টাঙ্গাইলে ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্য: ঘুষ বানিজ্যে তদন্ত রিপোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক:
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মডার্ণ হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় তাসরিফা (৯) নামের শিশু মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের ওপর দায় চাপিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। তারা প্রতিবেদনে বলেছেন, শিশুটির অবস্থা খারাপ হওয়ার পর পরিবারের লোকজন উপস্থিত থাকা সত্বেও ডাক্তার বা নার্সকে সময়মত জানানো হয়নি। ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যু হলেও তদন্ত কমিটি শিশুর বাবা-মা ও পরিবারের কোন সাক্ষাৎকার তদন্ত কমিটি নেয়নি। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তদন্ত কমিটি ক্লিনিকের পক্ষে রিপোর্ট দিয়েছে বলে শিশুর পরিবার থেকে অভিযোগ করেছেন। অসহায় পরিবারটি সুষ্ঠু তদন্ত এবং ক্লিনিকের মালিকসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।
শিশু মৃত্যুর পরদিন গত ২৬ জুলাই তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কমিটির সদস্যরা হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট (আ্যানেসথেশিয়া) ডা. মোহাম্মদ আলী, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. রাজিব কর্মকার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. লিটন চন্দ সাহা, মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মো. বাবুল আক্তার এবং স্যানেটারি ইন্সফেক্টর ইসরাত জাহানসাত কর্মদিবসে তদন্ত রিপোর্ট জমার নির্দেশ থাকলেও নির্ধারিত সময়ে রিপোর্ট জমা না দিয়ে রহস্য জনক কারণে গত ১১ আগষ্ট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ আগষ্ট) এ বিষয়ে সাংবদিকদের অবহিত করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম।
তাসরিফার বাবা পারভেজ আহমেদ বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। কেউ আমার এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেনি। মির্জাপুর থানা থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল মামলা করার জন্য। বিভিন্ন চাপ এবং ভয়ভীতির কারণে মামলা করতে সাহস পাইনি। আমি অন্য উপজেলার মানুষ। আার শক্তিশালী কোন লোকজন নাই। এছাড়া আমি গরীব মানুষ। টাকা ধার করে মেয়ের অপারেশন করাইতে গেছিলাম। মেয়ের মৃত্যুর বিচার চাইতে গেলে যে টাকা পয়সা খরচ হবে তাও আমার নাই। শুনেছিলাম সরকারি ভাবে তদন্ত কমিটি হয়েছে। আশা ছিল ন্যায় বিচার এবং ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্ত তদন্ত কমিটি নানা ভাবে রিপোর্ট নিয়ে কারসাজি করেছে।
তদন্তে উঠে আসা প্রতিবেদন সম্পর্কে পারভেজ আহমেদকে অবগত করলে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার পর আমার মেয়ের একবারের জন্যও জ্ঞান ফিরেনি। আমরা নার্স ডাকলে তারা বলেন কোন সমস্যা নেই, স্বাভাবিক হয়ে যাবে। অপারেশনের পর এমন হয় বলে জানিয়েছিলেন। তদন্ত কমিটির সভাপতি ও মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ আলীর (অ্যানেস্থেশিয়া) কাছে তদন্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিশুটির পরিবারের মোবাইল নাম্বার না থাকায় ও তাদের পূর্নাঙ্গ ঠিকানা না পাওয়ায় তাঁর পরিবারের কারো বক্তব্য নেয়া যায়নি। শিশুটির অপারেশন করা ডা. এম এম বিল্লাহ দাবি করেছিলেন, অপারেশন সঠিক ভাবেই হয়েছে। এটি অ্যানেস্থেশিয়া জনিত কোন বিষয় হতে পারে।
অ্যানেস্থেশিয়া ডা. সাইফ আব্দুল্লাহ বলেছিলেন, অ্যানেস্থেশিয়া জনিত কোন জটিলতা হলে অপারেশন শেষে শিশুটির জ্ঞান ফিরতোনা। অপারেশন শেষে আমি নিজে ও শিশুটির পরিবারের লোকজন তার সাথে কথা বলেছি। চিকিৎসক ডা. এম এম বিল্লাহ এবং অ্যানেস্থেশিয়া ডা. সাইফ আব্দুল্লাহর পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে প্রোপার গাইডলাইন দেওয়ার কথা বলা হবে। এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদন জেলা সিভিল সার্জন বরাবর পাঠানো হবে। এ বিষয়ে মডার্ণ হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কতৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি। তারা বলেছেন তদন্ত কমিটি হয়েছে। ঘটনার সত্য মিথ্যার তদন্ত রিপোর্ট দেবেন।
উল্লেখ্য যে, শিশু তাসরিফা আক্তারের বাড়ি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের পাচুটিয়া গ্রামে। তার পিতা পারভেজ আহমেদ এবং মাতা পলি বেগমের বড় সন্তান। শিশুটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়াশোনা করতো। গত ২৫ জুলাই শিশুটির টনসিল অপারেশন করানোর জন্য মির্জাপুর মডার্ণ হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি ও অপারেশন করানো হয়। অপারেশন শেষে কয়েক ঘন্টা পর শিশুটির মৃত্যু হয়।