জেপি নেতা সাইফুলের মহাপ্রতারণা: বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট

জেপি নেতা সাইফুলের মহাপ্রতারণা: বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট

জেপি নেতা সাইফুলের মহাপ্রতারণা: বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট

মোঃ আহসানউল্লাহ হাসানঃ
জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনার ডামি-স্বামী মার্কা জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ এর নারায়নগঞ্জ-১আসনের জামানত বায়োজাপ্ত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী, ২০২৪’র ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান বিরোধী শক্তির অন্যতম দোসর। তিনি রাষ্ট্রীয় অনুমোদন ছাড়াই আবাসন কোম্পানী গড়ে চালিয়ে যাচ্ছেন মহাপ্রতারনা। তিনি দুই দুটি আবাসন কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ১টিতে ১৬হাজার শেয়ারের মালিক, অপরটিতে ৮হাজার। অথচ কোম্পানী দুটিরই নেই কোন সরকারী অনুমোদন। বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট, অন্যের জমির উপর প্লটের লে-আউট ডিজাইন বানিয়ে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন ও নিকুঞ্জের মতো ভিআইপি এলাকায় বিলাশবহুল অফিস বসিয়ে সাধারন জনগণের কাছে মাসিক কিস্তিকে প্লট বুকিং দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, আধুনিক নগরীর সকল সুবিধা নিয়ে একবিংশ শতাব্দীর যুগোপযুগী নগরায়ন গড়ার মহাপরিকল্পনায় ভাবনাহীন সপ্নীল ও নিরাপদ আবাসনের নিশ্চয়তায় প্রকৃতি প্রযুক্তি নিরাপত্তার সমন্বয়ে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বান্ধব, সুপরিসর লেক, সবুজ বনায়ন, ইকোপার্কসহ সুপরিকল্পিত আধুনিক নগরীর লক্ষ্য নিয়ে গড়ে উঠেছে “হোমল্যান্ড পূর্বাচল সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড” ও বসতবাড়ী পূর্বাচল ডেভেলাপমেন্টস লিমিটেড নামক দুটি আবাসন প্রকল্প। কোম্পানীর পরিচিতি লিফলেটে এমন চোখ ধাধানো আশ্বাসে ভরপুর হাজার হাজার একর কৃষি জমির উপর প্লটের লে-আউট ডিজাইনে সবারই চোখ থমকে যাবে। কিন্তু প্লটের ঐসব জমির মালিক আসলেই কারা সেই প্রশ্ন চিরকালই অন্ধকারে পড়ে থাকবে। কোক-সেভেন আপ আর নান-গ্রিল চিবানোর ফাকে ফাকে মিষ্টি মিটি কথায় ডুবে এদের কাছে প্লট বুকিং দেয় মাথা মোটা জনগন, লোভনীয় অফারে পড়ে তারা বুঝতেই চায় না এসব শুভংকরের ফাকিবাজী। আর যখন বুঝতে পারে তখন আর কিছুই করার থাকেনা।

আবাসন কোম্পানীর নামে নির্দিষ্ট পরিমানের জমি থাকলে এবং পরিবেশ সম্মত নাগরিকবান্ধব হলেই প্লট বিক্রয়ের অর্থাৎ কোম্পানীর অনুমোদন দেয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে একটি হাউজিং ব্যবসার লে-আউট নকশার অনুমোদন নিতে হলে বেসরকারী আবাসিক প্রকল্পের ভুমি উন্নয়ন বিধিমালা-২০০৪ এর ৮ধারামতে কোম্পানীর নামে কমপক্ষে ১০একর জমির মালিকানাসত্ত্ব থাকতে হয় এবং ৯(২) ধারামতে প্রকল্প এলাকার ৩০ভাগ জমি সম্পূর্ণভাবে অবিক্রয়যোগ্য রেখে প্রকল্পে বসবাসকারীদের প্রয়োজনীয় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ বিভিন্ন ইউটিলিটি সার্ভিসেসের জন্য সংরক্ষিত রেখে প্রকল্পের লে-আউট প্ল্যানে প্রদর্শন করতে হয়। কিন্তু“হোমল্যান্ড পূর্বাচল সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড” ও বসতবাড়ী পূর্বাচল ডেভেলাপমেন্টস লিমিটেড নামক কোম্পানী দুটির নামে ১একর করে জমির মালিকানাসত্ত্ব খুজে পাওয়া যায়নি। তবে ফেসবুক ইউটিউবের মতো অনলাইন মাধ্যম গুলোতে আমেরিকা ইউরোপ অষ্ট্রেলিয়ার চাইতেও উন্নতমানের শহরের আদলে এই কোম্পানীর বিজ্ঞাপন ভাসঁছে।
কোম্পানী দুটি ৯০ভাগ কষি জমির উপরে গড়ে উঠেছে। এসব জমিতে বছরে দুইবার ফসল ফলে। এর লে-আউট প্ল্যানে দেখা যায় প্রকল্পটি অন্তত ৩হাজার একর জমির উপরে নির্মিত। অথচ ঐসব জমির মালিকদের বেশীভাগই জানেনা তাদের জমির উপরে প্লট বানিয়ে কোন একজন ঢাকায় বসে প্লট বিক্রি করছে। তবে কোন কোন জমির মালিক স্থানীয় দালালদের খপ্পরে পড়ে অতিলোভে এই কোম্পানীর কাছে সাইনবোর্ড টাঙ্গানোর জন্য ভাড়াও দিয়েছেন বলে শোনা গেছে।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, “হোমল্যান্ড পূর্বাচল সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড” ও বসতবাড়ী পূর্বাচল ডেভেলাপমেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও তার একাধিক ব্যবসায়িক পার্টনাররা মিলে নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জ উপজেলায় রাজউকের সু-পরিকল্পিত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের পূর্ব পাশে কাঞ্চন ব্রিজ থেকে ২কিঃমিঃ দূরত্বের মধ্যে ঢাকা সিলেট বাইপাস সড়কের পাশে হোমল্যান্ড পূর্বাচল সিটি গড়ে তুলেছে। এতে ৩, ৫, ১০ কাঠা আকারে প্লটের ধরণ দেখানো সহ ৩৭৮ বিঘা জমির উপর প্রকল্পের এরিয়া প্ল্যান দেখানো হয়েছে। কিছু জমিতে বালু ভরাট করা হয়েছে। পুরো প্রকল্পটিকে ৪টি ব্লকে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ বাইরে শতভাগ ফিটফাট দেখানো হয়েছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানায়, সাইফুল ইসলাম মহাপ্রতারক হলেও নিজের মালিকানাধীন কিছু জমি সাথে অন্যান্য মালিক বা কৃষকের কৃষি জমি ভাড়া নিয়ে এসব জমিতে কোম্পানির বিশাল সাইজের বেশ কিছু সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় কোন অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও এই কোম্পানি রংবেরঙের সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, কৃষি অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিমান ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, নারায়নগঞ্জ জেলা প্রশাসন সহ কারোই কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। আবাসন প্রকল্প করার মতো নিজেদের পর্যাপ্ত জমিও তাদের নেই। কিন্তু বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে ম্যানেজ করে চালানো হচ্ছে কোম্পানীর কার্যক্রম।

প্রকল্পাধীন স্থানীয় জমির মালিক মোসলেম সরকার বলেন, এখানে আমাদের বাপ-দাদার চৌদ্দ পুরুষের ভিটামাটি, এই কৃষি জমিগুলোই আমাদের জীবন। ফসলের উপরেই আমরা নির্ভরশীল। বিগত কয়েক বছর ধরে এসব জমির উপরে রাক্ষসের নজর পড়েছে। কেউ কেউ বেশী দামে তাদের জমি বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে ভুমিদস্যুরা সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে কৃষি জমি। আবার একটি জমি ভরাটের ফলে পাশের জমিগুলো অনাবাদি হয়ে পড়ছে।
চাচা আপনার জমির উপরে হোমল্যান্ড পূর্বাচল সিটির প্লট আছে, আর এই প্লটটি আমরা ২০ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি, এমন প্রশ্ন শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে কৃষক মজিদ মিয়া।

জনমুক্তি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো: আব্দুল্লাহ শেখ ফারহান বলেন, এধরনে কোম্পানী গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই অপরিকল্পিকভাবে কৃষি ও সরকারী জলাশয় ভরাটের ফলে পরিবেশে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। এতে কৃষি জমির পরিমান কমে আসছে। ফলে রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, পরিবেশ আইন, কৃষি জমি ও জলাশয় সংরক্ষণ আইন সহ সংশ্লিষ্ট আইনের পুরোপরি লঙ্গণ হচ্ছে। এরুপ চলতে থাকলে ভবিষ্যতে জনজীবন সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসবে।

এব্যাপারে কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলামের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবেন বলে এড়িয়ে যান। অত:পর তার হোয়াটস অ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন সদুত্তর পাওয়া যানি।