেন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও তার কোনো সাইনিং পাওয়ার নেই। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে থার্ড টার্মিনালের কাজ। চেক স্বাক্ষর করতে না পারায় বিল দেওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে বিল পরিশোধের জন্য বেবিচককে চিঠি দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার জন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন না পৌঁছানোয় জাকারিয়া হোসেনের বিষয়ে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া জাকারিয়া হোসেনের চাকরিতে নিয়োগে অসঙ্গতির অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর এই অসঙ্গতি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বেবিচকের সদস্য এয়ার কমোডর জিয়াউল হক। দুজন সদস্য হলেন প্রধান প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান ও পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্রপতির আদেশে ১৯৯৬ সালে বোর্ডিং ব্রিজ প্রকল্পে ‘প্রকল্প আছে চাকরি আছে, প্রকল্প শেষ, চাকরি শেষ’ শর্তে মো. জাকারিয়া হোসেনকে সহকারী প্রকৌশলী ইলেকট্রনিক্স পদে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই আদেশে আরও চার প্রকৌশলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরা হলেন আছালত, আয়শা, সফিকুল, শাহিনুর। ২০১০ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু এদের চাকরি ২০২৪ সালেও শেষ হয়নি, চাকরির অসঙ্গতি দূরীকরণে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।

জানা যায়, পাঁচ মন্ত্রণালয়ে কাঠখড় পুড়িয়ে এদের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য বেবিচক থেকে দাফতরিক চিঠি চালাচালি শুরু হয়। তৎকালীন সংস্থাপন, আইন ও অর্থ মন্ত্রণালয় এতে আপত্তি তোলে। পরে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এদের রাজস্ব খাতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু এদের পদ পরিবর্তন করে নতুন করে নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি, প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।

প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে দ্বিতীয়বার এদের পদ পরিবর্তন করে চাকরি হলো কোন সরকারি বিধিতে? যা আগের পদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে অনেকে মনে করেন।

২০১১ সালে আগের পদের সঙ্গে মিল না রেখে জাকারিয়াকে (আগের পদ সহকারী প্রকৌশলী ইলেকট্রিক্যাল) সহকারী প্রকৌশলী ইএম পদে চাকরি স্থায়ী করা হয়।

১১-১২ মাসের মাথায় ‘নির্বাহী প্রকৌশলী’ পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। ১৮-০৫-২০২১ তারিখে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। ১১ থেকে ১২ মাসের মাথায় আবার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি প্রদান করে এসই (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) হিসেবে জাকারিয়াকে ইএম ১/২-এর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। দেওয়া হয় থার্ড টার্মিনালের ডিপিডির দায়িত্ব। শুধু তাই নয়, জাকারিয়াকে প্রধান প্রকৌশলী করার জন্য ক্লিয়ারেন্স চেয়ে দুদকে দাফতরিক চিঠি পাঠানো হয়।

বেবিচক বলছে, চলতি সপ্তাহে মন্ত্রণালয় থেকে পিডি নিয়োগের বিষয়ে চিঠি আসবে। পিডি নিয়োগে দেরি হলেও সমস্যা হবে না। ঠিকাদারকে বাড়তি টাকা দিতে হবে না। ঠিকাদারের সঙ্গে এ বিষয়ে সমঝোতা রয়েছে।

থার্ড টার্মিনাল কবে চালু হবে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া সময়ের আলোকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি এই বছরের শেষ দিকে অক্টোবরের মধ্যে চালু করতে। ছোটখাটো জটিলতা রয়েছে, পিডি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এ জন্য কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা কাজের স্পিড বাড়িয়ে বছরের শেষ দিকে চালু করতে চাই। তিনি বলেন, আমরা এখনও নতুন পিডি নিয়োগ দিতে পারিনি। গত দেড় মাস ধরে পিডি নেই। চেক ইস্যু করা যাচ্ছে না। এ জন্য পিছিয়ে যাচ্ছি। জাকারিয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি আসেনি। আশা করছি কাল-পরশুর মধ্যে চিঠি চলে আসবে।

পিডি না থাকায় অতিরিক্ত পেমেন্টের বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকাদারেরও তো সময় বাড়ানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা আছে। আলাদা বেশি পেমেন্ট করতে হবে না। এটি একটি বিশেষ পরিস্থিতি, এটি তারা (ঠিকাদার) জানেন।

More News...

পালিয়ে থেকে সম্পত্তি বেচতে ক্রেতা খুঁজছেন নসরুল হামিদ

ঋণের টাকা লুটের যত আয়োজন