ভোটের দিনক্ষণ ঠিক হলে দেশে ফিরবেন তারেক

ভোটের দিনক্ষণ ঠিক হলে দেশে ফিরবেন তারেক

নিজস্ব প্রতিবেদক: গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর একে একে সব মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিচারিক আদালতে তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই। তাই কেটে গেছে দেশে ফেরার বাধাও। এমন প্রেক্ষাপটে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রশ্ন, তবুও কেন ফিরছেন না বিএনপির শীর্ষ নেতা? তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল অর্থাৎ ভোটের দিনক্ষণ ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তিনি দেশে ফিরছেন না।

সবশেষ গেল সপ্তাহে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা একটি মামলা থেকে খালাস পান তারেক রহমান। এখন তার নামে আর কোনো মামলা নেই। বিএনপিপন্থি আইনজীবী বোরহান উদ্দিন জানান, তারেক রহমানের দেশে ফিরে রাজনীতি করতে আর কোনো বাধা নেই।

খালেদা জিয়া ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেকের বিরুদ্ধে এক-এগারো সরকার এবং পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার বহু মামলা দিয়েছিল। তার আইনজীবী ব্যারিস্টার জাকির হোসেন বলেন, এক-এগারো সরকার এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তারেকের বিরুদ্ধে ৮৪-৮৫টি মামলা করা হয়েছিল। এরমধ্যে অন্যতম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, অবৈধ সম্পত্তির মামলা, সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিং মামলা, নড়াইলে মানহানির মামলা এবং ঢাকার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। এ ৬টি মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছিল কিন্তু আপিল বিভাগ সব মামলাতেই তার পক্ষে রায় দিয়েছেন।

এক-এগারোর সরকারের সময়ে গ্রেফতারের পর তারেক রহমান ১৮ মাস কারাগারে ছিলেন। এরপর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের জামিনে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি পান এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারকে নিয়ে লন্ডনে যান। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি।

তারেক রহমানের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ড. মাহদি আমিন কয়েক দিন আগে সময়ের আলোকে বলেন, শীর্ষ এই নেতার নামে কোনো মামলা নেই, এটা স্বস্তির খবর। কিন্তু তারেক রহমান শুধু নিজের কথা চিন্তা করছেন না। তিনি সব নেতাকর্মীর কথা ভাবছেন। প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। তাদের মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার চান তারেক রহমান। সবকিছু ঠিকটাক থাকলে তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন।

লন্ডন ও ঢাকার দায়িত্বশীল নেতারা জানান, নির্বাচনের আগে ফিরতে চান তারেক রহমান। তফসিল ঘোষণার পর দেশে ফিরতে পারেন তি‌নি। নেতারা আরও জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলেও তারেক রহমান বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে পুরোপুরি অনুকূল মনে করতে পারছে না। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ না হওয়া পর্যন্ত দেশে ওয়ান-ইলেভেনের আশঙ্কা থাকছে বলে তিনি মনে করেন। রাজনৈতিক কারণেই এ মুহূর্তে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিরাপদ মনে করছেন না ঘনিষ্ঠজনরা।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক সম্প্রতি সময়ের আলোকে বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার সময় নিয়ে এখনও নিশ্চিত বলতে পারছি না। ম্যাডাম খালেদা জিয়া ফেরার কিছু দিন পর হয়তো তিনি দেশে ফিরবেন। একসঙ্গে দুজন অবশ্যই যাবেন না।

খালেদা জিয়া ফেরা নিয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি বলেন, ‘আগামী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি তিনি দেশে ফিরবেন। আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিলাম ঈদ করে দেশে ফিরতে। তিনি আমাদের অনুরোধ রেখেছেন। এখন তিনি ঈদের পর এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশে ফিরবেন।

মালেক বলেন, এখানে ফ্লাইটেরও একটি বিষয় আছে। ফ্লাইট যদি নির্ধারিত সময়ে না পাওয়া যায়, তা হলে দুয়েক দিন এদিক-সেদিক হতে পারে। তবে ম্যাডাম দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য সময়ের আলোকে বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন ধোঁয়াটে। এ সময়ে হাইকমান্ডের দেশে আসা আমরা সেইফ মনে করছি না। সরকারের তরফ থেকেও গ্রিন সিগনাল পাওয়া যাচ্ছে না। দিন দিন নানা সংকট সামনে আসছে। এখন ভোটের দিনক্ষণ ঠিক না হলে তারেক রহমান হয়তো দেশে ফিরবেন না। অবশ্য রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। এখন দেশে ফিরলে গ্রেফতারের ঝুঁকি আছে কি না? জবাবে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আশঙ্কা তো একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কেননা বিএনপির বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র অব্যাহত।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, উপযুক্ত সময় যখন হবে তখনই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। শনিবার গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ওনার ফেরার বিষয়ে আমরা এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নির্ধারণ করিনি। আমাদের যখন মনে হবে যে, উপযুক্ত সময় সেই সময়ে তিনি আসবেন।

ঈদের পর ফিরবেন খালেদা জিয়া: খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য শনিবার সময়ের আলোকে বলেন, এ বয়সে শতভাগ সুস্থ হওয়া তো আর সম্ভব নয়। ম্যাডামের অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ আগের চেয়ে অনেক ভালো। স্বাস্থ্যের ফলোআপ চলছে নিয়মিত। এখন কিছুটা হাঁটাচলা করতে পারেন। ছেলের বাসায় নাতনিদের সঙ্গে মানসিকভাবে বেশ ভালো আছেন। তবে তিনি লন্ডন থাকতে চান না। বলা যায় ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতনিরা জোর করে তাদের সঙ্গে রাখছে। ম্যাডাম দেশে ফিরতে চান দ্রুত। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ঈদের সপ্তাহদুয়েক পর দেশে ফিরবেন।

এ চিকিৎসক বলেন, ওনার মূল কিডনিতে যে সমস্যা ছিল তার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। অন্য জটিলতাও কমছে। আর আগেই বলেছি স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে লিভার প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে ম্যাডাম দেশে ফিরে বেড রেস্টেই থাকবেন। হয়তো ভার্চুয়ালি গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবেন। বাসায় কিছু ক‚টনৈতিক বৈঠক করতে পারেন। স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে মেডিকেল বোর্ড জনসম্মুখে কোনো কর্মকাণ্ড করতে সরাসরি বারণ করেছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সফরসঙ্গী ও উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী সময়ের আলোকে জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঈদুল ফিতরের পর দেশে ফিরবেন। তবে দেশে ফেরার তারিখ সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরা বাসায় এসে তাকে ফলোআপ করছেন নিয়মিত। তার শারীরিক অবস্থা বেশ ভালো। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো সময় কাটাচ্ছেন তিনি।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার ১৫ জন সফরসঙ্গীর মধ্যে বেশিরভাগই দেশে ফিরে এসেছেন এরই মধ্যে। বাকিরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরবেন। মেডিকেল বোর্ডের মধ্যে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডেএম জাহিদ হোসেনই একমাত্র লন্ডনে আছেন। মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এফ এম (ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ) সিদ্দিক, অধ্যাপক নরুদ্দিন আহমেদ, জাফর ইকবাল ও সবশেষ ডা. মোহাম্মদ আল মামুন দেশে ফিরে এসেছেন।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমান ফেরার সম্ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ম্যাডামের সঙ্গে ছেলে তারেক রহমানের ফেরার সম্ভাবনা নেই। তারেক রহমানের ফেরা নির্ভর করছে রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ওপর।

More News...

পালিয়ে থেকে সম্পত্তি বেচতে ক্রেতা খুঁজছেন নসরুল হামিদ

ঋণের টাকা লুটের যত আয়োজন