কেরানীগঞ্জে আব্বা বাহিনীর পতনের পর কামরুল বাহিনীর তাণ্ডব

কেরানীগঞ্জে আব্বা বাহিনীর পতনের পর কামরুল বাহিনীর তাণ্ডব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ ও পারগেন্ডারিয়া এলাকায় ফের তাণ্ডব চালিয়েছে চাঞ্চল্যকর কামাল হত্যা মামলার পলাতক আসামি ও কুখ্যাত সন্ত্রাসী কামরুল বাহিনী। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় রবিবার রাতভর চলে গুলি বর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ এবং দোকানপাট ভাঙচুর। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে চরম আতঙ্ক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে বিদেশ থেকে ফিরে কামরুল গড়ে তুলেছে একটি নতুন সন্ত্রাসী বাহিনী। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা চালাচ্ছে সে।

চাঞ্চল্যকর কামাল হত্যা মামলার প্রধান পলাতক আসামি কামরুল তার ভাই যুবদল নেতা শামীম, ছোটভাই রনি, ও পুলিশ সোর্স সাইফুল হত্যা মামলায় জামিনে মুক্তি পাওয়া সন্ত্রাসী জানে আলমকে সঙ্গে নিয়ে খেজুরবাগে চাঁদাবাজি ও জমি দখলের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে।

রবিবার সন্ধ্যায় পারগেন্ডারিয়ার এক ড্রেজার ব্যবসায়ী আতিক চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে খেজুরবাগ সাহেব গলির মুখে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে রাত ৯টার দিকে কামরুল বাহিনী পারগেন্ডারিয়া বালুর মাঠে হামলা চালায়। এসময় তারা গুলি ছুঁড়ে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং অসংখ্য দোকানপাট ও অফিস ভাঙচুর করে।

প্রত্যক্ষদর্শী কিশোর ফয়সাল জানান, হামলায় অংশ নেয় কামরুল, তার ভাই রনি, জানে আলম এবং সাতপাখির শামীম। তাদের হাতে ছিল পিস্তল, দেশীয় অস্ত্র ও বোমা।
চা দোকানদার জয়নাল আবেদিন মন্টু বলেন, কাইল্লা সুমন, সাদ্দাম, সুমন, নজু, কামরুল ও রনির নেতৃত্বে একটি বড় গ্রুপ নিরীহ ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালায়।

স্থানীয় বাদশা মিয়া অভিযোগ করেন, হামলার সময় কামরুল বাহিনী স্থানীয় বিএনপির অফিসও ভাঙচুর করে।
রতন নামের এক বাসিন্দা জানান, সাতপাখির সন্ত্রাসীরা পারগেন্ডারিয়ায় চাঁদা আদায়ের জন্য মহড়া চালিয়ে স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখায়।

জানা যায়, নিহত আজিজুল মেম্বারের ছোট ভাই কামাল হত্যার পর কামরুল বিদেশে পালিয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে সে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস দখল করে সেখানে ডেভেলপার অফিস খুলেছে। এখন কেউ তার কাছ থেকে মালামাল না নিলে বা চাঁদা না দিলে নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয়। ঘনবসতিপূর্ণ শুভাঢ্যা ও আশপাশের এলাকাজুড়ে এখন আতঙ্কের নাম কামরুল।

অভিযোগ রয়েছে, পারগেন্ডারিয়ার রানা, মার্বেল, মামুনসহ একাধিক আলোচিত হত্যাকাণ্ডের পেছনেও কামরুল ও তার ভাইদের হাত রয়েছে। সাত্তার, পাপ্পু, জুয়েল, সোহাগ ও নাগিন জাহাঙ্গীর র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হলেও, কামরুল পালিয়ে বিদেশে গিয়ে রক্ষা পায়।

স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন, বহু হত্যাকাণ্ডের আসামি হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে আবার এলাকায় ফিরে এসে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে পারলো কামরুল?

এ বিষয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আক্তার হোসেন জানান, ড্রেজার ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে এবং তদন্ত চলমান।