থানা ব্যারাকে পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ

থানা ব্যারাকে পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি: ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার নারী ব্যারাতে কর্মরত এক নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে একই থানার কনস্টেবল সাফিউর রহমানের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ৬ মাস ধরে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্য গত পাঁচ দিন ধরে থানায় অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেও প্রতিকার পাননি। হতাশা ও মানসিক চাপের কারণে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ওসিসহ জেলা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা।

ভুক্তভোগী ওই নারী পুলিশ সদস্য গণমাধ্যমকে জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আশুলিয়া থানা থেকে বদলি হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় যোগ দেন। এরপর পরিচিত হওয়ার কথা বলে সাফিউর তার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন।

গত রমজানের ঈদের পর এক রাতে ব্যারাকে একা থাকাকালে সাফিউর হঠাৎ রুমে ঢুকে তাকে জাপটে ধরেন এবং ধর্ষণ করেন। এসময় তিনি মুখ চেপে ধরে পুরো ঘটনার ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করেন।

কান্নায় ভেঙে পড়লে তিনি মাফ চেয়ে বলেন, ‘মাথা ঠিক ছিল না, যা হয়েছে ভুলে যাও। কাউকে বললে ভিডিও ছড়িয়ে দেবো, তুমিও বাঁচতে পারবে না।’

চাকরি হারানোর ভয়, সামাজিক লজ্জা ও নিরাপত্তাহীনতায় নীরব থাকলেও ওই ভিডিওর ভয় দেখিয়ে সাফিউর দিনের পর দিন থানা ব্যারাকেই তাকে ধর্ষণ করে যান বলে অভিযোগ করেন ওই নারী সদস্য। সর্বশেষ ১৫ আগস্ট রাত ২টা ৩০ মিনিটে আবারও তিনি ধর্ষণের শিকার হন। ওই রাতে ৩টা ৪৫ মিনিটে সাফিউর তার রুম থেকে বের হন। এসময় বিয়ের আশ্বাসও দিয়ে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি।

নারী সদস্য জানান, যখনই তিনি বিয়ের বিষয়ে চাপ দেন বা শারীরিক সম্পর্কের বিরোধিতা করেন, তখনই সাফিউর তাকে মারধর করেন। তার কাছে সেই নির্যাতনের একাধিক ছবিও রয়েছে। একপর্যায়ে তিনি ১৬ আগস্ট থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ইবনে ফরহাদকে বিষয়টি গোপনে জানান, কিন্তু তিনি বিষয়টি ওসি তদন্ত আল-আমিন হোসেনকে জানিয়ে দেন।

ওসি তদন্ত ও অভিযুক্ত সাফিউরের বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় শুরু থেকেই তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এরপর সেকেন্ড অফিসার ইবনে ফরহাদ ও ওসি তদন্ত আল-আমিন হোসেন মিলে তখন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেনকে আমার নামে বিভিন্ন বাজে কথা বলেন।

ওসি তখন বিষয়টি কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলমকে জানান। পরে ১৭ আগস্ট এ বিষয়ে থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করতে গেলেও ওসি মামলা নেননি বলে অভিযোগ করেন এই নারী পুলিশ সদস্য।
তার অভিযোগ, বিষয়টি মীমাংসা করতে তাকে টাকার প্রলোভন দেখানো হয়। তাতেও রাজি না হওয়ায় সোমবার তাকে সিসি করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। একই দিন কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সাফিউরকেও সিসি দিয়ে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। পরে এডিশনাল এসপিকে বিষয়টি জানালে তাকে এসপি অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। তবে সেখানেও বিষয়টির সমাধান হয়নি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত কনস্টেবল সাফিউরের নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ওসি তদন্ত আল-আমিন হোসেন বলেন, ‘ওই নারী কনস্টেবল ১৮ আগস্ট আমাদের কাছে অভিযোগ করার পরই আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করি। প্রাথমিকভাবে তাকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।’

মামলা গ্রহণ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সে আমাদের কাছে কখনও জানায়নি তিনি মামলা করবেন।’

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ মোহাম্মদ আক্তার হোসেন বলেন, তার কাছে ওই নারী পুলিশ সদস্য কোনো অভিযোগ করেননি এবং বিষয়টি এসপি স্যার দেখছেন।

কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। বিষয়টি প্রেমঘটিত কিনা বা কাউকে ফাঁসানো হচ্ছে কিনা সব দেখা হচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। ওই নারী কনস্টেবল অভিযোগ করার পরই আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান জানান, পুরো বিষয়টি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে এবং দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।