চাঁন মিয়া মাঝি রিমান্ডে খুশিতে মিষ্টি বিতরণ এলাকাবাসীর
মোঃ মাহাবুব আলম , স্টাফ রিপোর্টার
পিরোজপুর জেলা কৃষক লীগের সভাপতি চাঁন মিয়া মাঝিকে গ্রেফতার করে রিমান্ড মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর খুশিতে তার নিজ এলাকা দুর্গাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ এবংকরে মামলার বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ কার হয়েছে এবং সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে পিরোজপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে, কৃষক লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান চান মিয়া মাঝিকে গ্রেফতার করায় তার নিজ এলাকায় ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ করেছে বিএনপি নেতা-কর্মীসহ এলাকার সাধারণ মানুষজন। দুর্গাপুর ইউনিয়নের চুঙ্গাপাশা, দুর্গাপুর, বাবলা, নগরবাড়ি, কাথুলিয়া, বলি বাবলা, পশ্চিম চুংগাপাশা গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে এ মিষ্টি বিতরণ করেছে চান মিয়া মাঝিদারা ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ।
পিরোজপুর জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. চান মিয়া মাঝিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনা, ঘর ভাঙচুর, লুটপাট, চুরি, গুলিবর্ষন ও বোমা বিস্ফোরণ এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে পিরোজপুর সদর থানায় গত ০৭ এপ্রিল একটি মামলা দায়ের হয়। পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও সাংবাদিক মো. জহিরুল ইসলাম কলিম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় চাঁন মিয়া মাঝি ছাড়াও মুরাদ হোসেন মাঝি, পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মো. নাসির উদ্দিন হাওলাদার, হারুনার রশিদ বাদশা, মো. মাসুদ মাঝি, রশিদ শাহরিয়ার মাঝি, লোকমান হোসেন হাওলাদার, মহিউদ্দিন হাওলাদার ঝন্টু, সামশুদ্দিন কালু, মো. সাখাওয়াত হোসেন মল্লিকসহ অজ্ঞাত ২৫/৩০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট মনোনীত প্রার্থী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে আলহাজ শামীম বিন সাঈদী ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তার পক্ষে নির্বাচন প্রচারণা করতে তৎকালীন জেলা বিএনপি সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম কলিম ঢাকা থেকে পিরোজপুরের দুর্গাপুরের বাড়িতে আসেন। আওয়ামী কৃষক লীগের পিরোজপুর জেলা সভাপতি চান মিয়া মাঝির নেতৃত্বে ২০১৮ মালের ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ২০/২৫ জন অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী বাহিনী পিরোজপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের চাঁন মিয়া মাঝির বাড়ির সামনের ব্রীজের ঢালে তার (মো. জহিরুল ইসলাম কলিম) গাড়ি থামিয়ে গাড়ি ভাংচুর করে এবং গাড়ির মধ্যে থাকা ধানের শীষ প্রতীকের পোষ্টার ও লিফলেট ছিনিয়ে পাশের খালে ফেলে দেয়।এসময় হামলাকারীরা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনার পরদিন ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮নং বিকেল ৫টার দিকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা জেলা কৃষক লীগের সভাপতি চাঁন মিয়া মাঝির নেতৃত্বে ৫০/৬০জন সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা, চাইনিজ কুড়াল, রামদা, হকিস্টিক ও দেশীয় লাঠিসোটা নিয়ে জহিরুল ইসলাম কলিমের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা কলিমের বাড়ির সামনে বন্দুক ও পিস্তল দিয়ে ২০/২৫ রাউন্ড গুলি ও ৮/১০টি বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে। এসময় তারা কলিমের ঘরের প্রধান ফটক দাও দিয়ে কুপিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে ভাংচুর করে এবং স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাট ও চুরি করে নিয়ে যায়। তারা কলিমের বৃদ্ধ মা ও স্ত্রীর কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে এবং কলিমকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। টাকা না দিলে কলিমের ০৯ বছরের শিশু সন্তানকে অপহরণের হুমকি দেয়।
এ ঘটনার পরে জীবন বাঁচাতে কলিম পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তিনি উক্ত ঘটনায় কোন মামলাও করতে পারেন নি।
পিরোজপুর সদর থানার ওসি মো. রবিউল ইসলাম জানান, ২০১৮ইং সালের একটি ঘটনার বিষয়ে থানায় মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে মামলার ০১ (এক) নাম্বার আসামি জেলা কৃষক লীগের সভাপতি চাঁন মিয়া মাঝিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন আইনে মামলা রয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে এবং সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এবং বাকি আসামিদের গ্রেফতার করার চেস্টা চলছে।
উল্লেখ্য, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া মাঝির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সরকারের সময়ে পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও জামাত সহ বিরোধী মতাদর্শের লোকজনকে বিভিন্ন সময় হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানী, হিন্দুদের জমি দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পরপর দুইবার বিনা ভোটে ফ্যাসিবাদি স্টাইলে চেয়ারম্যান হওয়াসহ চাঁন মিয়া মাঝির বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ রয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ আমলে তিনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।
এ বিষয়ে দূগাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আনিছুর রহমান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে চাঁন মাঝি দুর্গাপুর ইউনিয়নকে মাদক ও ত্রাসের রাজত্ব করেন। ইউনিয়নের তার কথাই ছিল শেষ কথা। চান মিয়া মাঝি আমাকেও ফোন করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে এল জি ই ডি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারে উপস্থিতিতে আমাকেও মেরেছে আমিও সে সময় মামলা করতে আরিনি। আমার উপরে হামলা করার খবর সে সময় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকাসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছে। চান মিয়া মাঝি বিএনপি ও জামাতের নেতা-কর্মীরা তার অত্যাচারে কেউ বাড়িতে থাকতে পারতো না। মামলা-মকদ্দমা দিয়ে তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হতো। এমনকি বিএনপি ও জামাত নেতাকর্মীদের বাড়ি থেকেও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিতো।
তিনি আরও জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ইউনিয়নের নগরবাড়ি বাজারের এক হিন্দু পরিবারের ভিটি দখলে নিয়ে ভোগদখল করে চলছেন।