বাংলাদেশে বছরে কিডনি রোগে ১৭ হাজারের ও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
নগর প্রতিবেদক
গত মার্চ ১১, ২০২৫ রোজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে কিডনি বিষয়ক বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন (কিডনি অ্যাওয়্যারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) ও বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশনের যৌথ আয়োজনে কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণঃ প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম.এ.সামাদ।
তিনি তাঁর উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলেন-বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর তথ্য অনুযায়ী কিডনি রোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর কারণ গুলোর মধ্যে একটি অন্যতম। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কিডনি রোগের প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষ করে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থুলতার মতো অসংক্রামক রোগের কারণে- বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ শুধু দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। এই সংখ্যা ডায়াবেটিস রোগীদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ এবং ক্যান্সার রোগীদের চেয়ে প্রায় বিশগুণ, ১৯৯০ সালে মৃত্যুর কারণ হিসেবে কিডনি রোগ ছিল ১৯তম স্থানে, বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭ম স্থানে। এভাবে বাড়তে থাকলে ২০৪০ সালে দখল করে নেবে ৫ম স্থান। আবার উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশে কিডনি রোগের হার সবচেয়ে বেশি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক। তথ্যমতে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ লোক কোন না কোন কিডনি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রতি বছর ৪০ হাজার কিডনি রোগী ডায়ালাইসিসের উপর নির্ভরশীল হয়। শহর ও গ্রামাঞ্চলে সমান ভাবে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। দারিদ্র, অসচেতনা ও চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এই সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এর উপর ২৪ থেকে ৩০ হাজার রোগী হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে সাময়িক ডায়ালাইসিসে, প্রয়োজন হয়। এই রোগে আমাদের দেশের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা। পক্ষান্তরে, সবাই যদি কিডনি রোগের ব্যাপকতা, ভয়বহতা পরিনীতি ও কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং স্বাস্থ্য সম্মত জীবন যাপন করে তা হলে ৬০-৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এই মরনঘাতী কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে গত মার্চ ১৩, ২০২৫ এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অফ হেলথ মেট্রিক্স এন্ড ইভ্যালুয়েশন, দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময়ের গবেষণার মাধ্যমে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। উক্ত গবেষণা প্রতিবেদনে ৯ ধরণের কিডনি রোগের কারণে বাংলাদেশে বছরে ১৭০৭৮ জন মানুষ মারা যায় বলে জানায়। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে মারা যায় ৪৪৯৯ জন। উচ্চ রক্তচাপে মারা যায় ৩০১২ জন। আর টাইপ-১ ডায়াবেটিসে মারা যায় ১১১৫ জন। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে মারা যায় ২১৭৯ জন। বিভিন্ন ধরণের কিডনিজণিত সমস্যায় মারা যায় ৪৩৭০ জন। বিভিন্ন ধরণের ইউরোলজিক্যাল সমস্যায় মারা যায় ৮৫০ জন। কিডনি ক্যান্সারে মারা যায় ৮১৩ জন। কিডনি পাথরে মারা যায় ২১৮ জন ও কিডনি প্রদাহজণিত কারণে মারা যায় ২২ জন।
কিডনি রোগের সাধারণ কারণগুলো হলোঃ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, স্থুলতা, নেফ্রাইটিস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস, ধূমপান, ব্যাথানাশক, ঔষধের অতিরিক্ত ব্যবহার, জন্মগত ও বংশগত কিডনি রোগ, মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ, পাথুরে রোগী। আমরা একটু লক্ষ করলেই বুঝতে পারবো যে, প্রায় সবগুলো কারণই আমাদের অস্বাস্থ্যকর জীবন ধারার সাথে জড়িত, একটু সচেতন হলে প্রতিরোধ যোগ্য। তাছাড়া যারা ঝুঁকিতে আছেন যেমন যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, ওজন বেশী, বংশে কিডনি রোগ আছে, যারা ধুমপায়ী যারা তীব্র ব্যাথার ঔষধ খেয়েছেন, যাদের পূর্বে কোন কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে, তাদের বছরে অন্তত ২ বার প্রসাব ও রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে নেওয়া উচিৎ। কেননা প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ সনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব এর জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা।
উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে বিজ্ঞ প্যানেল আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন শাহ সানাউল হক, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। মাহবুব মোর্শেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)। ডাঃ সৈয়দ জাকির হোসেন, লাইন ডাইরেক্টর, নন-কমিউনিকেবল ডিজিজি কন্ট্রোল (এনসিডিসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডাঃ মোঃ হালিমুর রশিদ, লাইন ডাইরেক্টর (সিডিসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধ্যাপক ডাঃ নজরুল ইসলাম, সভাপতি বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশন। অধ্যাপক ডাঃ আফরোজা বেগম, সভাপতি, পেডিয়াট্রেক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ। মিস রোকেয়া ইসলাম, কবি ও কথাসাহিত্যিক, চেয়ারম্যান, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র। সিরাজুল ইসলাম , প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র। হাসান হাফিজ সভাপতি, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সম্পাদক দৈনিক কালের কন্ঠ, প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ। এছাড়াও গোলটেবিল বৈঠকে সরকারি পর্যায়ের নীতি নির্ধারক, চিকিৎসক, বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।