মেধা পাচার হয়, পৃষ্ঠপোষকতা হয় না কেনো?
শাহীন মির্জাঃ
হাতের লক্ষী পায়ে ঠেলি, হিরা ফেলে কাঁচ তুলি। যুগ যুগ ধরে আমরা পদার্থকে মূল্যায়ন না করে অপদার্থের পিছে ঘুরি জয় গান গাই তাদেরকেই ফুলের মালা দিয়ে নিজেই নিজেকে অপদার্থ তা প্রকাশ করি। আমাদের মেধাবী, সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীদের বনসাই করে রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা আজও অব্যাহত। সভ্য শক্তিশালী মেধাবী জাতী গঠনের নেতৃত্ব শূণ্য করার জন্য নীল নকশা হিসাবে মেধা পাচার হচ্ছে দীর্ঘকাল থেকে আমাদের রত্ন আমাদের সম্পদ আমরা দেশে রেখে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাই ধরে রাখতে পারি না, এটা আমাদের ব্যর্থতা আমাদের লজ্জা। যারা পৃষ্ঠপোষকতা করবে যাদের হাতে ক্ষমতা তারাই নিজের সন্তানদের বিদেশে পাচার করে উচ্চশিক্ষিত করে দ্বৈত নাগরিকের ব্যবস্থা করে দেয়। খোজ নিয়ে দেখেন কোন নেতা, সচিব, মন্ত্রি সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কারো ছেলে মেয়েই দেশে শিক্ষা গ্রহণ করেন না তাই তাদের দেশীয় শিক্ষা আর মেধাবীদের প্রতি তারা উদাসীন। যে দেশে গুনী জনের সম্মান ইজ্জত কদর করা হয় না সে দেশে গুনীজন জম্মায় না। আমরা অযোগ্যদের বেশী মূল্যায়ন করি তার প্রতিবাদে তৈরি হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলন বাবা মার জমি, গহনা বিক্রি করে ঋণ করে রাত জেগে পড়াশুনা করে যখন ফাষ্ট ক্লাস পাই তখন আমাদের চাকুরি হয় না- চাকুরি হয় যাদের জন্য কোটা সংরক্ষণ করা আছে এই বৈষম্যের বিচ এখনো রয়ে গেছে। অযোগ্য অপদার্থ লোক কোন অফিসারের কানা মেয়ে বিয়ে করলেও সে কোটায় চাকরি পেত। কোটাই ছিল সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য এটা বড় ধরনের দুর্নীতি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে একমাত্র মেধাবী ছাত্ররাই সোচ্চার হতে পারে তাই মেধাকে পাচার ও মেধাকে নিধন করাই যেন অনেকের উদ্দেশ্য। ডঃ মির্জা গালিব যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন ডিপাটমেন্ট থেকে ৯৮% মার্ক নিয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছিল। কিন্তু তার শরীরে ভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতির গন্ধ ছিল বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে শিক্ষক হিসাবে নেয়নি। আজ ডঃ মির্জা গালিব যুক্ত রাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন। আমাদের রত্ন আমরা হাত ছাড়া করেছি যোগ্য লোককে যোগ্য সম্মান দিতে পারি না এটা আমাদের ব্যর্থতা। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ,ডি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন বাংলাদেশের মুসীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর ছেলে শিহাব উদ্দীন। শতকরা ৮৫.২২ নাম্বার পেয়ে সর্বোচ্চ মেধার পরিচয় দেন। এই মেধাবী রত্ন গুলোকে আমরা দেশের কাজে লাগাতে পারিনা কালের স্রোতে এরা ঠিকই বিদেশে এই মেধা গুলো ঠিকই বিদেশে পাচার হয়ে যায়! টাকা পাচারে, স্বর্ণ পাচারে কষ্টে টকসো হয় কিন্তু মেধা পাচারে রাষ্ট্রের কি ক্ষতি হয় তা নিয়ে টকসো হয় না। বিগত সরকারের আমলে সরকারি কর্মকর্তারা সরকারি টাকায় খিচুরি রান্না, পুকুর কাটা, মাছ চাষ প্রশিক্ষকের জন্য বিদেশ যেত। কিন্তু ৫৪ বছরে একবারেও দেখি নাই দেশ উন্নয়নের জন্য দুর্নীতি নিমূল প্রতিরোধ করা জন্য, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ নির্মূল করার জন্য অর্থ পাচার রোধ করতে বিদেশে প্রশিক্ষনে গিয়েছে? বিদ্যুৎ, জ¦ালানিও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা-মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন এদেশের রাজনীতিবিদ আমলা কেউই চায় না দুর্নীতি বন্ধ হোক। আসলে মূল কর্তারাই চায় মেধাবী সৎ লোকেরা দেশ থেকে পাচার হউক আর অসৎ দুনীতিবাজরাই অযোগ্য অপাদর্থরাই এ দেশে থাকুন আফ্রিকার মাগুর মাছের মত বসবাস করুক। আমাদের দেশে ড্রাইভার আবেদ আলীর জন্ম হয়, আবার জিন বিজ্ঞানী ডঃ আবেদ চৌধুরীর ও জন্ম হয়। কিন্তু আমাদের দুভাগ্য ড্রাইভার আবেদ আলীর কদর বেশি যেনো জামাই আদর, আর অর্থবৃত্ত অনেক বেশী কারণ তিনি বিসিএস প্রশ্ন বিক্রেতা ছিলেন, প্রশ্ন বিক্রি করে এদেশেই বুক ফুলিয়ে বসবাস করে সমাজে তাকে ক্ষমতা বান ও দান বীর হিসাবেই গ্রামের মানুষ চিনে। অন্যদিকে জিন বিজ্ঞানী মৌলভী বাজারে জন্ম হলেও এই রত্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী যিনি পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র জিন বিজ্ঞানী এক ধান গাছ থেকে বছরে পাঁচবার ফলন দেয় পঞ্চব্রিহি ধান। আমরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই রত্নকে দেশে রাখতে পারিনি যিনি আমাদের দেশের অহংকার দেশকে বিশ্বের কাছে নতুন ভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন জিন বিজ্ঞানী ডঃ আবেদ চৌধুরী। ধান গবেষনায় ফসল হিসাবে পঞ্চব্রিহি ধান বোরোজাতের এক নতুন ধান গাছ উদ্ভোবন করে বিশ্বে চমক সৃষ্টি করেছেন ডঃ আবেদ চৌধুরী। দেশের পরিবেশটাকে নোংরা করার জন্য ড্রাইভার আবেদ আলীরা দেশে রাজপ্রসাদ করে বসবাস করে আর ডঃ আবেদ চৌধুরীরা নিরবে নিভৃতে নিরব ফুল বৃক্ষে বিদেশের মাটিতে বসবাস করে বিশ্বে দেশের সুনাম ছড়ায়। গুণীজন মেধাবী রত্ন এদেশে জম্মায় কিন্তু জম্মালেও একসময় রাহুরদশার কবলে পড়ে ভাটায় চলে যায় বিদেশের মাটিতে। চট্টগ্রামের মেয়ে মুমতাহিনা মীম, যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ টি বিশ্ববিদ্যালয় ৩৬ কোটি টাকার বৃত্তির অফার পেলেন ভাবতে পারা যায় কতটা মেধাবী হলে এটা সম্ভব অথচ এই মেধাবী মেযেকে আমরা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারাবো আর তার মেধা দিয়ে বিদেশে মাটিকে উজ্জল করে তুলবে। আর আমরা দুর্নীতির ময়লার ভাগাড় নিয়েই বসবাস করবো। মেধাবীরা এদেশে তাদের যোগ্যতার মূল্য পায় না, সম্মান পায় না, জীবনের নিরাপত্তা পায় না- গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পায় না, তখন এই মেধাবী রত্নরা ভিনদেশের হাত ছানিতে প্রবাসী হয়ে যায় । যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এম, এ পাশ স্কুল শিক্ষকের স্কুলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হয় ৫ম শ্রেণী পাস তাকে এম, এ পাস শিক্ষক স্যার বলতে হয়। এই ক্ষোপ দুঃখ বেদনায় এদেশে মেধাবী জম্মায় না। যে দেশে বাজারের, মাজারের নর্তকী গানওয়ালী হয় সংসদ সদস্য যেটা রাষ্ট্রের প্রথম স্তম্ভ যেখানে আইন পাশ হয়। এই সদস্য ঐ আইনের কি বোঝে কি ব্যাখ্যা দিতে পারবে সংবিধানের কি বোঝে অথচ তাকে ওসি, ডিসি, কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার বলতে হয় এ নীতিতে কিভাবে মেধাবী সৃষ্টি হবে? কি ভাবে ইজ্জত নিয়ে মেধাবী যোগ্যরা এ দেশে থাকবে।’’ ফ্লাইট এক্সপাট ৩০০ কোটি টাকা হলি ষ্টীক ২০০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে এই সব কিটপতঙ্গ প্রতারকরা এদেশে ঠিকই দাম্ভিকতা ভাব নিয়ে প্রশাসন ম্যানেজ করে চলা ফেরা করে। এ জমি এখন প্রতারক আর অযোগ্যদের অভয়আরন্য হয়ে গেছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী রত্ম সভ্য ছাত্র ছাত্রীরা নিরব নিথর থাকে বিবেকহীন পাষন্ড ও সন্ত্রাসীদের ভয়ে কিছু বলে না। সারাক্ষণ ইয়াসিন সূরা দোয়া ইউনুস পড়ে কখন নিরাপদে পাস করে বের হবো এবং বিদেশে পাড়ি জমাবে ও নিরাপদে জীবন যাপন করবো ও শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবো। এদেশে যত মেধাবীই ইউক উদ্ভাবক হইক কেউ বাহ বাহ প্রশংসায় ভাসাবে না । আমরা দেখি নারাগঞ্জের জাকির হোসেন জেল গেট থেকে ফুলের মালা পায়। মাগুরার আবু তাহের সবুজকে জেল গেট থেকে ফুলের মালা পায় কিন্তু ২০২২ সালে বিশ্বের ১১৭ টি দেশকে পেছনে ফেলে অনুধ্ব ১৫ বছরের গ্রুপের বিশ্ব কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পক্ষে হাফেজ আবু রাহাত গৌরব অর্জন করেন। তাকে নিয়ে আমাদের কোন রাষ্ট্রীয় সম্মাননার আয়োজন নেই। ভবিষ্যৎ প্রজম্ম মেধাবী হওয়ার উৎসাহ অনুপ্রেরনার কোন আয়োজন নাই। মিডিয়ায় কোন শীর্ষ নিউজ হয় না। বড় কোন প্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠাপোষকতার হাত বাড়ায় না কিভাবে এদেশে মেধাবী গুণীজনের জম্ম হবে? অথচ তাপসের মেয়ের জম্মদিন সানি লিওন আসে অনেক অখ্যাত, অপদার্থ নিলজ্জ কথিত গুণীজনেরা সানি লিউনের সাথে ছবি সেলফি উঠায়ে নিজেকে ধন্য মনে করেছে। সম্ভাবনাময় উজ্জল মেধাবী নক্ষত্ররা যখন এদেশে মূল্যায়িত হয় না তখন মেধাবীর পরিবারও মেধাবী নিজেই দেশ ত্যাগ করতে মঙ্গল মনে করে এ সুযোগটা বিদেশীরা কাজে লাগিয়ে নিজের দেশের উন্নয়ন করে। চাকুরি ক্ষেত্রে মেধা থাকলে ও অর্থের ঘুষ লেন দেনের জন্য মানষিক ভাবে নির্যাতিত হয়ও দুর্নীতির বীজ এখান থেকেই শুরু হয়। স্কুল কলেজ মাদ্রাসার কমিটিতে অযোগ্য অর্ধশিক্ষিতরা মেধাবী যোগ্য শিক্ষকদের আঙ্গুলের ইশারায় চড়কির মত ঘুড়ায়। এমন অনেক শিক্ষক দেখেছি বাংলায় এম,এ করেছে পড়ায় ইসলামের ইতিহাস, ভূগোলে এম,এ করেছে পড়ায় ইংলিশ, ইংলিশে এম, এ করেছে পড়ায় বাংলায় এ যেন মেধাকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হচ্ছে। অযোগ্য অর্থব আর নিলজ্জদের হাতে চলে গেছে সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব । এদেশে কি মেধাবী সন্তান জম্মহয় অনেকে ভাবতে ও পারবেন না ” এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স বিশ্বের ৩৩ হাজার ৫১১ জন বিজ্ঞানী ইনডেক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং যাকিং ২০২৫ প্রকাশ করে। এই তালিকায় ৭ এ স্থান দখল করে কিন্তু এশিয়ার মধ্যে ১ম স্থান দখল করে মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী বংশোউদ্ভুত অধ্যাপক সাইদুর, আগুন, বাতাশ, পানি, মেধা এগুলো বনসাই বানিয়ে রাখা যায় না সুযোগ পেলে আপন রূপ প্রকাশ করবেই। হার্ভাট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ছেলে বা কম বয়োসি ৯ বছরের সুবর্ণ আইজ্যাক বারি পদার্থ বিজ্ঞানী এই পদার্থ বিজ্ঞানী বাংলাদেশী বংশ উদ্ভুত প্রবাসী ছেলে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই রত্ম ভান্ডারকে আমরা রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিনত করতে পারি না । যাদের নিয়ে আমরা গর্ভ করতে পারি দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারি যাদের আমরা নতুন প্রজম্ম আদর্শ হিসাবে মানতে পারি তারা কেউ এ দেশে স্থায়ী ভাবে থাকতে পারে না। আমরা ধরে রাখতে পারলাম না আন্তজাতীক ইসলামিক ইসকলার মাওলানা দেলোয়ার হোসেন স্ঈাদিকে। মিজানুর রহমান আজাহারী যাকে বিগত সরকার সত্যি কথা বলার অপরাধে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। চাঁদপুরের ছেলে আশিক চৌধুরী চট্রগ্রামের ছেলে ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস এরা দেশের জন্য ভিন্নধারার স্বপ্ন নিয়ে উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করার স্বপ্নে কাজ করতে চাইলেও অধিকাংশ স¦ার্থানেষী মহল তাতে বাধাগ্রন্থ করে স্বপ্ন অংকুরে বিনষ্ট করতে চাচ্ছে।দুভাগ্য আর অযোগ্যদের মাঝে আমাদের বসবাস। ফল গাছের প্রথম ভালো ফল নিজে না খেয়ে, বাবা মাকে না খাইয়ে মানত করি হুজুরকে, পীরকে খাওয়াবো তেমনি মেধাবী সন্তানগুলোও নিজের ভূমিতে আলো না জেলে বিদেশী পীর হুজুরের কাছে চলে যায়। ওরা আর দেশের কাজে ফিরে আসেনা। মেধা পাচারের এ স্রোত থামছেই না সমাজের অর্থব নেতা গুলো দেখতে মানুষের মত হলে ও অন্তরটা মাকাল ফল। মেধাবী যোগ্য বিবেকবানদের এ দেশে কেউ পৃষ্ঠ পোষকতা করেনা। কারণ ওরা সিঙ্গারা আর ২০০ টাকার জন্য অযোগ্য দুর্নীতিবাজ নেতার পিছনে মিছিল করবেনা । দেশের কত কিছু পাচার হয় কিন্তু দুর্নীতি ও অনিয়ম যদি পাচার হত তা হলে সমাজ দুষন মুক্ত হতো দেশের রত্নগুলো দেশে থাকতো দেশ পেতো উন্নয়নে উন্নত বিশ্বেরছোয়া ও প্রাণ। তাই বার বার প্রশ্ন জাগে মেধা পাচার হয় এদেশ থেকে দুর্নীতি কেনো চিরতরে পাচার হয় না? মেধা পাচার হয় কিন্তু সরকারী, বেসরকারী ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা হয় না কেনো?
লেখকঃ সাংবাদিক, কলামিষ্ট, নাট্যকার