নারায়ণগঞ্জে উত্তরাধিকারী সুত্রে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর করিমের চাঁদাবাজি
স্টাফ রিপোর্টারঃ
নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া মোড়ের ট্রাফিক বক্সের ইন্সপেক্টর (টিআই) আঃ করিমের বিরুদ্ধে পরিবহন খাতে উত্তরাধিকারী সুত্রে মাসোয়ারা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। বাস, ট্রাক, সিএনজি ও অটোরিক্সা থেকে মাসিক অন্তত ২৫/৩০লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। রাস্তা গাড়ি চলাচল করতে হলে গাড়ির রেজিষ্ট্রিশন, ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র আপডেট থাকতে হয়। আর এসব কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকেন রাস্তা দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট। কিন্তু যেসব গাড়ীর কাগজপত্র আপডেট নেই বা গাড়ীর ফিটনেস নেই অথবা কোন কাগজপত্রই নেই, অথচ সেই গাড়ী গুলো রাস্তায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্টের চোখে সামনে দিয়ে দিব্যি চলাচল করে। কিভাবে সম্ভব?। এমন প্রশ্নের উত্তর জানার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে উত্তরাধিকারী সুত্রে চাঁদা আদায়ের যত তথ্য উপাত্ত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে চাষাড়া মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের মাসোয়ারা আদায় উত্তরাধিকারী সম্পদে পরিনত হয়েছে। চাষাড়া মোড়ের ট্রাফিক বক্সে যখন যেই টিআই দায়িত্বে যোগদান করেন, তখন সেই টিআই এই চাঁদা আদায় করেন। সম্প্রতি এই ট্রাফিক বক্সে যোগদান করেছেন টিআই আব্দুল করিম। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন টিআই গৌরাঙ্গ পাল। তিনি সম্প্রতি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। কিন্তু মাসোয়ারা চাঁদা আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছেন টিআই আব্দুল করিম। আবার টিআই আব্দল করিম অন্যত্র চলে গেলে নতুন যে আসবেন সে এই চাঁদা আদায় করবেন। তবে আব্দুল করিম ঘুরে ফিরে নারায়গঞ্জেই থাকবেন। সুত্র জানায় এই চাঁদার ভাগ-বাটোয়ারা অনেক উপর তলা পর্যন্ত পৌছায়। আগের দিনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল, পুলিশ প্রধান বেনজীররাও এসব চাঁদার ভাগ পেতেন বলে সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। সারাদেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় হচ্ছে এই চাঁদাবাজি। বর্ষাবিপ্লবের পরবর্তী সময়ে এর কোন পরিবর্তন ঘটেনি। তলে তলে সবই হচ্ছে। যার মাশুল গোনছে সাধারন জনগণ।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, নারায়নগঞ্জের চাষাড়া মোড় ঘিরে শতাধিক বাস-ট্রাকের ট্রান্সপোর্ট কোম্পানীর অন্তত হাজার খানেক বাস-ট্রাক রয়েছে। যে গুলো নিয়মিত রাস্তায় চলাচল করে। এছাড়া লাইসেন্স বা কাগজপত্র ছাড়া অন্তত ৭ হাজারের মতো সিএনজি ও অটোরিক্সা চলাচল করে। এসব গাড়ী থেকে গ্রুপে গ্রুপে মাসোয়ারা চাঁদা করেন টিআই আব্দুল করিম ও তার সিন্ডিকেটের লোকজন।
এরমধ্যে বন্ধন পরিবহনের ৪২টি বাসের জন্য মাসিক চাঁদা ১০হাজার টাকা, উৎসব পরিবহন থেকে ১০ হাজার টাকা, নগর পরিবহন মাসিক ৫ হাজার টাকা, সূর্যমুখী পরিবহন ৫ হাজার টাকা, সুপার লাইন পরিবহন ৫ হাজার টাকা, হাবিব পরিবহন ৫ হাজার টাকা, বুড়িগঙ্গা পরিবহন ৫ হাজার টাকা, সাফা পরিবহন ৫ হাজার টাকা, সৈকত পরিবহন ৫ হাজার টাকা, কর্ণফুলী পরিবহন ৫ হাজার টাকা, আহসান পরিবহন ৫ হাজার টাকা, তিশা পরিবহন ৫ হাজার টাকা, সোহাগ পরিবহন ৫ হাজার টাকা, শ্যামলী এন আর পরিবহন ২৫ হাজার টাকা, মামুন পরিবহন ৫ হাজার টাকা, বক্কর ট্রাক ও কভার ভ্যানের ব্যানারে ১০ হাজার টাকা, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কাভার ভ্যান থেকে ৮হাজার টাকা, মেঘনা পরিবহন ১০ হাজার টাকা, নারায়ণগঞ্জের সিএনজি থেকে-আলমের মাধ্যমে প্রায়-৪০ হাজার টাকা, পঞ্চবটি সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে শহীদের মাধ্যমে মাসিক ১০হাজার টাকা, পরিবহন কাউন্টারের লোক হইতে আলমের মাধ্যমে ৪/৫ লাখ টাকা মাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে মাসোহারা আদায় করেন টিআই আব্দুল করিম। এছাড়া তার অধীনে দায়িত্বরত সার্জেন্টদের কাছ থেকে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসোয়ারা আদায় করেন। যেসকল সার্জেন্ট টাকা দিতে অপরাগতা দেখান তাদের নোট দিয়ে বদলি করিয়ে দেন। সার্জেন্ট শফিকুল ইসলাম টাকা না দেওয়ায় তাকে বারবার বদলি করিয়েছেন টিআই গৌরাঙ্গ পাল।
এটিএসআই জাহাঙ্গীর ও নাজমুল কাঞ্চন এলাকার রেকারের দায়িত্বে প্রাপ্ত। তারা মাসিক সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত পর্যন্ত টিআইকে প্রদান করেন। এটিএসআই নান্নু নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকা থেকে মাসিক ২০ হাজার টাকা প্রদান করেন। তার বিশেষ বাহিনীর মাধ্যমে পুলিশ লাইনের সামনে সার্জেন্ট রাজনের নেতৃত্বে টিএসআই দেলোয়ার, কনস্টেবল আতাহার, নুরু, উজ্জল, কাউসার কামরুল সহ আরো কয়েক জন প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার টাকা কালেকশন করেন। প্রতিটি গাড়ি পুলিশ লাইনে আটকের নাম করে উক্ত টাকা গ্রহণ করেন। রেকার থেকে আদায়কৃত টাকা সরকারী ফান্ডে জমা করে না।
এব্যাপারে টিআই আব্দুল করিম এসব তথ্য মিথ্যা দাবী করে এড়িয়ে যান।