আলোকিত সংঘমনীষা প্রয়াত মৈত্রীজ্যোতি স্থবিরের জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন
স ম জিয়াউর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে :
ঐতিহ্যবাহী রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলাধীন ১নং বেতবুনিয়া মডেল ইউনিয়নের সোনাইছড়ি ত্রিরত্ন বৌদ্ধ বিহারের সুযোগ্য বিহারাধিপতি,পণ্ডিত প্রবর, মহান ত্যাগী ধর্ম-বিনয়াধারী, শীল-সমাধি প্রজ্ঞা, সাধনায়রত, আলোকিত সংঘমনীষা প্রয়াত মৈত্রীজ্যোতি স্থবিরের জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া গতকাল ৪-৫ দুই দিনব্যপী এপ্রিল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়।
১ম পর্বে সকালে সভাপতিত্ব করেন পশ্চিম লুঙ্গিপাড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ও আঞ্চলিক সংঘনায়ক উৎ সাসনা মহাথেরো। প্রধান অতিথি ছিলেন ভদন্ত সুমনাজ্যোতি মহাথেরো।
উদ্ধোধন করেন জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদযাপন পরিষদের কর্যকরী সভাপতি শিক্ষক সুমেধানন্দ মহাস্থবির, করুণানন্দ মহাস্থবির, সাধনানন্দ মহাস্থবির, কার্যকরী সহ-সভাপতি সুনীল কান্তি চাকমা, প্রয়াত মৈত্রীজ্যোতি স্থবিরের নাতী প্রকৌশলী হিরণ্ময় তঞ্চঙ্গ্যা ইমন।
২য় পর্বে দুপুর ২টায় এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘরাজ ভদন্ত প্রিয়দর্শী মহাথেরো।
প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটির জেলা জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) র সভাপতি দীপেন তালুকদার দিপু। বিশেষ অতিথি ছিলেন বেতবুনিয়া ৫নং ওয়াড ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাঙ্গামাটি জেলার সহ-সভাপতি পাঁইছি মং মাংমা, প্রকৌশলী পুলক বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানের উদ্ধোধন করেন জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিষদের সভাপতি ও প্রয়াতার গুরু ভান্তে ভদন্ত সুমঙ্গল মহাস্থবির, করুনানন্দ মহাথেরো, দীপংকর মহাথেরো,গয়ারক্ষিত থেরো, আনন্দবোধি থেরো, ধর্মবংশ মহাস্থবির, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট সংগঠক জে.বি.এস আনন্দবোধি স্থবির।
সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য রাখেন অশোক কুমার চাকমা।আরও বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ করুণাময়ী তঞ্চঙ্গ্যা, সমাজসেবী তাপস বড়ুয়া, প্রকাশনা উপ-পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সুনন্দ মহাস্থবির, ক্ষেমানন্দ মহাস্থবির, আনন্দজ্যোতি স্থবির।
অনুষ্ঠানে পবিত্র ত্রিপিটক থেকে মঙ্গলাচরণ করেন সুমনরক্ষিত মহাস্থবির ও শাসনরক্ষিত ভিক্ষু।
সকাল ও বিকালের অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন দেবজ্যোতি চাকমা উজ্জ্বল। সকাল ও বিকালে ভান্তের স্মরণে সংগীত পরিবেশন করেন সীমা চাকমা, তবলায় বন্দন বড়ুয়া, কি- বোর্ডে স্বপন দাস।
ভান্তেকে নিয়ে আরো একটি সংগীত পরিবেশন করেন যৌথভাবে তেমিয বড়ুযা, সুস্মিতা বড়ুয়া, অর্কিতা বড়ুয়া, বৃষ্টি বড়ুয়া, শান্তা বড়ুযা, রুম্পা বড়ুয়া, এলটি চাকমা।
স্মৃতিচারণে বক্তারা বলেন, তিনি মৃত্যুর পূর্বে দশ দিনব্যাপী বিদর্শন ভাবনা কোর্সের আয়োজন করেন এবং তিনি নিজেই ভাবনায় অংশগ্রহণ করেন। ভাবনা সমাপনী দিনেই তিনি সবাইকে ভালো থাকার কথা বলেন। নিজে বিশ্রামে গেলে সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বারবার মোবাইল ফোন বাজতে শুনে লোকজনে ডাকাডাকি করেন। তখন সকলেই দেখেন তিনি আর এই পৃথিবীতে নেই। এই পূণ্যকর্ম করে বুদ্ধের মত বুদ্ধের অনুসারী হয়ে ভাবনার মাধ্যমে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি খুবই পুণ্যবান ব্যক্তি ও সাদা মনের হাস্যজ্জল মানুষ ছিলেন। তিনি ৮২ বছর বয়সে প্রয়াণ করেন। আমরা সকলে তার পারলৌকিক সদ্গতি ও নির্বাণ সুখ কামনায় পুণ্য দান করছি।
আগের দিন রাত্রে নানা অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে রাত্রে বুদ্ধ কীর্তন, জীবন থেকে নিয়ে নাটক, আলং নৃত্য ও আতশ বাতি দিয়ে দাহকার্য সম্পন্ন করা হয়।