চান্দিনায় এসিল্যান্ডের সম্মুখে সাংবাদিক’কে হেনস্তার অভিযোগ, প্রত্যাহারের দাবি সাংবাদিক মহলের
নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৭ এপ্রিল ২০২৫ইং (বৃহস্পতিবার) বিকেলে কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আল নূর তাম্বুলিয়া এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলনে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় তিনি অবৈধ ড্রেজার মেশিন তার সঙ্গে থাকা ফোর্স দিয়ে ভেঙ্গে ফেলেন কিন্তু কাউকে আটক না করে ছেড়ে দেন এবং কোন অর্থদন্ড বা জরিমানা করেননি।
এমতাবস্থায় দৈনিক স্বাধীন সংবাদ এর কুমিল্লা জেলার ব্যুরো চীফ রিপোর্টার এটিএম মাজহারুল ইসলাম বিকেলে তার স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার পথিমধ্যে দেখতে পান যে, চান্দিনা উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি অভিযান পরিচালনা করছেন। উক্ত অভিযান পরিচালনা দেখে তিনি ওই স্থানে যান। তাম্বুলিয়া এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন ও পাইপ ধ্বংস করার পর গোঁপন সংবাদে জানতে পারেন যে, ভৈষখলায় এলাকায় আরেকটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ মাটি উত্তোলন করছেন। সহকারী কমিশনার ভূমি কে সাংবাদিক পরিচয় প্রদান করলে তিনি সাংবাদিক মাজহারুলকে সাথে নিয়ে পাশের গ্রাম ভৈষখলায় যায়।
পরবর্তীতে উক্ত স্থানে গেলে স্থানীয় লোকজন সাংবাদিক মাজহারুলকে ঘিরে ফেলে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উৎসুক জনতা সাংবাদিক’কে হেনস্থা করতে থাকেন। তখন একজন হেনস্তাকারী বলতে থাকেন আমরা যদি ফোন দেই তাহলে ৫০ জন হুরহুরিয়া চলে আসবে। এমতাবস্থায় নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় সহকারী কমিশনার ভূমি’কে। তিনি বলেন আমি তো উনাকে সাংবাদিক হিসেবে জানি। সাংবাদিক মাজহারুল বলেন আমি ‘‘স্বাধীন সংবাদের কুমিল্লা জেলা ব্যুরো চীফ রিপোর্টার”। একজন হেনস্তাকারী বলেন কত এই রকম স্বাধীন সংবাদ দেখেছি ০৫ তারিখের পর স্বাধীন হয়ে গেছে। এই রকম আরো কত অকথ্য ভাষায় চান্দিনা উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমির সম্মুখে বলতে শুনা যায়। কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা ফেইসবুকে লাইভ করতে থাকে ভুয়া সাংবাদিক বলে। সেই সময় চান্দিনা উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি ফয়সাল আল নূর কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি। যার কারণে সাংবাদিক মাজহারুলের সম্মানহানি হয়।
সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সাংবাদিক মাজহারুলকে এসিল্যান্ডের সম্মুখে ভৈষখলা এলাকার লোকজন এবং কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা ঘিরে ফেলে। তিনি বলেন, ভূলক্রমে তার প্রেস আইডি কার্ডটি বাসায় রেখে এসেছেন। অনেকবার বলার পরও এসিল্যান্ড জনতাকে শান্ত কারেননি। পরবতীতে তার ভাইকে দিয়ে তার প্রেস আইডি কার্ডটি নিয়ে আসলে তাকে ছেড়ে দেন ।
এটাই শেষ নয় চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি’র নিরব ভূমিকা পালন করার পেছনে রয়েছে চাঞ্চলক্যর তথ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, মঞ্জুরুল ইসলাম বরকইট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। সে বরকইট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে চান্দিনা উপজেলা ভূমি অফিসে ডিউটি করে আসছে এবং তার বেতন ভাতা বরকইট ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে হয়। চান্দিনা উপজেলা ভূমি অফিসে কাজ করার সুবাদে মঞ্জুরের গ্রামের বাড়ি ভৈষখলার ড্রেজার ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অবৈধ ড্রেজার বাণিজ্য করার সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে ড্রেজার ব্যবসায়ীদের এবং গত ৬ মাসে ভৈষখলা গ্রামের সিদ্দিক হাজীর মাছের প্রজেক্ট থেকে ড্রেজার ব্যবসায়ী শামীম প্রায় ২০ থেকে ৩০টি কৃষি জমি ড্রেজার দিয়ে মাটি ভরাট করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলনের সিন্ডিকেটের মূলহোতা সিদ্দিক হাজী এবং শামিম। যার নিয়ন্ত্রনে অবৈধ ড্রেজার মেশিন পুরো এলাকায় বিরাজমান। সিদ্দিক হাজীর সাঙ্গপাঙ্গোরাসহ কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা এই অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের কাজ করে আসছে।
শুধু তাই নয় ভূমি অফিসে মঞ্জুরুল ইসলাম চাকুরি করার সুবাধে ভৈষখলা গ্রামে এসিল্যান্ড ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি কাটার কোন অভিযানে যায় না। জানা যায়, এসিল্যান্ডের গাড়ির ড্রাইভার হতে শুরু করে মনজুর ইসলাম এসি ল্যান্ডকে ম্যানেজ করেন।
উল্লেখ্য যে চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)’কে একাধিক সাংবাদিক মুঠোফোনে তথ্য দিতে চাইলেও তিনি তার সরকারি ব্যবহৃত মুঠো ফোনটি রিসিভ করেনি। উক্ত ঘটনায় প্রকাশ্যে একজন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি’র সম্মুখে সাংবাদিক হেনস্তায় সাংবাদিক মহল ফুঁসে ওঠেছে। তারা অবিলম্বে এই ঘটনার সাথে যারা জড়িতদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি সহ চান্দিনা উপজেলায় বর্তমানে দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি)’কে অপসারণ দাবি করছেন।
কুমিল্লা সাংবাদিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই ও সহকারী (ভূমি)’কে অপসারন এবং এই ঘটনার সাথে যারা জড়িতদের আইনের মাধ্যমে এন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তিনি এই দায় কখনো এড়াতে পারেননা। সাংবাদিকমহল এসিল্যান্ডসহ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
উক্ত ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)’কে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। যার কারণে ওনার বক্তব্য নেওয়া যায়নি। (সিরিজ রিপোর্ট ০১)