ঘুষে অন্ধ প্রশাসন: প্রতারক আরেফিনের কালো থাবায় ফসলের জমি

ঘুষে অন্ধ প্রশাসন: প্রতারক আরেফিনের কালো থাবায় ফসলের জমি
THAMNAIL BUMI

চটকদার বিজ্ঞাপনেই বিক্রমপুর মডেল টাউনের যত প্রতারণা: সরকারী অনুমোদন ছাড়াই চলছে আবাসন প্রকল্প

মোঃ মোস্তাকিম আহমেদ:
বুকিং দিলেই এসি, ফ্রিজ, মোবাইল,ডিনারসেটের মতো দামী সামগ্রী উপহার, কাঠা প্রতি মাসিক কিস্তি ৩হাজার ৯শ ৬০ টাকায় কর্ণারপ্লট এমন সব লোভনীয় অফারেই দুর্ধর্ষ প্রতারণার ব্যবসা চালাচ্ছে বিক্রমপুর মডেল টাউনের চেয়ারম্যান আরফিন আলী। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের ৯৫-ইব্রাহীম চেম্বারের ৫ম তলায় বিশালাকারের বিলাশবহুল এসিওয়ালা অফিসে বসে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলাধীন চরবিশ্বনাথ মৌজায় শতশত কষকদের অজান্তে তাদের দুই ফসলি কৃষি জমি সহ সরকারী জলাশয়ের জমিতে ৩কাঠা, ৪কাঠা ও ৫কাঠা ইত্যাদি আকারে বিক্রমপুর মডেল টাউন নামীয় প্লটের লে-আউট নকশা বানিয়ে চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার ও রাজধানীর ভিআইপি পয়েন্টে আবাসন মেলা জমিয়ে এককালীন ও মাসিক কিস্তিতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কোম্পানীটি।

কোম্পানীটির অপরিকল্পিকভাবে কৃষি ও সরকারী জলাশয় ভরাটের ফলে পরিবেশে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে এবং কৃশি জমির পরিমান কমে আসছে বলেও কৃষকদের অভিযোগ উঠে এসেছে। ফলে রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, পরিবেশ আইন, কৃষি জমি ও জলাশয় সংরক্ষণ আইন সহ সংশ্লিষ্ট আইনের পুরোপরি লঙ্গণ হচ্ছে। এরুপ চলতে থাকলে ভবিষ্যতে জনজীবন সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসবে বলে স্থানীয়রা মনে করছে।

আবাসন ব্যবসা সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানায়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে একটি হাউজিং ব্যবসার লে-আউট নকশার অনুমোদন নিতে হলে বেসরকারী আবাসিক প্রকল্পের ভুমি উন্নয়ন বিধিমালা-২০০৪ এর ৮ধারামতে কোম্পানীর নামে কমপক্ষে ১০একর জমির মালিকানাসত্ত্ব করতে এবং ৯(২) ধারামতে প্রকল্প এলাকার ৩০ভাগ জমি সম্পূর্ণভাবে অবিক্রয়যোগ্য রেখে প্রকল্পে বসবাসকারীদের প্রয়োজনীয় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ বিভিন্ন ইউটিলিটি সার্ভিসেসের জন্য সংরক্ষিত রেখে প্রকল্পের লে-আউট প্ল্যানে প্রদর্শন করতে হয়। কিন্তু বিক্রমপুর মডেল টাউনের নামে ১ একর জমির মালিকানা খুজে পাওয়া যায়নি। তবে ফেসবুক ইউটিউবের মতো অনলাইন মাধ্যম গুলোতে আমেরিকা ইউরোপ অষ্ট্রেলিয়ার চাইতেও উন্নতমানের শহরের আদলে এই কোম্পানীর বিজ্ঞাপন ভাসঁছে।

বিক্রমপুর মডেল টাউন প্রকল্পটির ৯০ভাগ জমিই কষি জমির উপরে নির্মিত। এসব জমিতে বছরে দুইবার ফসল ফলে। এর লে-আউট প্ল্যানে দেখা যায় প্রকল্পটি অন্তত ৩হাজার একর জমির উপরে নির্মিত। অথচ ঐসব জমির মালিকদের বেশীভাগই জানেনা তাদের জমির উপরে প্লট বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে কোন কোন জমির মালিক স্থানীয় দালালদের খপ্পরে পড়ে অতিলোভে কোম্পানীর সাইনবোর্ড টাঙ্গানোর জন্য ভাড়া দিয়েছেন বলে শোনা গেছে।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, বিক্রমপুর মডেল টাউনের চেয়ারম্যান আরফিন আলী ও তার একাধিক ব্যবসায়িক পার্টনাররা মিলে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার চরবিশ্বনাথ এলাকায় কিছু দুয়েকটি নিজস্ব জমি সাথে কৃষকের কৃষি জমি ভাড়া নিয়ে ঐসব জমিতে কোম্পানির বিশাল সাইজের বেশ কিছু সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেন। রাষ্ট্রীয় কোন অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও এই কোম্পানি রংবেরঙের সাইনবোর্ড স্থাপন করে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কিংবা মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন কারোই কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। আবাসন প্রকল্প করার মতো নিজেদের পর্যাপ্ত জমিও তাদের নেই। কিন্তু বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে ম্যানেজ করে চালানো হচ্ছে কোম্পানীর কার্যক্রম।

স্থানীয় কৃষক আবুল হাসেম বলেন, এখানে আমাদের বাপ-দাদার চৌদ্দ পুরুষের ভিটামাটি, এই কৃষি জমিগুলোই আমাদের জীবন। ফসলের উপরেই আমরা নির্ভরশীল। বিগত কয়েক বছর ধরে এসব জমির উপরে রাক্ষসের নজর পড়েছে। কেউ কেউ বেশী দামে তাদের জমি বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে ভুমিদস্যুরা সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে কৃষি জমি। আবার একটি জমি ভরাটের ফলে পাশের জমিগুলো অনাবাদি হয়ে পড়ছে। চাচা আপনার জমির উপরে বিক্রমপুর মডেল টাউনের প্লট আছে, আর এই প্লটটি আমরা ২০ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি, এমন প্রশ্ন শুনে তেলেবেগুনে জ¦লে উঠে কৃষক মজিদ মিয়া।

এব্যাপারে কোম্পানীর চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা মো: আল আমিন অনেকটা উত্তেজিত অবস্থায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বলেন, কোথায় কি দিয়ে ব্যবসা চালাতে হয়, আমরা ভালোভাবেই জানি। এসব বিষয়ে আপনারা জানতে আসছেন কেন?। আপনারা অমুকের পারমিশন নিয়ে আসছেন।

 

More News...

গৃহবধূ হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে কুয়াকাটায় মানববন্ধন

সিদ্দিক সভাপতি, মিজান সম্পাদক। মহিপুর থানা যুবদলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত