মুখে মধু অন্তরে বিষ

মুখে মধু অন্তরে বিষ

নিজস্ব প্রতিবেদক:বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) গুলিতে মৃত্যুর ঘটনার লাগাম টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। সীমান্ত সম্মেলন, পতাকা বৈঠক ও রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক আলোচনায় বারবার সীমান্তে গুলি ও হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও সেটি কার্যকর করে না ভারত। ফলে পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘ কয়েক বছরের নতজানু কূটনৈতিক নীতি উপেক্ষা করে বাংলাদেশ সীমান্ত হত্যার ক্ষেত্রে ভারতকে কড়া প্রতিবাদ ও হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেও এটি থামছে না। উল্টো সীমান্তে বেড়া স্থাপনসহ নানা ইস্যুতে বিভিন্ন সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সে সঙ্গে দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর তালিকা। গত ৯ বছরে ঝরেছে ৩০৮ বাংলাদেশির প্রাণ। বিএসএফের মাধ্যমে নির্যাতন ও অপহরণের শিকার হয়েছে আরও শত শত মানুষ। বিশ্লেষকরা একে ‘মুখে মধু অন্তরে বিষ’ হিসাবে আখ্যা দিচ্ছেন।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, অতীতে ভারত বাংলাদেশকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বললেও সীমান্ত হত্যা থামায়নি। বর্তমানে ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়াসহ নানা ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা ফাটল ধরায় আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত হত্যা থামার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে।

তবে দুই দেশের সরকার চাইলেই সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজিবি ও বিএসএফ শুধু ‘নো-ভায়োলেন্স উইপেন’ (মারণাস্ত্র নয় এ রকম অস্ত্র) ব্যবহার নিশ্চিত করলেই সীমান্তে হত্যার ঘটনা ঘটবে না। তবে যারা অবৈধভাবে সীমান্ত পার হতে চাইবে বা চোরাচালান করতে যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে আড়ালে থেকে যাওয়া চোরাকারবারের গডফাদারদের গ্রেফতার করতে হবে। যাতে চোরাকারবারের বাহক সৃষ্টি হতে না পারে।
সবশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আল আমিন (৩২) নামে বাংলাদেশি এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনার পর আবারও আলোচনায় আসে সীমান্ত হত্যার ঘটনা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্ত হত্যা বন্ধে গত ১ মার্চ কক্সবাজারে ৬৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটুক আর যাই ঘটুক, হত্যা কোনো চূড়ান্ত সমাধান হতে পারে না। বিএসএফ সীমান্ত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রাখলে আরও কঠোর অবস্থানে যাবে বিজিবি।’

একই অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যাপারে কয়েক দিন আগে অনুষ্ঠিত বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তারপরও সীমান্ত হত্যার মতো ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এটি কমানোর জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেহেতু এটি পুরোপুরি আমাদের হাতে নেই কারণ অস্ত্রটা তো তারা ব্যবহার করছে। আপনারা যা চাচ্ছেন আমি তো সেটি অফিসিয়ালি বলতে পারছি না।’

তিনি কঠোর বার্তা দিয়ে বলেন, ‘যদি ভারতে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের হত্যা করা হয়, তা হলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিও কঠোর হতে পারে বিজিবি।’ সীমান্তে ফেলানীর মতো হত্যাকাণ্ড আর দেখতে চান না বলেও গত সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, ‘এতদিন সীমান্তে হত্যা হয়েছে কিন্তু বিজিবিকে ফ্ল্যাগ মিটিং (পতাকা বৈঠক) ছাড়া আর কিছুই করতে দেওয়া হয়নি। এসব দিন শেষ হয়ে গেছে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত চার দিনব্যাপী ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি-বিএসএফ সীমান্তে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো, হত্যা, আহত বা মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিষয়ে একমত হলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।’

এ ছাড়াও সম্প্রতি বাংলাদেশের কয়েকটি জেলার সীমান্তে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে আপত্তি তোলার পর সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলা সংলগ্ন সীমান্তের ভারতের দিকের অংশে বেড়া নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশ অংশ থেকে বাধা দেওয়া হয়। আর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামে সীমান্তে কয়েক দফায় বেড়া স্থাপনের চেষ্টা চালায় বিএসএফ। তবে বিজিবি সদস্যদের বাধার মুখে তা আর পারেনি। হঠাৎ কেন সীমান্তে বিএসএফ এমন তৎপর হলো, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। তাদের এ কার্যকলাপের ইঙ্গিতই বা কী, সেটি বোঝার চেষ্টা করছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১ মার্চ বিকালে উপজেলার কুরুষা ফেরুষা সীমান্তের ৯৩৬ নম্বর মেইন পিলারের পাশে ভারতীয় বসকোঠাল এলাকায় নোম্যান্স ল্যান্ডে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাকিল আলম জানান, যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধ এবং দুই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষার্থে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক শেষে বিএসএফ-বিজিবির অধিনায়ককে কাঁটাতারের বেড়া পরিদর্শন করান।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বহু পুরোনো এবং প্রতিনিয়ত ঘটছে। এর প্রধান সমস্যা চোরাচালান, আত্মীয়তার বন্ধনে দেখা করতে যাওয়াসহ নানা কারণে আমাদের নাগরিকরা সেখানে যায়। যেহেতু ভারতীয়রা অবৈধভাবে বাংলাদেশ সীমান্তে আসে না, সে ক্ষেত্রে বিএসএফ হার্ড লাইনে হাঁটছে। বাংলাদেশিদের সীমান্তে দেখলেই মারণাস্ত্র দিয়ে গুলি করছে অথবা ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশিরা যে শুধু চোরাচালানের জন্য ভারত সীমান্তে যান বিষয়টি একতরফা সেটিও নয়। দেখা যায়, পরিবারের সদস্যদের দুই ঘর দুই দেশে পড়েছে। মাঝখানে সীমান্ত রেখা। এ অবস্থায় তাদের সীমান্ত অতিক্রম করা ছাড়া উপায় থাকে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একেক সীমান্ত ঘিরে একেক ধরনের চোরাচালান হয়। এসব ক্ষেত্রে কিছু কৌশল নেওয়া যেতে পারে। যেমন যেসব পণ্য চোরাই পথে আনা হয় সেগুলো বৈধভাবে আমদানি বাড়িয়ে দিলে চোরাকারবারিরা নিরুৎসাহিত হবে। তবে মাদক ও গরুর পাচারের ক্ষেত্রে তেমন কিছু করার নেই। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের চোরাকারবারিরা এবং কিছু ক্ষেত্রে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরাও জড়িত থাকে। যখন হিসাব মেলে নাÑতখন বিএসএফ গুলি চালানো শুরু করে। সুতরাং সীমান্ত হত্যা থামাতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গভীর করে নো-ভায়োলেন্স উইপেন (মারণাস্ত্র নয় এ রকম অস্ত্র) ব্যবহার করতে হবে। এতে করে পাচারকারীরা আহত হয়ে আইনের আওতায় এলেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে না।

কলকাতার মানবাধিকার সংগঠন ‘বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের’ (মাসুম) সম্পাদক কিরীটী রায় সময়ের আলোকে বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সীমান্তগুলোর একটি। এর প্রধান কারণ বিএসএফ সরাসরি গুলি চালায়। অথচ ভারতের সঙ্গে নেপাল, ভুটান এমনকি পাকিস্তান সীমান্তেও এ রকম চিত্র নেই। ভারত সরকার প্রতিশ্রুতি দেয়Ñসীমান্তে প্রাণঘাতী বুলেট ব্যবহার হবে না। কিন্তু সেটি আর বাস্তবায়ন হয় না। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরে গিয়ে সীমান্ত হত্যা বন্ধের চুক্তি করলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। বিষয় হচ্ছে আগে যা বন্ধ হয়নি এখন সেটি কীভাবে করা যায়? মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমরা মনে করি, সীমান্ত হত্যা হলে কাগজে-কলমে প্রতিবাদ জানানো হলেও এটি বন্ধ করতে দুই দেশের সরকারের মধ্যে সে রকম কোনো উদ্যোগ নেই। কারণ উদ্যোগ থাকলে দুই হাজার কিলোমিটার দূর থেকে রাজস্থানের গরু পাচার হওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গেও সীমান্তে আসতে পারত না। পাশাপাশি দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরাই দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ায় চোরাচালান থামানো যাচ্ছে না। এই চোরাচালানের মূল হোতারা অধরা থেকে যাওয়ায় সীমান্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছে মানুষ। আর বিএসএফের গুলিতে প্রাণ দিচ্ছে।’

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সীমান্তে বিএসএফের হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন দুজন। ঘটনা দুটিই ঘটেছে সিলেট সীমান্তে। একজনকে গুলি করে, অন্যজনকে শারীরিক টর্চার করে হত্যা করা হয়। জানুয়ারিতে সীমান্তে আহত হয়েছেন ৭ জন। এরা সবাই রাজশাহী সীমান্তে বিএসএফের টার্গেটের শিকার হয়েছিলেন। ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সীমান্তে হত্যার শিকার হন ৩০ জন। এর মধ্যে গুলিতে ২৫, শারীরিক টর্চারে ৪ জন ও বিএসএফের তাড়া খেয়ে মারা গেছেন একজন। এ বছর সীমান্তে আহত হয়েছেন ২৫ জন, বিএসএফ কর্তৃক অপহরণের শিকার হয়েছেন ৩ জন। বছরটিতে সবচেয়ে বেশি নিহত ও আহতের ঘটনা ঘটেছে রংপুরে। বছরটিতে রংপুরে নিহত হয়েছেন ১১ জন ও আহত হয়েছেন ৯ জন। ৩ জন অপহরণের মধ্যেও দুজন রংপুরের। নিহতের ঘটনায় রংপুরের পরেই রয়েছে সিলেট ৬ জন। এরপর চট্টগ্রাম ও খুলনায় ৪ জন করে ৮ জন এবং রাজশাহীতে ৩ জন ও ময়মনসিংহে ১ জন নিহত হয়েছেন।

২০২৩ সালে সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৩১ জন। এর মধ্যে গুলিতে ২৮ জন, টর্চারে একজন ও বিএসএফের ধাওয়া খেয়ে দুজন নিহত হন। আহত হন ৩১ জন। এ বছরটিতেও সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে রংপুরে। ৩১ জনের মধ্যে ১৪ জন নিহত ও আহত ৩১ জনের মধ্যে ১৮ জন আহত হয়েছেন রংপুরে। এ ছাড়াও রাজশাহীতে ৭, খুলনায় ৬ ও সিলেটে ৪ জন হত্যার শিকার হন। ২০২২ সালে সীমান্ত হত্যার শিকার হয়েছেন ২৩ জন। এর মধ্যে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৬ জন, বিএসএফের শারীরিক টর্চারে নিহত হয়েছেন ৪ জন, বিএসএফের তাড়া খেয়ে মারা গেছেন দুজন, একটি হত্যার কারণ অজ্ঞাত রয়েছে। এ বছর আহত হয়েছেন ১৫ জন ও অপহরণের শিকার হয়েছেন ১১ জন। ২০২২ সালেও নিহত, আহত ও অপহরণের সংখ্যায় এগিয়ে রংপুর। বছরটিতে রংপুরে নিহত হন ১০ জন, আহত হন ৯ জন ও অপহরণের শিকার হন ৭ জন।

২০২১ সালে সীমান্তে হত্যা করা হয় মোট ১৯ বাংলাদেশিকে। এর মধ্যে ১৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০২০ সালে হত্যা করা হয় ৪৯ জনকে। তাদের মধ্যে গুলিতে নিহত হন ৪২ জন। ২০১৯ সালে মোট ৪৩ জনকে হত্যা করা হয়। গুলি করে হত্যা করা হয় ৩৭ জনকে। ২০১৮ সালে মোট হত্যা করা হয় ১৪ জনকে। সে বছর গুলিতে প্রাণ গিয়েছিল ৮ জনের। এর আগে ২০১৭ সালে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ৩১০ জনকে সীমান্তে হত্যা করা হয়েছে। যদিও কলকাতার মানবাধিকার সংগঠন মাসুম বলছে, বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি। গড়ে বছরে সীমান্ত হত্যার সংখ্যা দুই শতাধিক হতে পারে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় পুটিয়া সীমান্তের ২০৫০ নম্বর পিলার এলাকায় বিএসএফের গুলিতে আল আমিন নামে বাংলাদেশি এক তরুণের মৃত্যু হয়। নিহত আল আমিন পুটিয়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে।

নিহতের স্ত্রী তারিন আক্তার জানান, তাদের বিয়ের মাত্র ছয় মাস হয়েছে। তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। তার গর্ভে রয়েছে দুই মাসের অনাগত সন্তান। কি হবে অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎÑসে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

৬০ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্ট্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমান বলেন, বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ আল আমিন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছিল বিএসএফ। এরপর আল আমিনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় ১ মার্চ সকালে। এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

গত ৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকায় জহুর আলী (৫৫) নামের এক বাংলাদেশি ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে বিএসএফের বিরুদ্ধে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে।

এর আগে মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্তে গত ২২ ডিসেম্বর গোপাল নামে এক চা শ্রমিকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের দাবি, পাহাড় থেকে বাঁশ আনার সময় অসাবধানে সীমান্তের জিরো লাইনের কাছে চলে গেলে গোপালকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। এ সময় তার সঙ্গে থাকা অন্য শ্রমিকরা পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সীমান্তে গত ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিএসএফের গুলিতে কামাল হোসেন নামে এক বাংলাদেশি তরুণ নিহত হন। হত্যার পর তার লাশ নিয়ে যায় বিএসএফ। ২৬ ঘণ্টা পর তার লাশ ফেরত দেওয়া হয়।

কামাল হোসেনের পরিবারের সদস্যরা বলেন, কামাল পিঁপড়ার বাসা ভেঙে পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করতেন। এতে যা আয় হতো, তা দিয়েই সংসার চলত। তিনি কোনো ধরনের চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

পঞ্চগড়ে  বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত : পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, পঞ্চগড় সদর উপজেলার ভিতরগড় সীমান্তের সুইডাঙ্গা এলাকার বিপরীতে ভারতের খালপাড়া এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।

তার নাম আল-আমিন (৩৬)। তার বাড়ি সদর উপজেলার হরিভাষা ইউনিয়নের জিন্নাতপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে।

বিজিবি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আল-আমিন গত তিন দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। শুক্রবার (৭ মার্চ) ভোররাতে আল-আমিনসহ ১০-১৫ জনের একটি দলকে ভারতীয় ভাটপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের টহল দল দেখে ফেলে। এ সময় বিএসএফ তাদের ওপর গুলি চালায়। অন্যরা পালিয়ে আসতে পারলেও আল-আমিন গুলিতে নিহত হন। পরে বিএসএফ তার মরদেহ ভারতে নিয়ে যায়।

খবর পেয়ে সকালে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা সীমান্ত পিলার ৭৪৪/৭-এস এলাকায় ভারতের ৪৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করেন। পতাকা বৈঠকে এ ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে মরদেহ ফেরতের আহ্বান জানান।

More News...

পালিয়ে থেকে সম্পত্তি বেচতে ক্রেতা খুঁজছেন নসরুল হামিদ

ঋণের টাকা লুটের যত আয়োজন