দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় ভূমি জরিপে শ্লথগতি
বিশেষ প্রতিনিধি:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে কয়েকটি রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন তন্মমধ্যে ভূমি ডিজিটালাইজেশন অন্যতম। সম্প্রতি ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রম দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তরে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যাক্তিদের পদায়ন নিশ্চিত করতে সম্প্রতি “ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপে সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পে “ ৪ মার্চ ২০২৫ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ভূমিতে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শেখ মতিয়ার রহমান (যুগ্মসচিব) (৬২৬৭) কে বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মো: আশরাফুল ইসলাম এর স্থলাভিষিক্ত করে জনপ্রশাসন বিভাগ থেকে একটা প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়।
জন-প্রশাসন মন্ত্রণালয় এই প্রজ্ঞাপন জারি করলেও অজ্ঞাত কারণে এখন পর্যন্ত নতুন প্রকল্প পরিচালক দায়িত্ব বুঝে নিতে পারেনি। বর্তমান প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে এ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে রেগুলার সকল পদোন্নতি এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে পুরস্কৃত হন। যার ধারাবাহিকতায় বর্তমান প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট কোন যোগ্যতা না থাকা স্বত্বেও তিনি আবার নিয়োগ প্রাপ্ত হন। বর্তমান প্রকল্পে তখন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ছিলেন তৎকালীন সিনিয়র যুগ্মসচিব পদোন্নতি বঞ্চিত ড. এম এ মান্নান।
ভূমি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পিএইডি ডিগ্রীধারী এই প্রকল্প পরিচালককে অন্যায় ও বৈষম্যমূলকভাবে বদলী করা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন পরবর্তী রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি এডিশনাল সেক্রেটারি হিসেবে পদোন্নতি লাভ করে বর্তমানে তিনি এলপিআরে আছেন। পক্ষান্তরে বর্তমান প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলামের ভূমি বিষয়ে কোন পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকা স্বত্ত্বেও ইকোনমিক ক্যাডার থেকে এডমিন ক্যাডারে পদায়িত হয়েছেন। ১৫ বছরে দুই তিনটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সবখানে ব্যর্থ আশরাফুল ইসলামকে ভূমির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ পেয়েই তিনি তার প্রকল্পের অধীন আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান নিয়োগে চরম দূর্নীতির আশ্রয় নেয়।
তিনি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রয়াত স্বাস্থ্য মন্ত্রী নাসিমুল হকের বড় ছেলে জয় এর প্রতিষ্ঠান বুশরা’ কনসের্টিয়ামকে কাজ পাইয়ে দিতে তৎপর ছিলেন। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে সেই টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে স্থগিত হয়ে যায়। ভূমি বিষয়ে অনভিজ্ঞ ও বিগত স্বৈরাচারী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলামকে পরিবর্তন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারী করলেও অদৃশ্য কারণে তা এখনো কার্যকর হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকারের অগ্রাধিকার এবং স্পর্শকাতর প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে বোদ্ধামহলে সংশয় তৈরী হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মূখ্যসচিব ও ভূমি সচিব বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখতে পারেন।